নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গাজীপুরের কালিয়াকৈর, কাপাসিয়া, কালীগঞ্জ ও শ্রীপুরে গরু চুরি বেড়েছে। সংঘবদ্ধ চোরের দল প্রায় রাতেই উপজেলাগুলোর বিভিন্ন এলাকার কৃষক ও খামারিদের বাড়িতে হানা দিচ্ছে। পুলিশ বলছে, গ্রামের মানুষদের সঙ্গে নিয়ে কীভাবে গরু চুরি বন্ধ করা যায়, সেই কাজ করা হচ্ছে।
এলাকাবাসী ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের মাঝি বাড়ি গ্রামের মো. ফরিদ হোসেন নামের এক কৃষকের দুটি গরু গত রোববার রাতে চুরি হয়। গরু দুটির আনুমনিক দাম ছিল ৩ লাখ টাক। এর আগে, গত শুক্রবার রাতে উলুখোলা গ্রামের হাসান আলীর দুটি ষাঁড় চুরি করে নিয়ে যায় চোরের দল। ষাঁড় দুটির আনুমানিক দাম ছিল প্রায় আড়াই লাখ টাকা। চুরির খবরে কালীগঞ্জে গরুর খামারি ও কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এক মাসের ব্যবধানে উপজেলা থেকে প্রায় ১৮ থেকে ২০টি গরু চুরি হয়েছে।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহতাব উদ্দিন বলেন, ‘ঈদের আগে কিছু এলাকা থেকে গরু চুরির খবর আসছে। আমরা গরু চোর চক্রকে ধরতে রাতে টহল বাড়িয়েছি।’
কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর এলাকার বাসিন্দারা জানান, কয়েকদিন আগে পিকআপ ভ্যান নিয়ে এসেছিল চোরের একটি দল। ভ্যানটি সড়কের পাশে রেখে ত্রুটি মেরামতের ভান করে তারা। একাধিক ব্যক্তি ওই পিকআপ ভ্যানটি সড়কের পাশে দেখলেও কারো সন্দেহ হয়নি। এক ফাঁকে চোরের দল সড়কের পাশের একটি বাড়িতে প্রবেশ করে এবং চারটি গরু গাড়িতে তুলে পালিয়ে যায়।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক ইউনিয়নের বড়ইবাড়ি, বৈরাগিচালা, মাটিকাটা এবং ঢালজোড় ও মধ্যপাড়া ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে লাভের আশায় চারটি, পাঁচটি করে গরু পালন করছেন। আবার অনেকে এর চাইতে বেশি গরু লালন-পালন করছেন। এই পশু পালন করে অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
বৈরাগিচালা গ্রামের বাসিন্দা মো. তুষার মিয়া জানান, গত ১৫ দিনে তাদেরসহ আশপাশের গ্রামের অন্তত অর্ধশত গরু চুরি হয়েছে। বৈরিগিচালা গ্রামের খিতিশ চন্দ্রের দেড় লাখ টাকার একটি গরু চুরি হয়েছে। জহিরুলের দুই লাখ টাকা মূল্যের একটি ষাঁড় চুরি হয়েছে। এছাড়া, রওশন আলীর দুটি, জাহাঙ্গীর আলমের তিনটি ও সেলিনা বেগমের তিনটি গরু চুরি হয়েছে।
বৈরাগিচালা গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম জানান, চলতি মাসে তাদের গ্রামসহ আশপাশের গ্রাম থেকে অন্তত ৫০টি গরু চুরি হয়েছে। চোর ধরা পড়ছে না। গরুর মালিকরা উৎকণ্ঠায় আছেন।
মধ্যপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘গত তিন রাতে কামারচালা গ্রামের আফাস উদ্দিন ও আনোয়ার হোসেনের চারটি গরু চুরি হয়েছে। বাগানবাড়ি এলাকার বদুর উদ্দিনের তিনটি গরু চুরি হয়েছে। ঈদের আগে চুরি বেড়ে যাওয়ায় গরুর মালিকরা খুবই চিন্তার মধ্যে আছেন।’
বাগানবাড়ি এলাকার বদুর উদ্দিন বলেন, ‘গত শনিবার সন্ধ্যায় গরু গোয়াল ঘরে রেখে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলাম। সকালে উঠে দেখি গোয়াল ঘরে থাকা তিনটি গরুর একটিও নেই। অনেক কষ্ট করে গরু তিনটি পালন করছিলাম। পুরাটাই ক্ষতি হয়ে গেলো।’
কাপাসিয়া উপজেলার কয়েকজন কৃষক বলেন, প্রায় প্রতি রাতেই উপজেলার কোনো না কোনো গ্রাম থেকে গরু চুরি হচ্ছে। রাতে পাহারা দিয়েও খামারি এবং কৃষকরা গরু রক্ষা করতে পারছেন না। গত এক মাসে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রায় শতাধিক গরু চুরি হয়েছে। পুলিশ একজন চোরকেও ধরতে পারেনি। এমনকি গরু চুরি হয়ে গেলে কৃষক ও খামারিরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। লাখ লাখ টাকার গরু হারিয়ে অনেক খামারি ও কৃষক পথে বসেছেন। উপজেলার চান্দুন গ্রাম থেকে ৪টি, পাবুর গ্রাম থেকে ৮টি, বাঘিয়া গ্রাম থেকে ৬টি, রায়েদ মধ্যপাড়া থেকে ৩টি, হাইলজোড় থেকে ২টি, ভাকোয়াদি থেকে ৪টি, টোক গ্রাম থেকে গরু চুরি হয়েছে ৮টি।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম নাসিম বলেন, ‘রাতে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। গ্রামের মানুষদের সঙ্গে নিয়ে কীভাবে গরু চুরি বন্ধ করা যায়, সেই কাজ করা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে গ্রামবাসীকে সম্পৃক্ত করে পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
রাস্তা সংস্কার না হলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাবে এলাকাবাসী
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।