
ড্রেসিং রুমের দিকে যাওয়ার সময় বারবার নিজের ব্যাটের দিকে তাকাচ্ছিলেন তামিম ইকবাল। যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না তিনি আউট হয়েছেন। অফস্ট্যাম্পের অনেক বাইরের বল যেন টেনে এনে প্লেড-অন হয়ে গেছেন!
এমন বলে তো ছক্কা কিংবা চার হওয়ার কথা। পাওয়ার প্লের সময় সেই বলেই কিনা ফিরতে হলো সাজঘরে।
এটি শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ম্যাচের ঘটনা। দারুণভাবে শুরু করেও ১৯ রানেই নিজের উইকেটটা লঙ্কান বোলারকে উপহার দিয়েছেন। প্রথম ম্যাচে তো রানের খাতাই খুলতে পারেননি। লাসিথ মালিঙ্গার বলে সরাসরি বোল্ড!
বিশ্বকাপেও তামিমের পারফরম্যান্স ছিল খুব হতাশার। ৮ ম্যাচে কোনো সেঞ্চুরি নেই। হাফ সেঞ্চুরিও মাত্র একটি।
মাত্র এক বছরের ব্যবধানে মুদ্রার এপীঠ-ওপীঠ দেখে ফেললেন তামিম ইকবাল! অথচ ২০১৮ সালটি ছিল তামিমের ক্যারিয়ারের সেরা বছর। তার গড় ছিল ৮৫-রও ওপরে। সেই তামিম ২০১৯ সালে বড় অসহায়! গড় ৩০-র নিচে।
তারপরও ড্যাসিং ওপেনারের ব্যাটিং নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই। তার ব্যাটিং কৌশল নিয়ে আলোচনা করাও বোকামি। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। ২০৩ ওয়ানডেতে ৩৫.৬৯ গড়ে করেছেন ৬,৮৯০ রান। ১১ সেঞ্চুরির সঙ্গে ৪৭টি হাফ সেঞ্চুরি।
কিন্তু তামিম কেন এভাবে আউট হচ্ছেন বারবার?
সাধারণত কোনো ব্যাটসম্যান তখনই বারবার প্লেড-অন হয়ে যান যখন তার আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি দেখা দেয়! ড্যাসিং ওপেনার কি তবে আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগছেন?
শুধু তামিম কেন, ওপেনিংয়ে সুবিধা করতে পারছেন না সৌম্য সরকারও। বিশ্বকাপ থেকেই ওপেনিং জুটি নিয়ে সমস্যায় বাংলাদেশ। যেখানে অন্য দেশের ব্যাটিং লাইনআপে উদ্বোধনী জুটি দারুণ শুরু এনে দিচ্ছে, সেখানে ব্যর্থ দুই টাইগার ওপেনার। তারপরও বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসান ওয়ান ডাউনে নেমে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করেছেন বলেই টপ অর্ডারের জীর্ণ দশা চোখে পড়েনি সেভাবে। কিন্তু শ্রীলঙ্কায় বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার না থাকায় টপ অর্ডারের কঙ্কালসার অবয়ব দৃশ্যমান হচ্ছে।
শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচে দেখা যায় এক মুশফিকুর রহিম এক প্রান্ত আগলে রেখে ব্যাটিং করলেন আরেক পাশে উইকেট বিলিয়ে দেওয়ার প্রতিযোগিতা চলল! মিস্টার ডিপেন্ডেবল একা অপরাজিত ৯৮ রানের ইনিংস খেলার পরও বাংলাদেশের স্কোর টেনেটুনে ২৩৮।
টাইগাররা যখন ব্যাটিং করছিল মনে হচ্ছিল, উইকেট বোলারদের স্বর্গ! অথচ শ্রীলঙ্কা সেই একই উইকেটে অনায়াসে ৭ উইকেট হাতে রেখেই জয় তুলে নেয়। দুই ম্যাচেই বাজেভাবে হেরে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জিতে যায় স্বাগতিকরা। এখন তো হোয়াইটওয়াশ হওয়ার আশঙ্কায় বাংলাদেশ।
ক্রিকেটে ‘বডি ল্যাঙ্গুয়েজ’ একটা বড় বিষয়! শ্রীলঙ্কার মাটিতে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের চেহারা দেখে মনে হচ্ছিল যেন তাদের জোর করে খেলতে পাঠানো হয়েছে। অবশ্য আড়াই মাসের ইউরোপ সফরের পর পরই কেন ক্রিকেটারদের তীব্র গরমের মধ্যে পাঠিয়ে দিতে হবে তা নিয়েও কথা উঠতে পারে। কারণ এবারের বিশ্বকাপে অনেক বেশি ট্রাভেল করতে হয়েছে খেলোয়াড়দের। তামিমরা যে ভীষণ ক্লান্ত তা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। স্বতঃস্ফূর্ত থাকতে না পারলে কি আর সেরা খেলাটা দেওয়া সম্ভব!
কিন্তু এটাও তো ঠিক যে, সব রকম পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে হয় আন্তর্জাতিক ম্যাচে খেলা ক্রিকেটারদের।
যে কোনো খেলায় হার-জিত থাকবেই। তাই বলে শ্রীলঙ্কার কাছে এভাবে হারাটা কি শোভা পায় টাইগারদের? ব্যাটসম্যানরা যাচ্ছেতাই ব্যাটিং করছেন। কারও কারও আউটের ধরন দেখে মনে হবে যেন উইকেটটা উপহার দিতেই বাইশগজে যাওয়া। ফিল্ডিং তো বরাবরের মতোই বাজে। হাত থেকে ক্যাচ পড়ে যাচ্ছে। বাই রান হচ্ছে বেশি। যেখানে সিঙ্গেল হওয়ার কথা সেখানে ডাবল রান হয়ে যাচ্ছে। আবার মিস ফিল্ডিংয়ের কারণে বাউন্ডারি হচ্ছে। বোলিংয়ে লাইনলেন্থ নেই। দেখা যাচ্ছে, স্পিনারের বলও পিচের মাঝখানে পড়ছে। ক্রিকেটাররা যে দেশের হয়ে খেলছেন, এক কথা যেন তারা ভুলেই যান মাঝে মাঝে!
টেস্ট কিংবা টি-২০-তে যেমনই হোক ওয়ানডে নিয়েই টাইগারদের ছিল আশা। বাংলাদেশ এখন এশিয়ার দ্বিতীয় সেরা দল! তাই কি? কিন্তু শেষ চার ওয়ানডেতে বাংলাদেশ চারবার হেরে গেল এশিয়ার তিন দলের বিরুদ্ধে। সব শেষ এশিয়া কাপে রানার্সআপ হলেও এখন কি দ্বিতীয় সেরা বলার উপায় আছে!
শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচ আগামীকাল। তামিমরা পারবেন পরাজয়ের বৃত্ত ভাঙতে? জিততে না পারলে যে আরও বড় লজ্জায় পড়ে যাবেন টাইগাররা। তখন কিন্তু এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে, ক্রিকেট খেলা কি ভুলে যাচ্ছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা? লেখক – মেজবাহ্-উল-হক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।