সৌরজগতে জীবন ধারণের উপযোগী একমাত্র গ্রহ পৃথিবী। অন্তত এখন পর্যন্ত আমরা মহাকাশ সম্পর্কে যা জানি, তাতে এ কথা বলা যায়। আজকে আমরা কল্পনা করার চেষ্টা করব, সৌরজগতে আরেকটি বাসযোগ্য গ্রহ থাকলে কেমন হতো। কী হতো গ্রহটা কেপলার টুটুবি হলে? আর গ্রহটার অবস্থান সৌরজগতের বাসযোগ্য অঞ্চলে হলেই-বা কী হতো? কীভাবে সেখানে যেতাম আমরা? সেখানে কি প্রাণের সন্ধান পেতাম? মহাজাগতিক এক প্রতিবেশি পেলে বিষয়টা আসলে কী দাঁড়াত? এসব প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করব এ লেখায়।
পৃথিবী থেকে প্রায় ৬৩৫ আলোকবর্ষ দূরের গ্রহ কেপলার-২২বি। মুহম্মদ জাফর ইকবালের একটি বিজ্ঞান কল্পকাহিনিও আছে এর নামে—কেপলার টুটুবি। এর বিশেষত্ব বলতে, সূর্যের মতো এক নক্ষত্রের বাসযোগ্য অঞ্চলে খুঁজে পাওয়া প্রথম এক্সোপ্ল্যানেট এটি। হয়তো বুঝতে পারছেন, পৃথিবীর সঙ্গে এর মিল নানাদিক থেকে। পৃথিবীর মতোই গ্রহটির পৃষ্ঠে তরল পানি পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। যদিও গ্রহটির গঠন পাথুরে, গ্যাসীয় নাকি তরল—তা এখনও আমাদের অজানা। তবে গ্রহটি যে অনেক বড়, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পৃথিবীর তুলনায় আকারে প্রায় ২.৫ গুণ বড়, আর ভর পৃথিবীর প্রায় ৯.১ গুণ!
কেপলার-২২বি তার নক্ষত্রকে বেশ কাছ থেকে প্রদক্ষিণ করে। নিজ নক্ষত্র থেকে গ্রহটির গড় দূরত্ব প্রায় সাড়ে ১২ কোটি কিলোমিটার। সৌরজগতের সঙ্গে তুলনা করলে পৃথিবী ও শুক্র গ্রহের মাঝামাঝি জায়গায় হতো কেপলার টুটুবির অবস্থান। রাতের আকাশে পৃথিবী থেকে দেখা যেত অনিন্দ্য সুন্দর দৃশ্য। পূর্ণ চাঁদের চেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি বড় দেখাত গ্রহটি।
আমাদের সূর্য কিছুটা বেশি উষ্ণ হতো গ্রহটির জন্য। এর বর্তমান নক্ষত্রের তাপমাত্রা সূর্যের চেয়ে খানিকটা কম। সূর্যের অতিরিক্ত তাপের কারণে এখানকার বায়ুমণ্ডল এত উষ্ণ হতো যে সেখানে জীবের বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে যেত।
তবে কেপলার টুটুবিকে যে এই কক্ষপথেই থাকতে হবে, তা নয়। কাল্পনিক এই দৃশ্যপটে আমরা চাইলেই এর কক্ষপথ বদলে দিতে পারি। পৃথিবী যেমন সূর্য থেকে সঠিক দুরত্বে আছে। এই গ্রহটিতে বিরাজ করছে জীবনধারণের উপযোগী তাপমাত্রা। পৃথিবীর কক্ষপথে কেপলার-২২বির অবস্থান হলে এটির তাপমাত্রাও হতো পৃথিবীর মতো। ঝামেলা হলো, পৃথিবীর সঙ্গে গ্রহটি কক্ষপথ শেয়ার করতে চাইলে নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় থাকতে হতো। এ জায়গাগুলোর নাম ‘ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্ট’। পৃথিবী আর সূর্যের মহাকর্ষের মাঝে, পৃথিবীর কক্ষপথের ওপরে এ জায়গাগুলো স্থিতিশীল। সূর্য বা পৃথিবীর মহাকর্ষ বল ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্টে একে অন্যকে বাতিল করে দেয়। তাই গ্রহগুলো বাড়তি কোনো মোট আকর্ষণ অনুভব করে না এ স্থানগুলোতে। স্থিতিশীল কক্ষপথে থাকতে পারে।
এমন একটি ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্টের অবস্থান পৃথিবীর কক্ষপথে, পৃথিবীর ঠিক উল্টোপাশে। একে ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্ট ‘এল৩’ বলা হয়। অর্থাৎ পৃথিবীর মতোই এই এল৩ও ঘুরতে থাকে সূর্যকে ঘিরে, এবং এটি সবসময় অবস্থান করে পৃথিবীর ঠিক বিপরীত বিন্দুতে। এখানে কেপলার টুটুবি থাকলে মাঝে থাকত সূর্য। সেক্ষেত্রে হয়তো কখনোই আমরা গ্রহটিকে দেখতে পেতাম না। তার চেয়েও বড় কথা, গ্রহটির এ অবস্থানকেও পুরোপুরি স্থিতিশীল বলা যায় না। এখান থেকে কক্ষচ্যুত হয়ে পৃথিবীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকেই যেত।
এমনটা ঘটলে কী হতো, তা তো বুঝতেই পারছেন। ভবলীলা সাঙ্গ হতো দুই গ্রহেরই। এর চেয়ে গ্রহটি এল৪ বা এল৫ ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্টে থাকলে সুবিধা হতো বেশি। এল৪ ও এল৫ পৃথিবী থেকে সূর্যের সংযোগ রেখার সঙ্গে ৬০ ডিগ্রি কোণে অবস্থিত। এ দুটি বিন্দু বাকি তিনটির চেয়ে বেশি স্থিতিশীল। সেজন্য বর্তমানে জেমস ওয়েব নভোদুরবিন অবস্থান করছে এল২-তে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।