জুমবাংলা ডেস্ক: অতীতে গ্রাম-বাংলায় সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে শিয়ালের হুক্কাহুয়া আর কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দে জন জীবন ছিল অতিষ্ঠ। ছিল ভয়ে গা ছম ছম করা পরিবেশ। তখন দাদি-নানিরা তার নাতি-নাতনিদের ঘুম পাড়ানোর সময় খেঁকশিয়ালের গল্প শোনাতেন। সেই গল্পের চরিত্রে শিয়াল ছিল বাঙালির ‘পণ্ডিত’। গৃহপালিত না হলেও ‘শিয়াল পণ্ডিতের’ সঙ্গে যেন বাঙালির ছিল খুব পরিচিত ব্যাপার-স্যাপার। কিন্তু নানা কারণে এই প্রাণীটি আজ বিলুপ্তির পথে। গ্রামে-গঞ্জে গাছপালা কেটে গড়ে উঠেছে আধুনিক স্থাপনাসহ বহুতল ভবন। ঝোপঝাড় বিলীন হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খেঁকশিয়ালের দলও যেন দৌড়ে পালিয়ে গেছে গ্রাম-গঞ্জ থেকে। তা ছাড়া কৃষি উৎপাদনে বিভিন্ন সার, কীটনাশক ব্যবহারের ফলে তাদের খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। ফলে শিয়াল এখন আর বংশবৃদ্ধিও করতে পারছে না।
জানা যায়, দুই প্রজাতির শিয়ালের মধ্যে পাতি শিয়াল অনেক কষ্টে টিকে থাকলেও খেঁকশিয়াল বিপন্ন হয়ে পড়েছে। উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলায় খেঁকশিয়ালের দেখা মিললেও তা একেবারেই নগণ্য। সম্প্রতি জঙ্গল উজাড় হওয়ায় বিভিন্ন কবরস্থানের সবুজ ঘাস বিছানো মাটিতে গর্ত করে খেঁকশিয়াল নিজেদের নিরাপদ আবাসস্থল বানিয়েছে।
জেলার কামারখন্দ, তাড়াশ, রায়গঞ্জ, কাজিপুর, উল্লাপাড়া উপজেলার বেশ কয়েকটি কবরস্থানে বিপন্ন প্রজাতির খেঁকশিয়ালের দেখা যায় কিন্তু কুকুরের ভয়ে হুক্কাহুয়া ডাক প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। শিয়াল ইঁদুর এবং সুযোগ পেলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকের ছাগলের বাচ্চাও খেয়ে ফেলে। শিয়াল মানেই হাঁস-মুরগি নিয়ে ছুটে পালানো এক নিশাচর প্রাণী। এ প্রাণী থেকে নিজেদের হাঁস-মুরগি বাঁচাতে অতীতে অনেক মানুষ রাত জেগে পাহারা দিত।
তাড়াশ উপজেলার শিক্ষক ফরিদ উদ্দীন জানান, এখানকার কবরস্থানে মাঝে মাঝে উপজেলায় বসবাসকারী সাঁওতালরা শিয়াল শিকার করতে আসে। কিন্তু আমরা তাদের শিকার করতে দেই না। কামারখন্দের জামতৈল ইউনিয়নের কর্ণসুতি গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জনৈক শিক্ষক বলেন, শিয়াল আগে খুব দেখা যেত। রাতের বেলা তাদের ডাক শুনতে ভালোই লাগত। এখন বন, ঝোপঝাড় উজাড় হওয়ায় খুব একটা চোখে পড়ে না। ইদানীং কবরস্থানগুলোতে কিছু কিছু খেঁকশিয়াল দেখা যাচ্ছে। সন্ধ্যা নামলেই শুরু হয় শিয়ালের হাঁকডাক। যা আমাদের অতীতকে স্মরণ করে দেয়। অনেক সময় ক্ষুধার জালায় লোকালয়ে ঢুকে পড়ে শিয়াল। খাদ্য সংগ্রহে বাধা দিলে শিয়ালের কামড়ে আহত হয় গ্রামের মানুষ। সম্প্রতি এমন ঘটনা মাঝে মধ্যেই ঘটছে।
প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের বেশিরভাগ শিয়ালই পাতি শিয়াল ও ছোট আকারের খেঁকশিয়াল প্রজাতির, যা দেখতে অনেকটা দেশি কুকুরের মতো, গায়ের লোম বাদামি এবং লেজ কালো।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গৌরাঙ্গ কুমার তালুকদার বলেন, ‘শিয়ালের বাঁচার উপযুক্ত পরিবেশ যদি থাকত, তাহলে সে লোকালয়ে আসত না। কারণ মানুষ তার খাবার নয়। শিয়াল বরং ইঁদুর, পোকামাকড়, মৃত প্রাণী, পচা-গলা এক কথায় সব ধরনের খাবার খেয়ে পরিবেশকে ভালো রাখে। তাই এই পরিবেশে ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় শিয়াল প্রকৃতি ও মানুষের জন্য উপকারী প্রাণী।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।