আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গত ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলে তাণ্ডব নিয়ে শেষ পর্যন্ত কি ডনান্ড ট্রাম্পও অভিযুক্ত হবেন? ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কি যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে? খবর ডয়চে ভেলে’র।
মার্কিন কংগ্রেসের কমিটি এখন ক্যাপিটল-দাঙ্গা নিয়ে তদন্ত করছে। তাদের আটটি শুনানি হয়েছে। যে কোনো ব্লকবাস্টার সিরিজের থেকেও আকর্ষণীয় হয়েছে এই শুনানি।
ক্যাপিটলে সমর্থকদের তাণ্ডবের পরের দিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি মানেন না যে নির্বাচন-পর্ব শেষ হয়ে গেছে। ট্রাম্প তখন নির্বাচনে ব্যাপক রিগিংয়ের অভিযোগ করছেন। হার মানছেন না, সমর্থকদের উসকানি দিচ্ছেন।
কংগ্রেসের তদন্তকারী কমিটি এবার গরমের ছুটি বা সামার ব্রেকে গেছে। তার আগে বৃহস্পতিবার শেষ শুনানিতে তদন্তকারী কমিটির পুরো ফোকাস ছিল, ৬ জানুয়ারি, সমর্থকদের ক্যাপিটলে ভাঙচুর না করার আবেদন জানাননি ট্রাম্প, তিনি তাদের চলে যেতেও বলেননি। তার পরিবার, পরামর্শদাতারা বারবার করে তাকে এই আবেদন করতে বলার পরও তিনি শোনেননি। দলের নেতারা, এমনকি ফক্স নিউজও এই আবেদন করেছিল। তদন্ত কমিটির সদস্যরা প্রথম শুনানি থেকে এটাও বোঝাবার চেষ্টা করছেন, ট্রাম্প জানতেন, নির্বাচনে কারচুপি হয়নি তা সত্ত্বেও তিনি তার সমর্থকদের উসকানি দিয়েছেন এবং সহিংসতায় মদত দিয়েছেন।
কমিটির সদস্যরা বলেছেন, ক্যাপিটলে সহিংসতার দায় পুরোপুরি ট্রাম্পের উপরই গিয়ে পড়ছে। তারা তাদের মতো করে টুকরো টুকরো করে তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করে তাদের বক্তব্য প্রমাণ করতে চাইছেন। সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল বিল বার অবশ্য জোরগলায় দাবি করেছেন, এই অভিযোগ মিথ্যা। কিন্তু কমিটির সদস্যরা তাকে প্রশ্ন করেন, ট্রাম্প জানতেন, তার সমর্থকরা সশস্ত্র , তাও তিনি কেন ১৮৭ মিনিট চুপ করে থেকেছেন? ততক্ষণ তার সদস্যরা ক্যাপিটলে তাণ্ডব চালিয়েছে।
এই শুনানির গুরুত্ব
শুনানির সময় বিস্তারিতভাবে সকলের সাক্ষ্য নেয়া হচ্ছে। অপ্রকাশিত ফুটেজ দেখানো হয়েছে। কিন্তু ঘটনা হলো, কংগ্রেসের কমিটি তদন্ত করতে পারে, কিন্তু অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোনো আইনগত অধিকার তাদের নেই। সেটা রয়েছে জাস্টিস বিভাগের ও বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ডের হাতে।
এতদিন পর্যন্ত জাস্টিস বিভাগ ৬ জানুয়ারির সঙ্গে যুক্ত ৯০০ জনকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে। কিন্তু ট্রাম্পের ইনার সার্কেলে থাকা মানুষ বা সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার ইঙ্গিত দেয়নি তারা। এই কাজটাও কঠিন।
জর্জ ওয়াশিংটন আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্যাথারিন রস ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, জাস্টিস বিভাগ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহ, কংগ্রেসের অধিবেশনে বাধা দেয়া, দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনতেই পারে। ভোটের ফল বানচাল করার জন্য ট্রাম্প বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। আইনজীবীরা তাকে বলেছিলেন, এগুলি বেআইনি ও তিনি তা করতে পারেন না। কিন্তু তাও তিনি শোনেননি। ফলে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনা যেতেই পারে।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ট্রাম্পের উদ্দেশ্য নিয়ে মামলা করা যেতেই পারে, কিন্তু দাঙ্গার সঙ্গে তার যোগ ছিল, এটা প্রমাণ করা খুবই কঠিন। সাবেক প্রেসিডেন্টকে আদালতের সামনে নিয়ে আসা অ্যামেরিকায় অভূতপূর্ব ঘটনা। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা আদালতে টিকবে কি না, সেটাও দেখা দরকার।
আইনের অধ্যাপক উইলিয়াম সি ব্যাংকস বলেছেন, আদালতে শুনানির সময় অভিযোগ প্রমাণ করার মতো তথ্যপ্রমাণ হাতে থাকা দরকার। এই ব্যাপারে আইন খুবই কড়া। তাই যথেষ্ট প্রমাণ না থাকলে অভিযুক্ত বেনিফিট অফ ডাউট পেয়ে যাবেন।
কংগ্রেস কমিটির শুনানি নিয়ে মানুষের প্রবল আগ্রহ আছে। বৃহস্পতিবারের শুনানি দেখেছেন এক কোটি ৭৭ লাখ মানুষ। বেশির ভাগই রিপাবলিকান সমর্থক। এই নিয়ে উত্তেজনাও আছে। এই অবস্থায় যখন ট্রাম্প ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য তৈরি হচ্ছেন, তখন কি তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনা হবে? ব্যাংকস বলেছেন, এই প্রশ্নটা নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে ভাবতে হবে।
কংগ্রেস কমিটির পরের শুনানি হবে সেপ্টেম্বরে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।