জুমবাংলা ডেস্ক: র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে খুলনার রূপসা উপজেলার শীর্ষ সন্ত্রাসী ও নৈহাটি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ওরফে মিনা কামাল ওরফে ফাটাকেষ্ট (৫৫) নিহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার ভোরে বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিকট খুলনা-মোংলা মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী ভেকুটিমারি স্থানে এই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। নিহত মিনা কামাল রূপসা উপজেলার বাগমারা গ্রামের মৃত মৌলভী মিনাজউদ্দিনের ছেলে ও খুলনা জেলা পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৬ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রওশনুল ফিরোজ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার ভোর পৌঁনে ৫টার দিকে র্যাবের সদস্যরা রামপাল উপজেলার ভেকুটিমারি এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় মিনা কামালের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা র্যাব সদস্যদের উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার্থে র্যাব সদস্যরাও পাল্টা গুলি চালায়। এক পর্যায়ে সন্ত্রাসী মিনা কামাল গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তার সহযোগিরা পালিয়ে যায়। দুই পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিমিয় চলাকালে র্যাবের দুই সদস্য আহত হন। পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মিনা কামালকে উদ্ধার করে রামপাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি জানান, ঘটনাস্থল থেকে পিস্তল, গুলি, ছুরি ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। সন্ত্রাসী মিনা কামালের বিরুদ্ধে হত্যাসহ ২৫টি মামলা রয়েছে।
রামপাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, ময়নাতদন্তের জন্য মিনা কামালের লাশ বাগেরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
রূপসা থানার ওসি মোল্লা জাকির হোসেন জানান, মিনা কামালের বিরুদ্ধে খুলনা ও বাগেরহাট জেলাসহ বিভিন্ন থানায় হত্যাসহ অন্তত ১৫ থেকে ২০টি বিচারাধীন মামলা রয়েছে।
এদিকে স্থানীয় সূত্র ও রূপসা থানা পুলিশ জানায়, রূপসা উপজেলার ভয়ঙ্কর খুনি সন্ত্রাসী মোস্তফা কামাল ওরফে মিনা কামাল। তার হিংস্রতা খুলনার কুখ্যাত খুনি এরশাদ শিকদারকেও হার মানিয়েছে। রূপসার আলোচিত সারজিল ইসলাম সংগ্রামসহ ৯টি হত্যা, ধর্ষণ, জমি দখল, নির্যাতনসহ ২৫টির বেশি মামলা ও শতাধিক জিডি রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বাগমারা গ্রামের নিজ বাড়িতে বিচারালয়ের নামে টর্চার সেল বসিয়েছিলেন। সেখানে শালিসের নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের জন্য চালানো হতো অবর্ণনীয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। বিচারের নামে হাতুড়িপেটা করে অনেকের হাত-পা ও পাঁজরের হাড় ভেঙে চিরতরে পঙ্গু করে দেওয়া হতো। থেঁতলে দেওয়া হতো শরীরের স্পর্শকাতর স্থান। এসব অপকর্মে লিপ্ত ছিল তার সহযোগীসহ অন্তত ২০ জনের সশস্ত্র বাহিনী।
মিনা কামাল ও তার বাহিনীর হাতে গত ১০ বছরে দুই শতাধিক মানুষ নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ভয়ে-আতঙ্কে সহায়সম্বল রেখে অন্যত্র পালিয়ে গেছে কয়েকশ পরিবার। মিনা কামালের সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে জিম্মি ছিল রূপসা উপজেলার অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। দখল, চাঁদাবাজি, অস্ত্র ও মাদক বাণিজ্য করে গড়ে তুলেছেন ইট ভাটাসহ বিপুল অর্থ-সম্পদ। বিশেষ করে রূপসার হিমায়িত মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানার মালিক ও চিংড়ি ব্যবসায়ীরা ছিল তার প্রধান টার্গেট। তাকে চাঁদা না দিয়ে রূপসায় ব্যবসা করা এবং টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরা ছিল কারো পক্ষে অসম্ভব ব্যাপার। এছাড়া চুক্তিতে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। দলীয় কোনো পদ-পদবি না থাকলেও নিজেকে যুবলীগ নেতা দাবি করতেন মিনা কামাল। তার অত্যাচার-নির্যাতনের ভয়াবহতা দেখে স্থানীয়রা তাকে ‘ফাটাকেষ্ট’ নামে ডাকতেন।
সূত্র: ইত্তেফাক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।