জুমবাংলা ডেস্ক : চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার উথলী বাজারে অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত উথলী সোনালী ব্যাংক শাখায় ফিল্মি স্টাইলে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় চার ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ভারতীয় সনি টিভির সিরিয়াল ক্রাইম পেট্রোল দেখে এই চারজন ব্যাংক লুট করায় উদ্বুদ্ধ হন এবং এজন্য প্রশিক্ষণ নেন।
গত ১৫ নভেম্বর দুপুর সোয়া ১টার দিকে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এর এক মাস পরে জীবননগর থানা পুলিশ সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে অভিযান চালিয়ে যশোরের চৌগাছা উপজেলা শহর থেকে ডাকাতির মূলহোতা জীবননগর উপজেলার দেহাটি গ্রামের সাফাতুজ্জামান রাসেলকে (৩০) গ্রেফতার করে।
পরে একই রাতে ডাকাত দলের অন্য সদস্য জীবননগর উপজেলার দেহাটি গ্রাম থেকে জাহাঙ্গীর শাহের ছেলে রফি (২৩), মফিজুল শাহের ছেলে মাহফুজ আহম্মেদ আকাশ (১৯) এবং আখতারুজ্জামান বাচ্চুর ছেলে হৃদয়কে (২২) গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশ ডাকাত দলের সদস্যদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ব্যাংক থেকে লুট হওয়া নগদ পাঁচ লাখ ৩ হাজার টাকা এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দুটি খেলনা পিস্তল, দুটি হেলমেট, দুটি চাপাতি, দুটি মোটরসাইকেল এবং পিপিই উদ্ধার করেছে।
মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে জেলা পুলিশের সম্মেলন কক্ষে প্রেস বিফিংয়ে ডাকাত সদস্য গ্রেফতারসহ লুট হওয়া টাকা উদ্ধারের বিষয়ে জানান চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. জাহিদুল ইসলাম।
পুলিশ সুপার মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, গত ১৫ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার উথলী বাজারে অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত উথলী সোনালী ব্যাংক শাখায় দুপুর সোয়া ১টার সময় ফিল্মি স্টাইলে দুর্ধর্ষ ডাকাতি সংঘটিত হয়। এ সময় ডাকাত দল অস্ত্রের মুখে ব্যাংকের নিরাপত্তাপ্রহরীসহ সবাইকে জিম্মি করে নগদ ৮ লাখ ৮২ হাজার ৯০০ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনার পর পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ডাকাতদের গ্রেফতারসহ লুট হওয়া অর্থ উদ্ধারে অভিযানে নামে। ওই সময় থেকে পুলিশ সন্দেহভাজন বেশ কয়েকজনের ওপর কড়া নজরদারি শুরু করে। এছাড়া বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের অবস্থান নিশ্চিতকরাসহ তাদের কথোপকথন রেকর্ড করা হয়। কিন্তু তারা নির্দিষ্ট এক জায়গায় অবস্থান না করায় তাদেরকে গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছিল না। সোমবার রাতে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ সুপার আরও জানান, ভারতীয় সনি টিভির সিরিয়াল ক্রাইম পেট্রোল দেখে এই চারজন ব্যাংক লুট করায় উদ্বুদ্ধ হন। সে অনুযায়ী তারা প্রশিক্ষণ নেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী অনলাইন মার্কেট প্লেস দারাজ থেকে খেলনা পিস্তল সংগ্রহ করেন।
গত ১৫ নভেম্বর দিনের বেলায় চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার উথলী বাজারে অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত উথলী সোনালী ব্যাংক শাখায় দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওইদিন, দুপুর সোয়া ১টার সময় প্রথমে একজন পিপিই ও হেলমেট পরিহিত অবস্থায় উথলী বাজারে অবস্থিত সোনালী ব্যাংকের ভেতর প্রবেশ করেন। এর এক মিনিট পর আরও দুজন হেলমেট পরিহিত অবস্থায় ব্যাংকে প্রবেশ করেন। এরপর তারা তিনজন পিস্তল উঁচিয়ে ব্যাংকের দরজা বন্ধ করে দেন এবং ব্যাংকের নিরাপত্তাপ্রহরীসহ সবার ফোন নিয়ে নেন। এরপর তারা ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ও নিরাপত্তাকর্মীসহ ওই ব্যাংকে কর্মরত মোট আটজনকে একটি কক্ষের সামনে বসিয়ে রাখেন।
পরবর্তীতে তারা ব্যাংকের ভোল্টারে রক্ষিত টাকাসহ কাউন্টারে থাকা মোট ৮ লাখ ৮২ হাজার ৯০০ টাকা লুট করে নেয়।
টাকা লুটের পর ডাকাতদলের সদস্যরা দ্বিতীয় তলা থেকে সিঁড়ি বেয়ে নামার সময় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জরুরি সতর্ক সংকেত (ইমারজেন্সি হুইসেল) বাজান। সতর্ক সংকেত শুনে ব্যাংকের পার্শ্ববর্তী দোকানদাররা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং ডাকাত দলকে ধাওয়া করেন। এ সময় ডাকাত দল পিস্তল উঁচিয়ে গুলি করার হুমকি দিলে দোকানদাররা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন এবং চিৎকার শুরু করেন। এ সুযোগে ডাকাতদল ব্যাংকের পেছনে রেখে দেয়া লাল রঙের হিরোহোন্ডা মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যাবার চেষ্ট করে।
পালিয়ে যাওয়ার সময় ডাকাতদল উথলী সূর্যতোরণ ক্লাবের সামনে গেলে আবার বাধার মুখে পড়ে। ওখানে দাঁড়িয়ে থাকা আরিফুর রহমান মন্টুসহ ৫-৬ জন মোটরসাইকেল লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে একটা ইট ডাকাত দলের হেলমেটে লাগে। খবর পেয়ে উথলী বিশেষ ক্যাম্পের বিজিবি ও জীবননগর থানা পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ডাকাত দলের ফেলে যাওয়া পিস্তলের অংশ বিশেষ উদ্ধার করে।
ঘটনার পর খুলনা বিভাগের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) মো. নাহিদুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার, চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার মো. জাহিদুল ইসলাম, জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মো. হাফিজুর রহমান, জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মুনিল লিংকন, চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) আবু রাসেল, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) উপপরিচালক জিএম জামিল সিদ্দিক, সোনালী ব্যাংকের ফরিদপুর জিএম অফিসের জেনারেল ম্যানেজার (ইনচার্জ) খোকন চন্দ্র বিশ্বাস, জীবননগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলামসহ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), ডিজিএফআই, ডিএসবি ও সিআইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ ঘটনার পর রাতেই ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বাদী হয়ে জীবননগর থানায় অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
পরে পুলিশের খুলনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) মো. নাহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদেরকে বলেন, ব্যাংক চালানোর জন্য এ ভবন মোটেও উপযুক্ত না। এ ঘটনা আমাদের জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত। আমার ধারণা, এ জেলার মধ্যেই অপরাধীদের অবস্থান। আমরা আশাবাদী অল্প সময়ের মধ্যে আসামি ধরতে পারব।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংক কর্তৃপক্ষের চরম গাফিলতি আছে। ব্যাংকের মতো একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে একটা সিসি ক্যামেরাও নেই বর্তমান যুগে এটা ভাবা যায় না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।