মিরপুরের গ্যালারিতে রোদ্দুর ভরা বিকেল। তীব্র চিৎকারে কাঁপছে স্টেডিয়াম। পেস বোলারের বাউন্সারে ব্যাটসম্যানের হেলমেট উড়ে গেলেও, সেই কিশোর দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে ক্রিজে। পরের বলেই ছক্কা! দর্শকদের উল্লাসে ভেসে যায় স্টেডিয়াম। এই দৃশ্য শুধু একটি ম্যাচ জয় নয়, বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যতের এক জীবন্ত ইঙ্গিত। এখানেই লুকিয়ে আছে আমাদের পরবর্তী শাকিব, তামিম কিংবা মাশরাফির বীজ। ক্রিকেটে নতুন প্রতিভা:ভবিষ্যতের তারকারা—এই শব্দগুচ্ছ আজ কোনো সাধারণ বাক্য নয়, এটি এক জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দু। গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের U-19 দল দু’বার বিশ্বকাপ ফাইনালে পৌঁছেছে (২০১৮ ও ২০২০), যা প্রমাণ করে আমাদের তরুণ প্রজন্মের ক্রিকেটীয় মেধা কোন উচ্চতায় পৌঁছেছে। প্রতিটি গ্রামের মাঠে, প্রতিটি জেলার একাডেমিতে আজ হাজারো চোখ জ্বলছে একই স্বপ্নে—বাংলাদেশের জার্সি গায়ে বিশ্বজয়ের। কিন্তু এই রূপকথা রচনার পেছনের অদৃশ্য যোদ্ধারা কারা? কীভাবে তারা তৈরি হচ্ছে? আর কোন চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করতে হবে তাদের?
ক্রিকেটে নতুন প্রতিভা: ভবিষ্যতের তারকারাদের উত্থানের পেছনের কারিগররা
বাংলাদেশে ক্রিকেট প্রতিভা বিকাশের ইঞ্জিন শুরু হয় স্থানীয় পর্যায়ে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (BCB)-এর পিরামিড স্ট্রাকচারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তর হলো স্কুল ও ক্লাব ক্রিকেট। রাজশাহীর একটি মাটির মাঠে প্রতিদিন সকাল ৬টায় অনুশীলনে মত্ত ষষ্ঠ শ্রেণির রাকিব। তার কোচ, সাবেক প্রথম-শ্রেণি ক্রিকেটার জাহাঙ্গীর আলম, বলছিলেন: “২০০৭ সালে মাশরাফি-মর্তুজা যখন বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডকে হারিয়েছিল, তখন এই এলাকায় ক্রিকেট ব্যাট ছিল ১০টি। আজ শুধু আমাদের ক্লাবেই ৫০ জন নিয়মিত প্রশিক্ষণ নেয়। BCB-র গ্রাসরুট ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম সরঞ্জাম ও কোচ সরবরাহ করে—এটাই গেম-চেঞ্জার।”
জাতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (BKSP) এবং BCB একাডেমি হলো দুটি স্টার-মেকিং ফ্যাক্টরি। BKSP-তে বর্তমানে ১২৫ জন ক্রিকেটার রেসিডেন্সিয়াল ট্রেনিং নিচ্ছে। এখানকার স্পেশালাইজড কোচিং, স্পোর্টস সায়েন্স ল্যাব, এবং মানসিক স্বাস্থ্য কাউন্সেলিং—সবকিছুই আন্তর্জাতিক মানের। ২০২৩ সালে U-19 এশিয়া কাপ জয়ী দলের ৭ জন খেলোয়াড়ই BKSP-র প্রোডাক্ট। একাডেমির হেড কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম এর মতে, “আমরা শুধু ক্রিকেটার নয়, অনুকরণীয় মানুষ গড়ার চেষ্টা করি। প্রতিদিন ৬ ঘন্টা অনুশীলনের পাশাপাশি ইংরেজি ও লাইফ স্কিল ক্লাস বাধ্যতামূলক।”
আন্তর্জাতিক এক্সপোজারের গুরুত্ব অপরিসীম। BCB নিয়মিত আয়োজন করে U-19 দলের দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়া সফর। ২০২২ সালে বাংলাদেশ A দল ইংল্যান্ডে ঐতিহাসিক সিরিজ জয় করে। এসব ট্যুরে তরুণ খেলোয়াড়রা শেখে গ্রিন টপ উইকেট বা বাউন্সি ট্র্যাকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা। BCB-র চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান পাপন-এর ভাষায়, “আমরা প্রতিবছর তরুণ ট্যালেন্টদের জন্য বরাদ্দ বাজেট ৩০% বাড়াচ্ছি। কারণ, আজকের U-19 খেলোয়াড়ই ২০৩১ বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেবে।” BCB-র অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট অনুসারে, ২০২০-২০২৩ মেয়াদে ১৮টি নতুন ক্রিকেট একাডেমি চালু হয়েছে ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়া ও রংপুরে।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
- BCB-র High Performance (HP) ইউনিটে বর্তমানে ৪৫ জন তরুণ ক্রিকেটার স্কলারশিপ পাচ্ছে।
- ২০২৫ সাল নাগাদ প্রতিটি বিভাগীয় স্টেডিয়ামে থাকবে আধুনিক ইনডোর ট্রেনিং সেন্টার।
- U-16 জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে এখন অংশ নেয় ৬৪টি জেলার দল (২০১০ সালে ছিল মাত্র ২২টি)।
বাংলাদেশের আলোচিত পাঁচ ভবিষ্যতের তারকা: প্রোফাইল ও সম্ভাবনার বিশ্লেষণ
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেটে যেসব তরুণ মুখ তাদের জৌলুছ বিস্তার করছে, তাদের মধ্যে পাঁচজন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এরা শুধু পারফরম্যান্স দিয়েই নয়, নিজস্ব স্টাইল ও মানসিক দৃঢ়তায় আলাদা।
তানজিদ হাসান তামিম (বয়স ২২, ওপেনিং ব্যাটসম্যান):
BPL-এ চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে ২০২৩ মৌসুমে ৪৫০ রান করেন স্ট্রাইক রেট ১৩৫+। তার হাই-ব্যাকলিফ লফটি ড্রাইভ ক্রিকেটবোদ্ধাদের মনে করায় তামিম ইকবালের স্টাইল। জাতীয় দলের সিলেক্টর হাবিবুল বাশার সুমন তাকে “ভবিষ্যতের টেস্ট ওপেনার” বলে অভিহিত করেন। তবে, IPL অকশনে না ওঠা নিয়ে হতাশা থেকে শিখেছেন মানসিক শক্তি নিয়ন্ত্রণ। সম্প্রতি NCL-এ সিলেটের হয়ে ইনিংস ডেক্লেয়ারেশনের আগে ১৮২ রান করেন।রাকিবুল হাসান (বয়স ২০, লেগ-স্পিনার):
U-19 বিশ্বকাপ ২০২০-এ সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করে তাক লাগান। BCB একাডেমির কোচ মোহাম্মদ রফিক বলেন, “ওর গুগলি পড়া প্রায় অসম্ভব। শচীনও এমন বল খেলতে হিমশিম খেতেন।” BPL-এ খুলনা টাইগার্সের হয়ে ১৪ উইকেট নেন ইকোনমি ৬.৮-এ। তবে ফিটনেস ইস্যু ছিল চ্যালেঞ্জ; এখন প্রতিদিন ৯০ মিনিট ইয়োগা করেন।শাহাদাত হোসেন (বয়স ১৯, ফাস্ট বোলার):
ময়মনসিংহের এই পেসার ঘণ্টায় ১৪৫ কিমি গতিতে বল ফেলতে পারেন। ২০২৩ ACC Emerging Cup-এ নেপালের বিরুদ্ধে ৫ উইকেট শিকার করে ম্যাচসেরা হন। BKSP-র ফাস্ট বোলিং কোচ মাহবুব আলী বললেন, “শাহাদাতের সুইং ক্ষমতা ও রিভার্সের কারিগরি পাকিস্তানি বোলারদের মতো।” এখন লক্ষ্য দৈহিক স্ট্যামিনা বাড়ানো।ফাহিমা খাতুন (বয়স ১৮, অলরাউন্ডার – নারী ক্রিকেট):
নারী U-19 T20 বিশ্বকাপে ১২ উইকেট ও ২১০ রান করে বাংলাদেশকে সেমিতে পৌঁছে দেন। তার অফ-স্পিনে অস্ট্রেলিয়ানরা বারবার LBW-তে পড়েছে। মাগুরায় দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া ফাহিমা এখন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল-এর রোল মডেল। সাম্প্রতিক সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন।- আহাদ আলী (বয়স ১৭, উইকেট-কিপার ব্যাটসম্যান):
এই কিশোরের টেকনিক নিয়ে হৈচৈ পড়ে গেছে। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডান স্পোর্টিং-এর হয়ে ৭৫ গড়ে ৪০০+ রান। বিখ্যাত উইকেটকিপার খালেদ মাসুদ বলেন, “আহাদের হ্যান্ড-আই কো-অর্ডিনেশন ও ফুটওয়ার্ক দেখে মুশফিকের কথা মনে পড়ে।” এখন ফোকাস গ্লাভস ছাড়াই ক্যাচিং অনুশীলনে।
মূল্যায়ন:
- এই প্রজন্মের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো “ফিয়ারলেস অ্যাপ্রোচ”। তারা T20 লিগ দেখে বড় হয়েছে, তাই রক্ষণাত্মক ক্রিকেটে বিশ্বাসী নয়।
- মেন্টাল রেজিলিয়েন্স এখনো চ্যালেঞ্জ। আইপিএলে না পেলেই মনোবল ভেঙে পড়ার প্রবণতা রয়েছে।
- ফিটনেস স্ট্যান্ডার্ড আগের চেয়ে উন্নত। BKSP-তে এখন প্রতিদিন ২ ঘন্টা স্ট্রেন্থ ট্রেনিং বাধ্যতামূলক।
প্রতিভা বিকাশে চ্যালেঞ্জ: কোথায় বাধা, কী সমাধান?
শারীরিক ও মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনা:
২০২২ সালে U-19 বিশ্বকাপ ফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে হার বাংলাদেশের তরুণদের জন্য কঠিন শিক্ষা ছিল। মনোবিদ ড. মেহজাবীন হক-এর গবেষণা বলছে, ৬৫% তরুণ ক্রিকেটার উচ্চ প্রত্যাশার চাপে অ্যাংজাইটিতে ভোগে। সমাধান হিসেবে BCB একাডেমিতে যোগ হয়েছে স্পোর্টস সাইকোলজিস্ট। সেমিস্টারে ২টি বাধ্যতামূলক কাউন্সেলিং সেশনের রুল চালু হয়েছে।
আর্থিক নিরাপত্তাহীনতা:
রাজবাড়ীর মোহাম্মদ আলীর গল্প উদাহরণ। মাঠে লেগে গেলে ব্যাট ভাঙার ভয়ে মা চেয়েছিলেন ক্রিকেট ছাড়তে! BCB এখন U-16 লেভেল থেকেই মাসিক ৮,০০০ টাকা স্টাইপেন্ড দেয়। জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার বিজয়ীরা পায় ৫ লাখ টাকা। তবুও গ্রামাঞ্চলে অনুশীলনের সময় আয়-রোজগারের চাপ বড় বাধা।
ক্লাবে সুযোগের অভাব:
BPL দলে বিদেশি তারকাদের প্রাধান্য তরুণদের জায়গা সংকুচিত করে। ২০২৩ BPL-এ মাত্র ১৯% খেলোয়াড় ছিলেন U-23। BCB নতুন নিয়ম করেছে: প্রতিটি দলে কমপক্ষে ২ জন U-19 খেলোয়াড় রাখতে হবে। এছাড়া ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ (DPL)-এ জেলাভিত্তিক কোটা চালু হয়েছে।
টেকনোলজি ও ইনফ্রাস্ট্রাকচার গ্যাপ:
সিলেটের একাডেমিতে এখনো নেই হাই-স্পিড ক্যামেরা। ফলে বোলিং একশন এনালিসিস করা যায় না। BCB-র পরিকল্পনা ২০২৫ সালের মধ্যে সকল বিভাগীয় একাডেমিতে হকআই টেকনোলজি স্থাপন। এপ্রিল ২০২৪ থেকে BKSP-তে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) বেসড ব্যাটিং সিমুলেশন চালু হয়েছে।
সমাধানের পথ:
- প্যারেন্ট এডুকেশন প্রোগ্রাম: অভিভাবকদের ক্রিকেট ক্যারিয়ার নিয়ে সচেতনতা সেশন।
- রিজিওনাল পারফরম্যান্স সেন্টার: চট্টগ্রাম ও খুলনায় নতুন সেন্টারে তরুণরা পাবে আন্তর্জাতিক মানের সুবিধা।
- স্পোর্টস স্কলারশিপ ডাটাবেজ: মেধাবী খেলোয়াড়দের জন্য কর্পোরেট ফান্ডিংয়ের ব্যবস্থা।
সমর্থক, মিডিয়া ও কর্পোরেট দায়িত্ব: সামষ্টিক প্রচেষ্টার আহ্বান
ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়া:
যখন ১৭ বছরীয় ফাস্ট বোলার নাঈম হাসান ইউটিউবে ১৫০ কিমি/ঘণ্টা স্পিড ভিডিও ভাইরাল হয়, তা তাকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করে। কিন্তু একই প্ল্যাটফর্মে ব্যর্থতার পর সমালোচনা কিশোর মনে গভীর ক্ষতও তৈরি করে। ক্রিকেট জার্নালিস্ট মোহাম্মদ ইসাম বললেন, “আমরা মিডিয়াকর্মীরা শুধু রান-উইকেটের হিসাব নিলে চলবে না। তরুণদের মানবিক গল্প বলতে হবে।”
সমর্থকদের শক্তি:
মিরপুর টেস্টে তানজিদ হাসান প্রথম বলে শূন্য রানে আউট হলে স্টেডিয়ামজুড়ে করতালি বেজে উঠেছিল। এই “সাপোর্টিভ ক্রাউড কালচার” গড়ে তুলতে BCB চালু করেছে “ফিউচার স্টারস স্পটলাইট” প্রচারাভিযান—ম্যাচে সেরা তরুণ খেলোয়াড়কে সমর্থকরা ভোট দেবেন।
কর্পোরেট স্পনসরশিপের ভূমিকা:
ওয়ালটন, রবি, বসুন্ধরা গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো তরুণ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট স্পন্সর করছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ তরুণ ক্রিকেটার ফাউন্ডেশন চালু হয়েছে, যেখানে ১০টি কর্পোরেট হাউস তরুণ প্রতিভাদের স্কলারশিপ দিচ্ছে। এটি শুধু আর্থিক নয়, মনোবল বাড়ানোরও হাতিয়ার।
সরকারি উদ্যোগ:
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়-এর “ক্রীড়া প্রতিভা অনুসন্ধান” প্রকল্পের আওতায় প্রতিবছর ৬৪ জেলায় স্কাউটিং ক্যাম্প হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালে ঘোষণা দিয়েছিলেন: ক্রিকেট একাডেমি হবে প্রতিটি বিভাগে। এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল-এর বর্তমান তারকা লিটন দাস-এর উক্তি প্রাসঙ্গিক: “আমরা যখন U-19 ছিলাম, BKSP-তে বিদ্যুৎ থাকত না ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আজকের তরুণরা যে সুযোগ পাচ্ছে, তাতে ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ ৩-এ!”
জেনে রাখুন
১. বাংলাদেশে তরুণ ক্রিকেটারদের স্কাউটিং প্রক্রিয়া কী?
BCB প্রতিবছর জাতীয় U-16 ও U-19 টুর্নামেন্ট আয়োজন করে, যেখানে প্রতিটি জেলা থেকে দল অংশ নেয়। সেখানে পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে ৩০ জনকে BKSP-তে ট্রায়ালের জন্য ডাকা হয়। এছাড়া, BCB-র স্কাউটিং নেটওয়ার্ক মাঠ পর্যায়ে সরাসরি প্রতিভা শনাক্ত করে। প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ স্বচ্ছ; কোনো রাজনৈতিক প্রভাব নেই।
২. ক্রিকেটে নতুন প্রতিভাদের জন্য BCB-র আর্থিক সুযোগ-সুবিধা কী?
জাতীয় U-19 দলের সদস্যরা মাসিক ১৫,০০০ টাকা স্টাইপেন্ড পায়। BKSP-র ছাত্ররা বিনামূল্যে থাকা-খাওয়া, শিক্ষা ও ক্রিকেট কিট পায়। এছাড়া, BCB হাই পারফরম্যান্স প্রোগ্রামে নির্বাচিতরা বিদেশে প্রশিক্ষণের সুযোগ পায়। আর্থিক অস্বচ্ছল পরিবারের খেলোয়াড়দের জন্য বিশেষ ফান্ড রয়েছে।
৩. নারী ক্রিকেটে নতুন প্রতিভা বিকাশে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে?
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ২০২০ সালে “নারী ক্রিকেট একাডেমি” চালু করেছে জেসোরে। এখানে ৩০ জন তরুণী রেসিডেন্সিয়াল ট্রেনিং নেয়। U-16 নারী জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ এখন নিয়মিত আয়োজিত হয়। নারী ক্রিকেটারদের জন্য আলাদা স্টাইপেন্ড ও ইনসেনটিভ সিস্টেম চালু হয়েছে, যা পুরুষদের সমতুল্য।
৪. বিদেশে লিগ খেলার সুযোগ পাচ্ছে কি বাংলাদেশের তরুণ ক্রিকেটাররা?
হ্যাঁ, BPL তো আছেই, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশি তরুণরা ইংলিশ কাউন্টি, অস্ট্রেলিয়ান প্রিমিয়ার লিগে খেলার সুযোগ পাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩ সালে লেগ-স্পিনার রাকিবুল হাসান ইংল্যান্ডের ক্লাব ক্রিকেটে অংশ নেন। BCB এইসব অভিজ্ঞতাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়।
৫. একজন প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ ক্রিকেটারের দৈনন্দিন রুটিন কেমন?
সকাল ৫:৩০টায় জেগে ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত ফিটনেস ট্রেনিং। সকাল ৯টা থেকে ১২টা স্কুল/কলেজ। বিকেল ২টা থেকে ৫টা নেট প্র্যাকটিস। সন্ধ্যায় ১ ঘন্টা মেন্টাল কন্ডিশনিং ক্লাস। রাত ৯টা থেকে ১১টা পড়ালেখা। শনিবারে ম্যাচ ও রবিবারে বিশ্রাম। BKSP-র ছাত্রদের ক্ষেত্রে এই রুটিন আরও কঠোর।
৬. ক্রিকেটে ক্যারিয়ার গড়তে গেলে কী কী একাডেমিক যোগ্যতা প্রয়োজন?
কোনো আনুষ্ঠানিক একাডেমিক যোগ্যতা না থাকলেও, এসএসসি পাস করা বাধ্যতামূলক নয়। তবে BCB একাডেমিতে ভর্তির জন্য বয়সসীমা U-16 এবং শারীরিক ফিটনেস টেস্ট পাস করতে হয়। ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষে বিকল্প পেশার জন্য BKSP-তে সকলকে এইচএসসি পাস বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এই তরুণ প্রজন্ম শুধু ব্যাট-বল নিয়ে খেলছে না, তারা বয়ে আনছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের স্বর্ণযুগের সম্ভাবনা। প্রতিটি ইনিংস, প্রতিটি উইকেট, প্রতিটি ক্যাচ আমাদের জাতীয় অহংকারের নতুন স্তর সংযোজন করছে। ক্রিকেটে নতুন প্রতিভা:ভবিষ্যতের তারকারা আজ মাঠে যেভাবে লড়ছে, তা শুধু খেলার জয় নয়—একটি জাতির অদম্য জয়গাথা। এখনই সময় আমাদের সমর্থন, সংবেদনশীলতা ও বিনিয়োগ দ্বিগুণ করার। কারণ, আজকের U-19 খেলোয়াড়ই আগামী দিনের টেস্ট ক্যাপ্টেন। এই যাত্রায় আপনি কী ভূমিকা রাখবেন? আপনার স্থানীয় মাঠের প্রতিভাকে চিনুন, অনুপ্রাণিত করুন। কারণ, বাংলাদেশের প্রতিটি মেধাই পারে বিশ্বজয়ের ইতিহাস রচনা করতে!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।