দেশে দেশে ‘অমৃতবারি’র লোককাহিনির সীমাসংখ্যা নেই। এই পানিতে ক্ষত আরোগ্য হয়, মৃত জীবন পায়। এতে ভীরুর ভয় দূর হয়, নির্ভীকের সাহস বাড়ে শত গুণ। নেহাৎ কোনো দুর্ঘটনায় পানির ওপর এমন মোহিনী গুণাবলী আরোপিত হয়নি। পৃথিবীতে বাঁচা, চারদিকের সবুজ বনানী আর পুষ্পিত মাঠ, নৌকাবিহার বা গ্রীষ্মের বৃষ্টিতে কাদা ছড়িয়ে ছোটাছুটি, শীতের স্কেটিং বা স্কি-দৌড়—সব পানিরই বদৌলতে।
কিংবা একটু শুদ্ধ করে বললে—এসবই সম্ভব হচ্ছে পানির অণুর পারস্পরিক আকর্ষণ ও বন্ধন সৃষ্টির ক্ষমতায়। আমাদের গ্রহে প্রাণ উদ্ভবের এটি অন্যতম শর্তও বৈকি। পৃথিবীর ইতিহাস তো পানিরই ইতিহাস। অতীতে পানি আমাদের গ্রহটির রূপান্তর ঘটিয়েছে, ঘটাচ্ছে এখনও।
পানি পৃথিবীর মহত্তম রাসায়নিক। তাকে এড়িয়ে কোনো প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াই সঙ্ঘটিত হয় না—হোক তা নতুন শিলাগঠন, কোনো নতুন খনিজ বা উদ্ভিদ কিংবা প্রাণিদেহের অতি জটিল কোনো জৈবরাসায়নিক বিক্রিয়া।
পরীক্ষাগারে রাসায়নিকগুলো পানি ছাড়া একেবারেই নাচার। পদার্থের ধর্ম পরীক্ষা, তাদের রূপান্তর ও নতুন যৌগ তৈরি পানি ছাড়া দৈবাৎ সম্ভব। এ ছাড়াও পানি অন্যতম শ্রেষ্ঠ দ্রাবক। বিক্রিয়ায় লিপ্ত করার আগে অনেক পদার্থকেই গলিয়ে ফেলা প্রয়োজন হয়।
পদার্থ দ্রবীভূত হলে কী ঘটে? পদার্থের প্রত্যন্ত অণু ও পরমাণুর মধ্যবর্তী সক্রিয় শক্তিগুলোর তীব্রতা পানিতে বহু শত গুণ হ্রাস পায়। ফলত, এগুলো প্রত্যন্ত ভাগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পানিতে মিশে যায়। চায়ের গ্লাসে চিনির টুকরো অণুরাশিতে বিভক্ত হয়। খাবার লবণ পানিতে পড়লে আহিত কণা, সোডিয়াম ও ক্লোরাইড আয়নে পৃথকীভূত হয়। নিজের উদ্ভট গড়নের জন্য পানির অণু গলিত বস্তুর পরমাণু ও অণু আকর্ষণের বিশেষ ক্ষমতাধারী। এ ক্ষেত্রে অন্যান্য দ্রাবক পানির চেয়ে বহুল নিকৃষ্টতর।
পৃথিবীতে এমন কোনো পাথর নেই, যা পানির বিধ্বংসিতা সইতে পারে। ধীরে হলেও গ্র্যানাইটও নিশ্চিতভাবেই আত্মসমর্পণ করে পানির সামনে। পানি তার গলানো পদার্থগুলো সাগর-মহাসাগরে বয়ে নিয়ে চলে। আর তাই এই বিশাল জলরাশি লবণাক্ত; অথচ কোটি কোটি বছর আগে পানি ছিল মিষ্টি, আলোনা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।