জুমবাংলা ডেস্ক : বিশ্বজুড়ে ফিলিস্তিনিদের ওপর দখলদার ইসরায়েলের নির্মম আক্রমণের দৃশ্য এখন আর কারও চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে না। প্রতিটি মুহূর্তে গণমাধ্যমে উঠে আসছে গাজায় রক্তাক্ত শিশু, ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া পরিবার কিংবা আশ্রয়হীন মানুষের করুণ আর্তনাদ। এই মানবিক বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত সোচ্চার হয়ে উঠছে বিশ্ব। এই প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর তুলেছে বাংলাদেশও—সরকার থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, কেউই পিছিয়ে নেই।
Table of Contents
বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও জনগণের এই সজাগ অবস্থান বিশ্ব গণমাধ্যমের চোখে বাংলাদেশকে এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্যবিষয় করে তুলেছে। বিশেষত ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলোতে বারবার উঠে আসছে বাংলাদেশের নাম। এই পরিস্থিতি অনুধাবন করতে গেলে আমাদের জানতে হবে কেন ইসরায়েলি গণমাধ্যমে এত ঘন ঘন উচ্চারিত হচ্ছে বাংলাদেশের নাম এবং এর পেছনে কী কারণ ও প্রভাব কাজ করছে।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমে বাংলাদেশের নাম উঠে আসার কারণ
বর্তমানে ইসরায়েলি গণমাধ্যমে বাংলাদেশের নাম যে ঘন ঘন উঠে আসছে, তা একেবারে আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়। বরং এটি বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের নীতিগত অবস্থানেরই প্রতিফলন। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকেই ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এমনকি জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামেও বারবার বাংলাদেশ ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এই অবস্থানের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে দেশের অভ্যন্তরীণ গণজাগরণেও, যা বিশ্ব গণমাধ্যম বিশেষ করে ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যমে গুরুত্ব পাচ্ছে।
সম্প্রতি ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছে লাখ লাখ বাংলাদেশি। রাজধানী ঢাকার এই জনসমুদ্র আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে আলোড়ন তোলে। টাইমস অব ইসরায়েল-এর প্রতিবেদন অনুসারে, এই কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও তাঁর মিত্রদের ছবি ভাঙচুর করা হয়, এবং “ফ্রি ফ্রি ফিলিস্তিন” স্লোগান ধ্বনিত হয়। এই প্রতিবাদের দৃশ্য শুধু রাজনৈতিক বার্তা নয়, বরং মানবিক অবস্থানের দৃষ্টান্তও তুলে ধরে।
বাংলাদেশের পাসপোর্টে ‘ইসরায়েল বাদে অন্যান্য দেশে বৈধ’ এই বাক্যটি আবার ফিরিয়ে আনার ঘটনাও ইসরায়েলি গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়। এ বিষয়ে টাইমস অব ইসরায়েল তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, মুসলিমপ্রধান বাংলাদেশ ইসরায়েলকে কখনোই স্বীকৃতি দেয়নি এবং জনগণ থেকে সরকার পর্যন্ত এই বিষয়ে অত্যন্ত দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের সরকারের প্রতিনিধিদের বক্তব্য, ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিবৃতি এবং বাংলাদেশি নাগরিকদের সোচ্চার অংশগ্রহণ—সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ এখন ইসরায়েলি মিডিয়ার আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে।
বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও জনমতের ভূমিকা
বাংলাদেশের গণমাধ্যম দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক বিষয়ে সচেতন ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশেষ করে মানবিক সংকট ও নিপীড়নের ঘটনায় সংবাদমাধ্যমের সংবেদনশীলতা ব্যাপক। ফিলিস্তিনের ইস্যুতেও গণমাধ্যম ব্যতিক্রম নয়। প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক এবং অনলাইন সংবাদমাধ্যমগুলো প্রতিনিয়ত ফিলিস্তিনে ঘটে চলা নির্যাতনের খবর প্রকাশ করছে। এমনকি ইনিউজ.জুমবাংলা সহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন নিয়মিতভাবে প্রকাশ পাচ্ছে।
জনগণের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করতে এই সংবাদমাধ্যমগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সাংবাদিকরা নিয়মিতভাবে তথ্য, ছবি ও ভিডিও শেয়ার করে চলেছেন, যা লাখো মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে। এর ফলে জনমত আরও সংহত ও শক্তিশালী হচ্ছে।
এছাড়া সামাজিক আন্দোলন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানববন্ধন, সাংস্কৃতিক কর্মসূচি ও বুদ্ধিজীবীদের বিবৃতির মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ একটি নির্যাতিত জাতির পাশে দাঁড়ানোর মানবিক দায়িত্ব পালন করছে। গণমাধ্যম এইসব খবর প্রচার করে জনগণকে শুধু তথ্য দেয় না, বরং একটা মানবিক বিবেকও গড়ে তোলে।
বিশ্বব্যাপী যখন বিভ্রান্তিমূলক প্রচার চালানো হয়, তখন বাংলাদেশের মিডিয়া সত্য তুলে ধরতে পিছপা হয় না। এই প্রবণতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের একটি সম্মানজনক অবস্থান তৈরি করছে। ফলে ইসরায়েলি মিডিয়ায় বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হওয়া নিছক সমালোচনার বিষয় নয়, বরং এটি বাংলাদেশের নীতিকথার শক্তি এবং মানবিক অবস্থানের প্রমাণ।
ইসরায়েল-বাংলাদেশ সম্পর্ক: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের মানবিক অবস্থান
পাসপোর্ট নীতিতে পরিবর্তন: কূটনৈতিক বার্তা
‘মার্চ ফর গাজা’: গণআন্দোলনের আন্তর্জাতিক প্রতিফলন
মুসলিম বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও নেতৃত্ব
ইসরায়েলি গণমাধ্যমে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে আমাদের ভাবনা
গণমাধ্যম যখন একটি দেশের অবস্থান ও নীতিকে আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরে, তখন সেটি শুধু সংবাদ নয়, হয়ে ওঠে কূটনৈতিক ভাষা। বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও জনগণের ফিলিস্তিনপ্রীতি এবং মানবিকতার জায়গা থেকে যে ভূমিকা সেটি এখন ইসরায়েলি গণমাধ্যমেও প্রতিফলিত হচ্ছে। এই প্রবণতা চলমান থাকলে বাংলাদেশ আরও বেশি বৈশ্বিক সমর্থন ও সম্মান অর্জন করতে পারবে।
আরও পড়ুন: দেশ থেকে অমঙ্গল দূর হয়ে গেছে: প্রেস সচিব
❓FAQs
১. কেন বাংলাদেশের নাম ইসরায়েলি গণমাধ্যমে এত বেশি আসছে?
কারণ বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের পক্ষে নির্ভীকভাবে অবস্থান নিয়েছে, যা ইসরায়েলি মিডিয়ার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। পাশাপাশি জনমত, প্রতিবাদ ও কূটনৈতিক নীতিও ভূমিকা রাখছে।
২. বাংলাদেশ কখনো কি ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে?
না, বাংলাদেশ কখনোই ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়নি এবং এই বিষয়ে সরকারি নীতিও বরাবরই কঠোর।
৩. পাসপোর্টে ‘এক্সসেপ্ট ইসরায়েল’ নীতির তাৎপর্য কী?
এই নীতি অনুযায়ী বাংলাদেশি নাগরিকরা ইসরায়েলে ভ্রমণ করতে পারেন না। এটি বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও নীতিগত অবস্থানকে নির্দেশ করে।
৪. ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচির আন্তর্জাতিক প্রভাব কী?
এই কর্মসূচি আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে ব্যাপক কভারেজ পেয়েছে এবং এতে বাংলাদেশের মানবিক অবস্থান স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
৫. গণমাধ্যম ফিলিস্তিন ইস্যুতে কী ভূমিকা রাখছে?
গণমাধ্যম জনসচেতনতা তৈরি, তথ্য প্রকাশ ও জনমত গঠনে বড় ভূমিকা রাখছে, যা দেশের নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।