জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশের বাজারে মাশরুমের পরিচিতি থাকলেও খাদ্য হিসেবে এটি সেভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি। পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাবার হিসেবে দেশের বাজারে এটিকে জনপ্রিয় করা এবং বৈশ্বিক চাহিদা বিবেচনায় রফতানি বাজারকে মাথায় রেখে প্রায় ৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। প্রকল্পের আওতায় মাশরুমকে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের পুষ্টি নিশ্চিত করা, কর্মসংস্থান ও নতুন উদ্যোক্তা তৈরির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে মাশরুমের চাহিদা বেশি থাকায় প্রকল্পে এই অঞ্চলটিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি গতি পাচ্ছে জানিয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণের কাজ শুরু হয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রাম বিভাগে মাশরুম খাদ্য হিসেবে অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে বেশি জনপ্রিয়। তাছাড়া বন্দরকেন্দ্রিক এলাকা হওয়া এবং ব্যবসায়িক নগরী হিসেবে পরিচিতি থাকায় পুরো প্রকল্পে চট্টগ্রামকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের কাছে মাশরুমের জনপ্রিয়তা আছে। ফলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম অঞ্চলের কৃষি উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রায় শতকোটি টাকা ব্যয়ে ‘মাশরুম চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন ও দারিদ্র্য হ্রাসকরণ’ প্রকল্পটি গ্রহণ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে এটি বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। এর মেয়াদ ২০২৩-২৭ সাল পর্যন্ত ধরা হলেও প্রকল্পের কাজ এখনো সেভাবে দৃশ্যমান নয়। তবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করেছে কৃষি অধিদপ্তর। প্রকল্প এলাকা ধরা হয়েছে সাভারের মাশরুম সম্প্রসারণ ইনস্টিটিউট, সারা দেশের ৩৪টি মাশরুম উপকেন্দ্র বা হর্টিকালচার সেন্টারসহ ৬৪টি জেলার ১৬০ উপজেলা এবং ১৫টি মেট্রোপলিটন থানা এলাকাকে। কাজ শুরুতে বিলম্ব হলেও পাঁচ বছরের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই প্রকল্পটি সম্পন্ন করা হবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক আখতার জাহান কাঁকন।
পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পে মাশরুম উৎপাদনে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় প্রায় ২৫টি মাশরুমের জার্মপ্লাজম সংগ্রহের কথা বলা হয়েছে। এসব জার্মপ্লাজম বাংলাদেশে চাষাবাদ সম্ভব হবে কিনা সেজন্য গবেষণাগারে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ওপর জোর দেয়া হবে। শুধু বিদেশ থেকে মাশরুমের জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করলেই হবে না বরং এর উৎপাদন ও গুণগত মান বৃদ্ধি, পুষ্টিগুণ সঠিক মাত্রায় পাওয়া যাচ্ছে কিনা সে বিষয়ে গবেষণা করা হবে। দেশে মাশরুম উৎপাদন ও কর্মসংস্থান তৈরির জন্য ৮০০ শিল্পোদ্যোক্তা তৈরির ওপর জোর দেয়া হবে। মাশরুম পল্লী তৈরি করা হবে প্রায় আট হাজারটি। এছাড়া মাশরুম ইনস্টিটিউটের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করা হবে।
৬৪টি জেলার ২০০টি কেন্দ্রে মাশরুমের চাষাবাদের কথা বলা হলেও চট্টগ্রাম বিভাগে সর্বোচ্চ ৫০টি কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে গোল্ডেন ওয়েন্টার, মানকিহেড মাশরুম, কান মাশরুম, ইরিনজি মাশরুম, ঋষি মাশরুম, পিংক ওয়েস্টার মাশরুম, সাজুর কাজু মাশরুম, বাটন মাশরুম ইত্যাদি জাতের মাশরুম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে কৃষি অধিদপ্তর। এসব মাশরুমের বাজারে খাদ্য হিসেবে যেমন চাহিদা আছে, অন্যদিকে উৎপাদনও বেশি হয়। বাজারদর বা রফতানি মূল্যও বেশি।
প্রকল্প পরিচালক আখতার জাহান কাঁকন বলেন, দেশব্যাপী বিভিন্ন মাশরুম সেন্টারসহ সব জেলার কৃষি অফিসের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এটি দেশের নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর পুষ্টি উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে। ২০২৩ সালের শুরুতে কাজ শুরু করার কথা থাকলেও নানা কারিগরি বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজ শুরু করা হবে। মাশরুম শুধু উৎপাদনই সরকারের লক্ষ্য নয়, বরং দেশ্যবাপী বিপণনের জন্য উদ্যোক্তা তৈরিই আমাদের লক্ষ্য। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫০ উদ্যোক্তা তৈরি করতে পেরেছি। যেহেতু বিদেশে মাশরুমের ব্যাপক চাহিদা আছে সে কারণে আমরা এখন বিদেশী বায়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। দেশেও মাশরুমকে কেন্দ্র করে শিল্প-কারখানা গড়ে তোরা সম্ভব হবে। এটি নিয়ে আমাদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা রয়েছে।
মাশরুমের অধিক উৎপাদন এবং এটি লাভজনক হওয়ায় এ খাতে উদ্যোক্তা তৈরির ওপর জোর দিচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এছাড়া ইউরোপসহ অন্যান্য অঞ্লে খাদ্যপণ্যের রফতানি বাড়ানোর বিষয়ে প্রকল্পে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।