জুমবাংলা ডেস্ক : ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গীতে ছয়মাস আগে শাম্মী জন্ম নেয় এক দরিদ্র পরিবারে। ছয় সদস্যের অভাবের সংসারে ছয় মাস বয়সী শিশুকন্যা শাম্মীকে দত্তক ও স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে গেলে এলাকাবাসীর পরামর্শে শাম্মীকে আবার বাড়ি ফেরত নিয়ে আসেন বাবা মতিউর রহমান (৪৫)। তিনি ওই উপজেলার বড় পলাশবাড়ি ইউনিয়নের জিয়াবাড়ি দক্ষিণ দুয়ারী গ্রামের বাসিন্দা।
মতিউর রহমান একজন দিনমজুর। মাঠে কাজ করে যা আয় করেন তা দিয়ে কোন মতে সংসার চললেও তিন মেয়ের লেখাপড়ার খরচ ও শিশুকন্যার খরচ জোগাতে হিমশিম খান তিনি। তাই বাধ্য হয়ে তার শিশুকন্যাকে বিক্রি ও দত্তক দেয়ার উদ্দেশ্যে সম্প্রতি নিয়ে যান স্থানীয় এক বাজারে। পরে স্থানীয়রা তাকে বাড়িতে ফেরত পাঠান।
জানা যায়, ২৫ বছর আগে মতিউর রহমানের সঙ্গে নাজমা বেগমের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পরে তাদের সংসারে জন্ম নেয় এক কন্যা সন্তান। এভাবে ছেলে সন্তানের আশায় তাদের সংসারে জন্ম নেয় চার কন্যা। এখন সেই চার কন্যা সন্তানসহ মোট ছয় জনের সংসার চালাতে হিমশিম খান তিনি। তাই বাধ্য হয়ে ছয় মাসের শাম্মীকে বিক্রি ও দত্তক দেয়ার জন্য বাজারে নিয়ে যান তিনি।
প্রতিবেশীরা বলেন, মতি খুবই গরিব। চার সন্তানকে নিয়ে কষ্টে দিন পার করছেন। এক বেলা খেলে আরেক বেলা না খেয়ে থাকতে হয়। সারাদিন কাজ করে যা পায় তা দিয়ে সংসার চলে না। কোন জমি-জায়গা নাই যে চাষাবাদ করে খাবে। ছোট মেয়েটার খাবারও ঠিকমতো কিনতে পারছেন না। অনেক সময় তারা না খেয়ে থাকেন। এমতাবস্থায় সরকারীভাবে যদি তারা সহযোগিতা পায় তাহলে হয়তো মতি তার মেয়েদের নিয়ে সংসার চালাতে পারবেন নয়তো তার সন্তানকে দত্তক দিতে বাধ্য হবেন বলে জানান।
মতিউর রহমান বলেন, দিনমজুরি দিয়ে যা আয় হয় সেটা দিয়ে তিন বেলার খাবারই জোটে না।
তাই আমার ছোট মেয়েকে বিক্রি ও দত্তক দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু এলাকার লোকজন আমাকে বাড়িতে নিয়ে আসে। সরকার থেকে যদি আমাকে কিছু সহযোগিতা করা হয় তাহলে হয়তো আমি আমার চার কন্যা সন্তানকে নিয়ে সংসার চালিয়ে যেতে পারব।
স্ত্রী নাজমা বেগম বলেন, আমার স্বামীর তেমন আয় রোজগার না থাকায় সংসার চালানো যায় না। তার ওপর একটা মেয়ে নবম শ্রেণীতে পড়ছে। কিছুদিন পর তাকে বিয়ে দিতে হবে। বিয়ে দিতেও টাকা পয়সা লাগবে। আমাদের কোন সম্পদ নেই যে সেগুলো বিক্রি করে মেয়েদের পড়াশোনা করিয়ে বিয়ে দেব। তাই আমার স্বামী ছয় মাসের সন্তানকে মানুষের কাছে দত্তক দেয়ার জন্য বাজারে নিয়ে গিয়েছিল। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জানান, দরিদ্র মতির সংসারের অভাব অনটনের কথা আমি জানি না।
শুনেছি সে অভাবের তাড়নায় সন্তানকে বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তাকে সামাজিক বেষ্টনীর আওতায় সহযোগিতা করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।