ধর্ম ডেস্ক : কালামুল্লাহ বা আল্লাহর কালাম মুখস্থ করা এটা কোনো সাধারণ শিক্ষা নয়। এটা হচ্ছে একজন মুসলমানের জন্য মহামূল্যবান সম্পদ। জান্নাতে শ্রেষ্ঠত্ব লাভের জন্য সব মুসলমানের উচিত সম্পূর্ণ কুরআন অথবা অংশবিশেষ হেফজ করা। এজন্য বয়স কোনো বাঁধা মনে করা যাবে না।
জীবনের শুরুর দিকে যেমন হেফজ করা যায়, তেমনি জীবনের শেষবেলা এসেও হাফেজ হওয়া যায়। হাফেজ হওয়া আসলে ইচ্ছার ব্যাপার। আপনি নিয়ত করলেই আল্লাহ সহজ করে দেবেন। কেননা, কুরআন সংরক্ষণের কারণেই দুনিয়াতে অসংখ্য হাফেজ প্রয়োজন। তাই যিনি মন থেকে হাফেজ হতে চাবেন, আল্লাহ অল্প সময়ে তাকে হাফেজ হিসাবে কবুল করে নেবেন। প্রখ্যাত তাবেয়ি সুফিয়ান ইবনে ওয়াইনা (রা.) বলেন, ‘ইহুদি-নাসারাদের ওপর তাওরাত ও ইনজিল হেফাজতের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। যখন তারা তাদের কর্তব্য পালনে অবহেলা করে, তখন এ গ্রন্থ দুটি বিকৃত ও পরিবর্তিত হয়ে বিনষ্ট হয়ে যায়। অন্যদিকে কুরআন সম্পর্কে সূরা হিজরের ৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এ কুরআন আমি নাজিল করেছি, আমিই একে সংরক্ষণ করব।’ সুতরাং এটির কখনো নষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই’ (তাফসিরে কুরতুবি।)
কুরআন নাজিলের সময় থেকে আজ পর্যন্ত এর একটি হরফ এমনকি একটি নুকতা পর্যন্ত পরিবর্তন-পরিবর্ধন হয়নি। আল্লাহর হেফাজতের কারণেই এমনটি হয়েছে। কুরআন ও হাদিসে কুরআন হেফজ করার অনেক ফজিলত রয়েছে। রাসূলের ঘোষণা অনুযায়ী, কুরআনের হাফেজ আল্লাহর পরিবারের সদস্য ও বিশেষ ব্যক্তি। হজরত আনাস (রা.) বলেন, নবিজি (সা.) বলেছেন, ‘কিছু মানুষ আছে যারা আল্লাহর পরিবারভুক্ত। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, তারা কারা ইয়া রাসূলাল্লাহ? তিনি বললেন, যারা কুরআনের রঙে রঙিন তারাই আল্লাহর পরিজন ও বিশেষ ঘনিষ্ঠ ব্যাক্তি।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নম্বর ১২২৭৯।)
হাফেজ শুধু নিজেই লাভবান হবেন তা নয় বরং তার মাধ্যমে পরিবার-বন্ধুবান্ধব অন্য সবাই উপকৃত হবে। একজন হাফেজ দশজন জাহান্নামিকে জান্নাতে নেওয়ার মতো বিশেষ ক্ষমতা পাবেন কিয়ামের দিন। এজন্য শর্ত হলো ওই হাফেজকে দৈনন্দিন জীবনে কুরআনে বর্ণিত হালাল-হারাম মেনে চলতে হবে। এমন হাফেজের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দিয়ে নবিজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করবে পাশাপাশি হিফজ করবে এবং এর যাবতীয় হালাল বিষয়কে হালাল ও হারাম বিষয়কে হারাম মেনে চলবে, আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। শুধু তাই নয়, তার পরিবারের এমন দশজন ব্যক্তির ব্যাপারে তার সুপারিশ কবুল করবেন যারা জাহান্নামে যাওয়ার উপযুক্ত হয়েছে।’ (তিরমিজি, হাদিস নম্বর ২৯০৫।)
মুমিন-মুসলমান মাত্রই জান্নাতে যাবে। তবে সে জান্নাতে সবচেয়ে ঈর্ষণীয়-লোভনীয় জায়গায় থাকবে কুরআনের হাফেজ। কিয়ামতের দিন হিসাব-নিকাশ শেষে কুরআনে হাফেজকে প্রতিটি আয়াত তেলাওয়াতের বিনিময়ে একটি করে মর্যাদার আসনে সমাসীন করা হবে। নবিজি (সা.) বলেছেন, ‘জান্নাতে কুরআন পাঠকারীকে বলা হবে, পড়তে থাক আর ওপরে চড়তে থাক। তুমি দুনিয়াতে যেভাবে ধীরে-সুস্থে তারতিলের সঙ্গে তেলাওয়াত করতে, সেভাবে তেলাওয়াত কর। তোমার তেলাওয়াতের শেষ আয়াতেই তোমার বাসস্থান নির্ধারণ হবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস নম্বর ১৪৬৪।) এ হাদিসের আলোকে বোঝা যায়, জান্নাতে হাফেজদের প্রাসাদ হবে ৬ হাজার ২৩৬ তলাবিশিষ্ট। হাফেজে কুরআন একটি আয়াত পাঠ করবেন আর জান্নাতের প্রাসাদে একতলা ওপরে উঠবেন, এভাবে যত আয়াত পাঠ করবেন তত উঁচুতে হবে তার থাকার ঘর।
সর্বোচ্চ প্রাসাদের পাশাপাশি হাফেজদের জন্য আল্লাহ রেখেছেন মারজান নামক নয়নাভিরাম বিশেষ এলাকা। নবিজি (সা.) বলেন, ‘জান্নাতে রাইয়ান নদীর ওপরে মারজান নামক একটি শহর রয়েছে। যা স্বর্ণ-রুপা দিয়ে বানানো হয়েছে। ওই এলাকাটি কেবল কুরআনের হাফেজদের জন্য নির্ধারিত।’ (কানজুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফআল।)
কুরআনে হাফেজের মর্যাদা কেবল আখেরাতেই নয় বরং দুনিয়াতেও তার জন্য রয়েছে সুন্দর চরিত্রের সার্টিফিকেট। হাদিস শরিফে হাফজেকে ফেরেশতার মতো পবিত্র ঘোষণা করা হয়েছে। আম্মাজান আয়েশা (রা.) বলেন, নবিজি (সা.) বলেছেন, ‘কুরআনের হাফেজ, যিনি সব সময় তেলাওয়াত করেন, তিনি আমলনামা লেখার কাজে নিয়োজিত সম্মানিত ফেরেশতাদের মতো সম্মানীত ও পবিত্র। আর অতিকষ্ট হওয়া সত্ত্বেও যে ব্যক্তি বারবার কুরআন তেলাওয়াত করে, তার পুরস্কার দ্বিগুণ।’ (বুখারি, হাদিস নম্বর ৪৫৭৩।)
কুরআনে হাফেজ আল্লাহর এত প্রিয়, এত মাহবুব বান্দা; তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য বিভিন্ন অফার ঘোষণা করেছেন আল্লাহতায়ালা। ওই হাফেজ পরিবারের দশজন জাহান্নামিকে তো জান্নাতে নেবেনই, বিশেষ আয়োজনে হাফেজের বাবা-মাকেও আল্লাহতায়ালা সম্মানীত করবেন। সাহল ইবনু মুআজ আল-জুহানি (রা.) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে এবং তা অনুযায়ী আমল করে, কিয়ামতের দিন তার মা-বাবাকে এমন মুকুট পরানো হবে যার আলো সূর্যের আলোর চেয়েও উজ্জ্বল হবে। ধরে নাও, যদি সূর্য তোমাদের ঘরে বিদ্যমান থাকে তাহলে তার আলো কত উজ্জ্বল হবে?। তাহলে যে ব্যক্তি কুরআন অনুযায়ী আমল করে তার ব্যাপারটি কেমন চমৎকার হবে তোমরা ধারণা কর!’ (আবু দাউদ, হাদিস নম্বর ১৪।)
এক বুজুর্গ প্রায়ই বলতেন, খাবার সুস্বাদু হওয়ার জন্য লবণ যেমন জরুরি তেমনি জান্নাতের জীবন আরও মজাদার করার জন্য একজন মুমিন-মুসলমানের কুরআন হেফজ করা তেমনি জরুরি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কালামুল্লাহ হেফজ সম্পন্ন করার পাশাপাশি কুরআনের বিধান অনুযায়ী আমল করে জান্নাতে উচুঁ মাকাম অর্জনের তাওফিক দিন। আমিন।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, সালমান ফারসি (রা.) মাদ্রাসা চরপাথালিয়া, মুন্সীগঞ্জ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।