খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এখন এক সংকটময় পর্যায়ে পৌঁছেছে। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদকে অপসারণের দাবিতে তারা দিয়েছেন ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম। দাবি পূরণ না হলে ঘোষণা এসেছে আমরণ অনশনের। সম্প্রতি কুয়েট ক্যাম্পাসে সংঘর্ষ, বহিষ্কার, নিরাপত্তার অভাব, প্রশাসনের ব্যর্থতা এবং ছাত্র রাজনীতি ঘিরে সৃষ্টি হওয়া পরিস্থিতি শিক্ষার্থীদের ধৈর্য্যের সীমা অতিক্রম করেছে। দেশের অন্যতম প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সংকট শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, পুরো দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার একটি বড় প্রশ্নবিদ্ধ চিত্র তুলে ধরেছে।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে একটি সুনির্দিষ্ট দাবির পক্ষে আন্দোলন করে আসছেন। মূলত ১৮ ফেব্রুয়ারির একটি সংঘর্ষের ঘটনা থেকেই এই আন্দোলনের সূত্রপাত। ছাত্রদলের নেতাকর্মী ও বহিরাগতদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা হামলার অভিযোগ তোলেন। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনার কোনো সুরাহা হয়নি, বরং পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলা হয়। ২২ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা, ৩৭ জনকে বহিষ্কার, হল বন্ধ ঘোষণা – এসব সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা এখন বলছেন, তাদের আর কিছু হারানোর নেই।
Table of Contents
এই আন্দোলনের মূল দাবির মধ্যে রয়েছে উপাচার্যের পদত্যাগ, ছাত্র রাজনীতি বন্ধ, হামলাকারীদের শাস্তি নিশ্চিতকরণ, হল খুলে দেওয়া এবং শিক্ষা কার্যক্রম পুনরায় চালু করা। এসব দাবিকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা দেশব্যাপী একাত্মতা প্রকাশের পাশাপাশি প্রশাসনের ওপর চাপ বাড়াচ্ছেন। Wikipedia-এর তথ্যমতে, কুয়েট বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ প্রকৌশল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যেখানে শিক্ষার মান এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে কোনো ধরনের অব্যবস্থা স্বাভাবিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
ক্যাম্পাসে অচলাবস্থার কারণ ও শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
১৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনার পরপরই শিক্ষার্থীরা একযোগে ক্যাম্পাসে তালা লাগান এবং রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধের দাবি তোলেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের দাবি মানার বদলে একের পর এক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে থাকেন যা আন্দোলনকারীদের আরও উসকে দেয়। বিশেষ করে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত, হল বন্ধ, পানি-ওয়াইফাই কেটে দেওয়া এবং তদন্ত কমিটির একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ করে তোলে।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনায় প্রশাসন আগ্রহ দেখায়নি। বরং প্রশাসন যেন তাদের ন্যায্য আন্দোলনকে দমন করার চেষ্টা করেছে। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের, তদন্ত কমিটির পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ, এবং হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অন্য একটি প্রতিবেদনে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
হল খোলা, বহিষ্কার এবং নতুন সিদ্ধান্ত
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) কর্তৃপক্ষ ২৫ ফেব্রুয়ারিতে এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও আবাসিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে। শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। পরবর্তীতে ১৩ এপ্রিল শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে আন্দোলন শুরু করেন এবং হল খোলার দাবি জানান। ১৫ এপ্রিল রাতে সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার, ২ মে হল খোলা এবং ৪ মে থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়।
তবে এই সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের কোনো সন্তুষ্টি আনতে পারেনি। তারা মনে করেন, যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সত্যিকারের তদন্ত হয়নি। বরং আন্দোলন দমন করতেই এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এমনকি ঈদের পরে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে না ঢুকতে দেওয়ার বিষয়টি শিক্ষার্থীদের আরও ক্ষুব্ধ করে তোলে। ফলে তারা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষাপট ও প্রশাসনের ব্যর্থতা
শিক্ষার্থীরা জানান, তারা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আসতে চেয়েছিলেন। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সে ধরনের উদ্যোগ দেখা যায়নি। বরং তারা বলছেন, নানাভাবে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দমন করার চেষ্টা করেছে। এই রিপোর্টে রংপুরের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কথাও উঠে এসেছে, যা কুয়েটের আন্দোলনের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
পরবর্তী পদক্ষেপ ও সম্ভাব্য ফলাফল
যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উপাচার্য পদত্যাগ না করেন, তাহলে শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশনের পথে হাটবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এটি দেশের শিক্ষাজগতে একটি গুরুতর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। প্রশাসনের উচিত এখনই যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে আলোচনায় বসা। অন্যথায়, আন্দোলন আরও ব্যাপক হতে পারে এবং জাতীয় পর্যায়েও এর প্রভাব পড়তে পারে।
FAQs
কেন কুয়েটের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন?
১৮ ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষ এবং প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক পদক্ষেপের প্রতিবাদে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। তাদের মূল দাবি উপাচার্যের পদত্যাগ ও ছাত্র রাজনীতি বন্ধ।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো কী কী?
প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে উপাচার্যের পদত্যাগ, হল খোলা, শিক্ষা কার্যক্রম চালু, হামলাকারীদের শাস্তি এবং ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা।
উপাচার্য এখনও পদত্যাগ করেছেন কি?
না, এখন পর্যন্ত কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ পদত্যাগ করেননি।
শিক্ষার্থীরা পরবর্তী কী পদক্ষেপ নিতে পারেন?
তারা ঘোষণা দিয়েছেন, দাবি পূরণ না হলে ২১ এপ্রিল দুপুর ৩টা থেকে আমরণ অনশন শুরু করবেন।
এই আন্দোলনের প্রভাব কী হতে পারে?
যদি দাবি মানা না হয়, তাহলে কুয়েটের শিক্ষাব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়তে পারে এবং বিষয়টি জাতীয়ভাবে আলোচিত হতে পারে।
কোন বিভাগ ও ব্যাচের শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন?
ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।