গণিতে অনেক মজার খেলা আছে। গণিতের জাদু বলতে পারেন। কিন্তু জাদু বলে তো আর কিছু হয় না। সবই বিজ্ঞানের খেলা। আর হাতের কৌশল। কিন্তু গণিতের জাদুতে হাতের কৌশলের কোনো ব্যবহার নেই। মাথা খাটিয়ে জাদু তৈরি করে নিতে হয়। সেরকম একটা জাদু নিয়েই এ আলোচনা। এ জন্য শুধু একটা খাতা আর কলম লাগবে। দ্রুত জাদু দেখতে চাইলে ক্যালকুলেটরও ব্যবহার করতে পারেন।
যেহেতু এই লেখার শিরোনাম ‘প্রশ্ন জানার আগেই উত্তর দেবেন যেভাবে’, তাই শুরুতে উত্তরটা লিখে নিই। উত্তর হলো ২৫৪৫৭৬৭। আপনাদের গোপন উত্তরটা বলে দিলাম। আপনারা এই উত্তরটা শুরুতে লিখে রাখবেন বটে, কিন্তু কাউকে দেখাবেন না।
উত্তর লেখা হয়ে গেল। এবার আমি ৬ অঙ্কের একটা সংখ্যা কাগজে লিখব। ধরুন, সংখ্যাটা লিখলাম: ৩৪৫৭৬৯। এখন আপনার পালা। ৬ অঙ্কের একটা সংখ্যা লিখবেন আপনি। এই জাদুটা যখন দেখাবেন, তখন আমার জায়গায় থাকবেন আপনি। তারপর দর্শকদের উদ্দেশে বলবেন, ৬ অঙ্কের একটা সংখ্যা লিখতে। এখন আমি জাদুটা আপনাকে দেখাব। তাই আপনি এখানে আমার দর্শক। পরে আমার জায়গাটা আপনি দখল করে জাদু দেখাবেন।
যাহোক, ধরে নিচ্ছি আপনি সংখ্যাটি লিখলেন ৭৬২০১৪। আমার সংখ্যার ঠিক নিচে আপনার সংখ্যাটি লিখবেন। কারণ, পরে যোগ করতে হবে। আপনার সংখ্যাটা লেখা হয়ে গেলে আমি আরও একটা ৬ অঙ্কের সংখ্যা লিখব, ঠিক আপনার সংখ্যাটির নিচে। ধরুন, সংখ্যাটি লিখলাম: ১৮৫৬৩৭। এর ঠিক নিচে আমি আরও একটা ৬ অঙ্কের সংখ্যা লিখব। লিখলাম: ৯১৪৩৬২। এবার আপনার আর একটা কাজই বাকি। এতক্ষণ যে সংখ্যাগুলো কাগজে সাজিয়ে লিখলাম, তা শুধু যোগ করতে হবে।
দেখুন তো, আপনার যোগফল ২৫৪৫৭৬৭ হয়েছে কি না? কী, অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন, আগেই লিখে রাখা উত্তরটা কীভাবে জানলাম? না না, টেলিপ্যাথির কৌশল জানা নেই আমার। আপনি কী লিখবেন, তা আমি আগে থেকে জানি না। তবে যা লিখেছেন, সেটা দেখে আমি উত্তরটা আমার মতো করে বানিয়েছি। কীভাবে বানালাম? চলুন, সেই কৌশলটা শিখিয়ে দিই।
শুরুতে ৬ অঙ্কের একটা সংখ্যা কল্পনা করবেন। সেই সংখ্যাটির ওপর নির্ভর করে উত্তরটা লিখে রাখবেন। আমি প্রথম সংখ্যাটা লিখেছিলাম ৩৪৫৭৬৯। এখন এই সংখ্যার ওপর নির্ভর করেই উত্তর তৈরি করতে হবে। এ জন্য দুটি ছোট কাজ করতে হবে। সংখ্যাটির প্রথম যে অঙ্ক, তার সঙ্গে যোগ করতে হবে ২২। আমাদের সংখ্যাটির প্রথম অঙ্ক ছিল ৩। এর সঙ্গে ২২ যোগ করলে হবে, ৩ + ২২ = ২৫। এরপর শেষ অঙ্কটি বাদ দিয়ে বাকি অঙ্কগুলো লিখে ফেলবেন। অর্থাৎ ২৫৪৫৭৬। আর শেষ অঙ্ক থেকে বিয়োগ করতে হবে ২। অর্থাৎ ৯ – ২ = ৭। তাহলে আমাদের উত্তরটা হবে: ২৫৪৫৭৬৭।
এবার আপনার বন্ধুকে একটা ৬ অঙ্কের সংখ্যা লিখতে বলবেন। এখানে যেমন আমি প্রথমে লিখেছিলাম ৩৪৫৭৬৯। এরপর ধরে নিয়েছিলাম, আপনি লিখেছেন ৭৬২০১৪। এরপর আমি একটা হিসাব করে আমার পরের সংখ্যাটা লিখেছি। সেই হিসাবটা আপনি জানতেন না।
সেটা হলো, আপনি যে সংখ্যাটা লিখবেন, আমি সেই সংখ্যাকে ১০৯৯৯৯৯ থেকে বিয়োগ করেছি। তাহলে ১০৯৯৯৯৯ – ৭৬২০১৪ = ৩৩৭৯৮৫। এই বিয়োগফলটাই কিন্তু আমি লিখেছিলাম। এরপর আবার আপনি একটা সংখ্যা লিখবেন। সেটা ছিল ১৮৫৬৩৭। আমি আবার ১০৯৯৯৯৯ থেকে ১৮৫৬৩৭ বিয়োগ করে লিখেছি ৯১৪৩৬২। ব্যস, ৫টি সংখ্যা পেয়ে গেছি। এবার এগুলো যোগ করুন। দেখবেন ঠিকই যোগফল হবে ২৫৪৫৭৬৭।
প্রশ্ন হলো, এই কৌশল কেন কাজ করে? খেয়াল করলে দেখবেন, আপনার লেখা সংখ্যাটি এবং আমার লেখা সংখ্যাটি যোগ করলে সবসময় ১০৯৯৯৯৯ সংখ্যাটি হয়। যেমন, ৭৬২০১৪ + ৩৩৭৯৮৫ = ১০৯৯৯৯৯ বা ১৮৫৬৩৭ + ৯১৪৩৬২ = ১০৯৯৯৯৯। সুতরাং, আমরা জানি ১০৯৯৯৯৯ + ১০৯৯৯৯৯ = ২১৯৯৯৯৮ হয়। অর্থাৎ ২২০০০০০ – ২ = ২১৯৯৯৯৮। এ কারণেই আমরা শুরুতে উত্তর লেখার সময় শেষ অঙ্ক থেকে ২ বিয়োগ করেছি ও প্রথম অঙ্কের সঙ্গে যোগ করেছিলাম ২২।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।