পূর্ণগ্রহণের সময় চাঁদ সূর্যকে ঢেকে দেয়, তার ছায়া পৃথিবীর বুকে ভ্রমণ করে প্রচণ্ড গতি নিয়ে। সেই ছায়ার প্রতীক্ষায় বসে থাকা এক অপূর্ব অনুভব। তেমনই গ্রহণের সময় সূর্যের হীরক দ্যুতি, প্রমিনেন্স ও করোনা, দিনের আলোয় শুক্র গ্রহের আবির্ভাব, বাতাসের শীতলতা—সবই এক বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা। মানুষের সঙ্গে আমাদের সৌরজগতের মেলবন্ধন ঘটাতে পূর্ণ সূর্যগ্রহণের সঙ্গে অন্য কোনো কিছুর তুলনা চলে না। যাঁদের সেটা দেখার অভিজ্ঞতা আছে, তাঁরা জানেন এটা কী রকম আবেগপূর্ণ ব্যাপার।
২০১৭ সালের ১৯ আগস্ট আমি যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া স্টেটে ছিলাম। আমার পরিকল্পনা ছিল আইওয়া থেকে দক্ষিণে মিজৌরি কিংবা পশ্চিমে নেব্রাস্কা স্টেটে ছয়-সাত ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে গিয়ে পূর্ণগ্রহণ দেখার। কিন্তু ১৯ তারিখ গভীর রাতে আবহাওয়ার খবরে দেখলাম মিজৌরি ও নেব্রাস্কার আকাশ ২১ তারিখ মেঘাচ্ছন্ন থাকার সম্ভাবনা।
তখন সিদ্ধান্ত নিলাম নেব্রাস্কারও পশ্চিমে ওয়াইওমিং স্টেটে যাওয়ার। আমরা যেখানে ছিলাম, সেখান থেকে ওয়াইওমিং প্রায় ১ হাজার ৩৫০ কিলোমিটার দূরে। ২০ তারিখ সারা দিন গাড়ি চালিয়ে সাউথ ডাকোটার র্যাপিড সিটিতে পৌঁছালাম। চার-পাঁচ ঘণ্টা ঘুমিয়ে আবার ভোররাত সাড়ে তিনটায় রওনা দিয়ে পরদিন সকাল আটটা নাগাদ ওয়াইওমিংয়ের ডগলাস নামের একটা শহরে পৌঁছালাম।
পথে দেখলাম লোকজন রাস্তার ধারেই তাদের গাড়ি পার্ক করে ক্যামেরা ইত্যাদি বের করে গ্রহণ দেখার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমাদের ভাগ্য ভালো যে ডগলাস শহরে একটা বড় মাঠে গাড়ি পার্ক করে গ্রহণ দেখার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেখানে ক্যামেরা ইত্যাদি বসানোর জন্য যথেষ্ট জায়গা ছিল।
আমার সঙ্গে দুটো ক্যামেরা ছিল। প্রথমটি হলো Canon 6D। এই ক্যামেরার সঙ্গে যে লেন্সটা ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা ১৩৫ মিমি ফোকাল দূরত্বের Rokinkon লেন্স। এটি শুধু পূর্ণগ্রহণের জন্য ব্যবহার করা হবে বলে প্রস্তুত করা হয়েছিল। সূর্যের করোনার ছবিটা যাতে আসে, সে জন্য কম ফোকাল দূরত্বের লেন্স ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিই। ফোকাস দূরত্ব ঠিক করতে আগেই রাতের তারাদের ছবি তুলে যে সেটিংয়ে তারাদের ছবি সবচেয়ে স্পষ্ট হয়, ক্যামেরা সেটিং ঠিক করা হয়েছিল। এ ছাড়া ISO 200 ও অ্যাপেরচার f/5.6 ঠিক করে রাখা হয়।
গ্রহণ শুরুর সময় থেকে বিভিন্ন সময়ের এক্সপোজারও ব্যবহার করা হয়, যেমন ১/১০০০, ১/২৫০, ১/৬০, ১ সেকেন্ড ইত্যাদি। সূর্যের কাছের করোনা ও প্রমিনেন্সকে ধরার জন্য অল্প সময়ের এক্সপোজার ও দূরের করোনাকে ধারণ করার জন্য বেশি সময়ের এক্সপোজার দরকার। এই ক্যামেরার সঙ্গে একটা রিমোট নিয়ন্ত্রণ লাগানো ছিল, যাতে দূর থেকে শাটার নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ফলে শাটার টেপার ঝাঁকুনি থেকে ক্যামেরাকে মুক্ত রাখা যায়।
অন্য ক্যামেরাটি ছিল একটি Nikon P900। এটির লেন্সকে বিভিন্ন ফোকাল দূরত্বে পরিবর্তন করা যায়, মোটামুটি ২৫০ মিমি ফোকাল দূরত্ব ঠিক রেখে এই ক্যামেরাটা আংশিক গ্রহণ রেকর্ড করতে ব্যবহার করা হয়েছিল। এই ক্যামেরার ওপর একটা কালো পলিমারের বিশেষ সৌরীয় ফিল্টার ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া আমাদের ছিল ফিল্টারসহ চশমা ও বাইনোকুলার।
একটা কথা ঠিক যে সূর্যগ্রহণের জন্য যতই প্রস্তুতি থাক না, পূর্ণগ্রহণের সময়টা এত দ্রুত যায় যে মনে হয়, মাত্র কয়েক সেকেন্ড ছিল তার স্থায়িত্ব। এবারও এই অভিজ্ঞতার অন্যথা হয়নি। অন্যদিকে গ্রহণ সময়কার কোনো ছবিই চাক্ষুষ দেখার অভিজ্ঞতাকে পুরোপুরি তুলে ধরতে পারে না। যেমন ধরুন, গ্রহণের সময় আকাশের রং। দিগন্তজুড়ে যে সন্ধ্যাকালীন লাল আলো থাকবে, সেটা আমরা জানি। কারণ, দিগন্ত চাঁদের ছায়ার বাইরে থাকে, কাজেই সেখানে সূর্যের আলো পৌঁছায়। কিন্তু দিগন্ত ছাড়াও ছায়ার বাইরে ওপরের বায়ুমণ্ডলে সূর্যের আলো বিচ্ছুরিত হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।