জুমবাংলা ডেস্ক: খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি নেতাদের দাবির প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে বাড়িতে থাকার অনুমতি দিয়ে এবং দেশের সর্বোত্তম চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ দিয়ে তাঁরা সর্বোচ্চ সহানুভূতি দেখিয়েছেন।’
তিনি আজ অপরাহ্নে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের ৪৯ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে এই মন্তব্য করেন।
গণভবন থেকে তিনি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে (কেআইবি) আয়োজিত আলোচনা সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
জিয়ার পদাংক অনুসরণ করে জাতির পিতার খুনীদের পুরস্কৃত করা এবং যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসনে খালেদা জিয়ার উদ্যোগ এবং তার রূঢ় ও অমানবিক আচরণের খতিয়ান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি বিএনপি নেতাদের জিজ্ঞাসা করি তারা যে সহানুভূতি দেখাতে বলে, সহযোগিতা চায় খালেদা জিয়া কি আচরণ করেছে?’
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, তার আগে খালেদা জিয়ার বক্তব্য ছিল- ‘শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীতো দূরের কথা, কোনদিন বিরোধী দলের নেতাও হতে পারবেনা এবং আওয়ামী লীগ ১শ’ বছরেও ক্ষমতায় যেতে পারবেনা।’
আল্লাহর কুদরত বোঝা ভার, যে কারণে খালেদা জিয়া আর প্রধানমন্ত্রী বা বিরোধী দলের নেতাও হতে পারেনি। এটা তার ওপরই ফলে গেছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারপরেও সে যখন অসুস্থ, আন্তর্জাতিক সংস্থার তদন্তে সে এবং তার ছেলে দুর্ণীতিগ্রস্থ হিসেবে চিহ্নিত, গ্যাটকো’ এবং নাইকো’র মামলা তার বিরুদ্ধে এবং এতিমের টাকা আত্মসাতের মত দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত এবং সে কারাগারে ছিল।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বড় বোন, বোনের স্বামী এবং ভাই তাঁর কাছে এসেছিল। তারা আসায় তিনি তখন তাঁর নির্বাহী ক্ষমতাবলে যতটুকু করতে পারেন সে অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে সাজা স্থগিত করে বাড়িতে থাকার এবং চিকিৎসার অনুমতি প্রদান করেন। সে সময় শেখ রেহানাও তাঁর সঙ্গে ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বাংলাদেশে সবথেকে দামী যে হাসপাতাল, সব থেকে ব্যয়বহুল সেখানেই খালেদা জিয়ার চিকিৎসা হচ্ছে। আর তারেকের স্ত্রীও তো ডাক্তার, শুনেছি সে নাকি অনলাইনে শাশুড়িকে দেখে।
তারপরেও ১৫ আগস্ট সে জন্মদিন পালন করে অথচ জিয়ার সঙ্গে তার ম্যারেজ সার্টিফিকেট কিংবা প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হবার পর পাসপোর্টেও যে জন্ম তারিখ বা খালেদা জিয়ার মা’য়ের বিবৃতি অনুযায়ীও জন্মতারিখটা ১৫ আগস্ট নয়। তার ৪/৫টা জন্ম তারিখ রয়েছে এবং জন্মসাল নিয়েও বিভ্রান্তি রয়েছে, বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৫ আগস্ট কেক কেটে জন্মদিন করার অর্থটা কি সেদিন আমরা যারা বাবা, মা-ভাইসহ আপনজন হারিয়েছি তাদেরকে কষ্ট দেওয়া। তাহলে আমার কাছে আর কত আশা করে তারা কিভাবে আশা করে, সেটাই আমার প্রশ্ন।’
’৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর দেড় মাসের মধ্যে ৩০ মার্চ গণঅন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করার কথাও স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। পরে ১২ জুন নির্বাচনের সময়ও একটি ক্যু’র ষড়যন্ত্র আওয়ামী লীগ সরকার ঠেকিয়ে দেয় বলেও উল্লেখ করেন।
২০০১ সালে গ্যাস বিক্রীর মুচলেখা দিয়েই এই খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে দেয়নি। তারা ক্ষমতায় এসেই আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী এবং সংখ্যালঘুদের ওপর অকথ্য নির্যাতন, নিপীড়ন, হত্যা- গুম, নারীদের ওপর পাশবিক অত্যাচার এবং জেল-জুলুম এবং সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ এবং বাংলা ভাই সৃষ্টির প্রসংগও টেনে আনেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, সাবেক সেনাপ্রধান অসুস্থ জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমানকে সিএমএইচ-এ চিকিৎসা পর্যন্ত করতে দেয়নি বিএনপি সরকার। তাকে আইসিইউ থেকে ষ্ট্রেচারে কোর্টে নিয়ে একটি মামলার জন্য হাজির করা হয়। এমনকি তাঁর প্রমোশন ও বাতিল করে দেয়। সেনাবাহিনীর নারী সৈনিক হিসেবে প্রথম ব্যাচে এই জেনারেল মোস্তাফিজের ছোট মেয়ে প্রমোশন লাভ করে। কিন্তু নিয়ম থাকলেও তাঁর মা-বাবাকে এই খালেদা জিয়া সরকার পাসিং আউট প্যারেডে উপস্থিত থাকতে দেয়নি। এই হচ্ছে খালেদা জিয়া। আর এরশাদকে কারাগারে বন্দি রেখেছে কোনদিন চিকিৎসার সুযোগ দেয়নি। রওশন এরশাদকেও দেয়নি।
তিনি বলেন, জিয়া নিজেও সাজেদা চৌধুরীকে অপারেশনে অসুস্থ ব্যান্ডেজ নিয়ে কারাাগারে পাঠায়, মতিয়া চৌধুরীর টিবি হলেও তাঁকে কারাগার রেহাই দেয়নি।
অন্যদিকে, এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে দোষী সাব্যস্ত খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার পাশাপাশি কেবল প্রতিহিংসার বশবর্তী ১৫ আগষ্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার দিনে জন্মদিন না হওয়া সত্বেও কেবল কষ্ট দেওয়ার জন্য জন্মদিন পালনের মত অমানবিক অপরাধের অভিযোগও রয়েছে।
তিনি বিএনপি নেতাদের প্রশ্ন করেন, ‘তারা আমাদের কাছে কী আশা করছে? আমরা তাকে বাড়িতে থাকতে এবং দেশের সেরা হাসপাতালে অবাধে চিকিৎসা নিতে দিয়েছি। এটা কি যথেষ্ট নয়? এটা কি বিরাট উদারতা নয়? আমরা এটা (উদারতা) দেখিয়েছি।’
অসাম্প্রদায়িক, জ্ঞান ও বিজ্ঞানভিত্তিক প্রগতিশীল সমাজ গঠনের লক্ষ্যে দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতির পিতার আদর্শে তরুণ প্রজন্মকে প্রস্তুত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে যুবলীগকে অগ্রণী ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তরুণ প্রজন্মকে ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওযার লক্ষ্যে প্রস্তুত করতে চাই।’
যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ’র সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সাবেক যুব নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক বক্তৃতা করেন।
সাবেক যুবলীগ নেতৃবৃন্দের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আযম এমপি এবং হারুনুর রশিদ বক্তৃতা করেন।
যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মইনুল হোসেন খান নিখিল সভাটি সঞ্চালনা করেন।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা জানিয়ে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের ভিডিও বার্তাও প্রচার করা হয়। এদের মধ্যে রয়েছেন, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান, ডিবিসি নিউজ এর প্রধান সম্পাদক ও প্রধান নির্বাহী মঞ্জুরুল ইসলাম, দৈনিক সমকাল পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক মুস্তাফিজ শফি এবং বিশিষ্ট বাউল শিল্পী শফি মন্ডল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।