বোতলের মুখ খুললেই হিসহিস করে, বিজবিজ করে বেরিয়ে আসে অনেকটা কোল্ড ড্রিংক। তবে পানীয়ের চেয়ে এ সময় বেশি দেখা যায় বুদবুদ। পানির ভেতরেই যেন এই বুদবুদ লুকিয়ে ছিল, ঝাঁপি খুলতেই বেরিয়ে পড়েছে দল বেঁধে। এগুলো আসে কোত্থেকে? কেন কোল্ড ড্রিংকসের বোতলের মুখ খুলতেই বেরিয়ে আসে বুদবুদ?
কোমল পানীয়তে আমরা যে বুদবুদ দেখি, তার কারিগর কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2) গ্যাস। কার্বোনেটেড ড্রিংকগুলোতে প্রচুর পরিমাণে এই গ্যাস মেশানো থাকে। অন্যভাবে বললে, কার্বন ডাই-অক্সাইড মেশানো থাকে বলেই এসব কোমল পানীয়কে কার্বোনেটেড ড্রিংক বলা হয়। (আর কার্বনেটের মধ্যকার সোডিয়াম লবণের জন্য অনেকে একে বলেন ‘সোডা’।) কার্বন ডাই-অক্সাইড আসলে একটি রংহীন ও গন্ধহীন গ্যাস। কোমলপানীয় বোতলজাত করার সময় উচ্চ চাপে এটি মেশানো হয়।
আধুনিক কার্বনেটেড ড্রিংকের উৎপত্তি জানতে হলে আমাদের যেতে হবে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জোসেফ প্রিস্টলির কাছে। ১৭৭২ সালে যেকোনো পানীয়কে কার্বোনেটেড করার যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন করেন তিনি। এ জন্য তাঁকে কোমল পানীয় শিল্পের জনক বলা হয়। এরপর ১৭৯৪ সালে সুইস জুয়েলার জেকব স্কেউপ্পা সাধারণ পানি কার্বোনেটেড করে জেনেভায় তাঁর বন্ধুর কাছে বিক্রি করেন বলে তথ্য পাওয়া যায়।
প্রথম দিকে বোতলজাত কার্বোনেটেড পানি ব্যবহৃত হতো ওষুধ হিসেবে। ফ্লেভার বা স্বাদ অনেক পরে যুক্ত হয়। ১৮২০-এর দশকে আদা এবং ১৮৩০-এর দশকে লেবুর স্বাদ যুক্ত কার্বোনেটেড ড্রিংক বাজারে আসা শুরু করে। পরে ১৮৮৬ সালে মার্কিন ফার্মাসিস্ট জন পেমবার্টন উদ্ভাবন করেন কোকাকোলা। সেটাই ছিল ইতিহাসের প্রথম কোলাজাতীয় কোমল পানীয়।
কোমল পানীয়তে কার্বন ডাই-অক্সাইড মেশানোর কারণে শুধু যে বুদবুদ তৈরি হয়, তা নয়, বরং এটা পানির সঙ্গে বিক্রিয়া করে কার্বনিক অ্যাসিড তৈরি করে। কার্বনিক অ্যাসিডের স্বাদ কিছুটা ট্যাঙ্গি—বলা ভালো, ঝাঁঝালো টক ধরনের। কিংবা বলতে পারেন, একটু কষ ও অ্যাসিড স্বাদের। যাহোক, শুধু কার্বনিক অ্যাসিডই নয়, কোমল পানীয়ের স্বাদ বৃদ্ধিতে অনেক সময় আরও নানা ধরনের অ্যাসিড মেশানো হয়।
অ্যাসিড মানেই কিন্তু ভয়ংকর কিছু নয়। লেবুতেও অ্যাসিড থাকে। কোমল পানীয়ের অ্যাসিডটাও সেরকম, খাওয়ার জন্য নিরাপদ। তবে এর কিছু সমস্যাও আছে, বলা বাহুল্য। যেমন সব ধরনের অ্যাসিডই দাঁতের জন্য ক্ষতিকর, তা সে যত অল্প পরিমাণেই হোক না কেন। তবে দাঁতের চিকিৎসকেরা এই অ্যাসিড নয়, বরং কোমল পানীয়তে থাকা চিনির ব্যাপারে বেশি উদ্বিগ্ন। এ কথা জানা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ডেন্টাল অ্যাসেসিয়েশনের সূত্রে।
কোমল পানীয়তে কার্বন ডাই-অক্সাইড যুক্ত করে বোতলজাত করার পর অল্প তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হয়। কারণ নিম্ন তাপমাত্রায় কার্বন ডাই-অক্সাইড পানিতে ভালোভাবে দ্রবীভূত থাকে। তাপমাত্রা বেড়ে গেলে দ্রবণ থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস হিসেবে বেরিয়ে আসে। যে কারণে, হয়তো খেয়াল করেছেন, সাধারণ তাপমাত্রায় রাখা কোমল পানীয় খেয়ে ঠিক তৃপ্তি হয় না।
আবার কোমল পানীয়তে যখন কার্বন ডাই-অক্সাইড মেশানো হয়, তখন তা স্বাভাবিকভাবেই গ্যাস আকারে বেরিয়ে আসতে চায়। হেনরির সূত্রের সাহায্যে এ ঘটনা ব্যাখ্যা করা যায়। ইংরেজ রসায়নবিদ উইলিয়াম হেনরি ১৮০৩ সালে তরলে দ্রবীভূত গ্যাসের পরিমাণ ও তরলের চারপাশে বায়ুচাপের মধ্যকার সম্পর্ক ব্যাখায় করতে একটি সূত্র আবিষ্কার করেন। সূত্রটি বলে, কোনো তরলের মধ্যে কী পরিমাণ গ্যাসীয় পদার্থ দ্রবীভূত থাকবে, তা নির্ভর করে তরলের চারপাশে ওই গ্যাসের চাপের ওপর। সম্পর্কটা সমানুপাতিক।
অর্থাৎ চারপাশে ওই গ্যাসের চাপ বাড়লে তরলে বেশি গ্যাস দ্রবীভূত থাকতে পারে। চাপ কমলে কমে যায় তরলে দ্রবীভূত গ্যাসের পরিমাণ। অর্থাৎ বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের চাপ কম থাকার কারণে হেনরির সূত্র অনুযায়ী স্বাভাবিকভাবে কোমলপানীয়তে উচ্চ চাপে দ্রবীভূত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস বেরিয়ে আসবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।