১৯০০ সালে কোয়ান্টাম তত্ত্ব আবিষ্কার করেছেন ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক। কৃষ্ণবস্তুর বিকিরণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞান থেকে আমূল সরে আসতে বাধ্য হন তিনি। সে জন্য অনুমান করে নেন, শক্তির পরিমাণ তরলের মতো মসৃণ বা নিরবচ্ছিন্ন নয়; বরং তা নির্দিষ্ট, বিচ্ছিন্ন প্যাকেট হিসেবে ঘটে। অর্থাৎ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার মতো। প্ল্যাঙ্ক এ বিচ্ছিন্ন প্যাকেটের নাম দেন কোয়ান্টা (একবচনে কোয়ান্টাম)।
শক্তির প্রতিটি কোয়ান্টাম তার কম্পাঙ্কের সমানুপাতিক। এ সমানুপাতিক ধ্রুবকটি ছিল প্রকৃতির নতুন এক ধ্রুবক, যাকে এখন বলা হয় প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক। তবে কোয়ান্টাম তত্ত্বকে সিরিয়াসভাবে নেননি সমসাময়িক কোনো পদার্থবিজ্ঞানী। একটি সমীকরণকে প্রতিষ্ঠিত করতে জোড়াতালি দেওয়া একটি তত্ত্ব হিসেবে মনে করতেন সবাই।
কোয়ান্টাম তত্ত্বের সারকথা পড়ে শুরুতে তাল সামলাতে পারেননি খোদ আইনস্টাইনও। তাঁর নিজের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছিল বলে মনে হয়েছিল। কারণ, প্ল্যাঙ্কের কথামতো শক্তি যদি কোয়ান্টা বা কণা দিয়ে গঠিত হয়, তাহলে ম্যাক্সওয়েলের আলোর তরঙ্গ তত্ত্ব কীভাবে ঠিক হয়? বিজ্ঞানীদের কাছে ম্যাক্সওয়েলের বিদ্যুৎ–চুম্বকীয় তরঙ্গই তখন ধ্রুব সত্যের মতো। তাই আইনস্টাইনের কাছে প্ল্যাঙ্কের কোয়ান্টাম তত্ত্ব এক অর্থে ছিল ধর্মদ্রোহিতার শামিল।
আলোর তরঙ্গ তত্ত্ব দিয়ে ফটোইলেকট্রিক ইফেক্ট কোনোভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না, তা–ও প্রমাণিত সত্য। সে কথা আগেই বলেছি। তাই শেষ অস্ত্র হিসেবে প্ল্যাঙ্কের কোয়ান্টাম তত্ত্ব ব্যবহারের চেষ্টা করলেন আইনস্টাইন। তিনি কারণ দর্শালেন, প্ল্যাঙ্কের তত্ত্ব অনুসারে স্বাভাবিকভাবে শক্তি হিসেবে আলোও কণা দিয়ে গঠিত হওয়া উচিত। তাই শক্তি যদি বিচ্ছিন্ন প্যাকেট হিসেবে ঘটে, তাহলে আলো নিজেও অবশ্যই কোয়ান্টায়িত হবে।
মোটকথা, আইনস্টাইন দাবি করেন, আলো, তথা বিদ্যুৎ–চুম্বকীয় বিকিরণ তরঙ্গ নয়; বরং কণার মতো কোয়ান্টা। আইনস্টাইন এর নাম দেন লাইট অব কোয়ান্টা। পরে লাইট কোয়ান্টার প্যাকেট বা আলোর কণার নাম দেওয়া হয় ফোটন। আরও প্রায় দুই দশক পর, ১৯২৬ সালে রসায়নবিদ গিলবার্ট লুইস এ নামকরণ করেন। আইনস্টাইন বললেন, ফোটনের শক্তি যদি তার কম্পাঙ্কের সমানুপাতিক হয়, তাহলে নিঃসৃত ইলেকট্রনের শক্তিও তার কম্পাঙ্কের সমানুপাতিক হবে, যা চিরায়ত পদার্থবিদ্যার বিপরীত ধারণা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।