সম্প্রতি সময় পরিমাপের নতুন এক উপায় আবিষ্কার করেছেন সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। ফিজিক্যাল রিভিউ লেটারস জার্নালে তাঁদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়। বর্তমানে সময় পরিমাপ করা হয় আগে থেকে নির্দিষ্ট কোনো এককে দুটো বিন্দুর মধ্যকার সময় গণনা করে। অর্থাৎ অতীত থেকে বর্তমান সময়ের ব্যবধান হিসেব করে ‘সেকেন্ড’ এককে গণনা করে।
যেমন কেউ দৌড়ে কোথাও যাচ্ছে, এ সময় কত সেকেন্ড লাগল—এভাবে ‘সেকেন্ড’, অর্থাৎ পূর্বনির্ধারিত এককে হিসেব করে এই গণনা করা হয়। এ কাজে ব্যবহৃত হয় সাধারণ ঘড়ি বা পারমাণবিক ঘড়ি। নতুন এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা সময় পরিমাপ করেছেন রিডবার্গ অবস্থার তরঙ্গের মতো দশা থেকে। রিডবার্গ অবস্থা তৈরি হয় পরমাণুর কোয়ান্টাম পর্যায়ে। সহজ ভাষায় তাই সময় মাপার নতুন এই ব্যবস্থাকে বলা হচ্ছে কোয়ান্টাম ঘড়ি।
সাধারণ পরমাণুর ইলেকট্রনকে লেজার দিয়ে আঘাত করে নিউক্লিয়াস থেকে অনেক দূরের কোনো কক্ষপথে উচ্চশক্তির অবস্থায় (বা স্তরে) নিয়ে গেলে রিডবার্গ পরমাণু তৈরি হয়। এসব উচ্চশক্তির ইলেকট্রন আবার অন্য ইলেকট্রনদের আরও দূরে, উচ্চশক্তির স্তরে ঠেলে দেয়। এসব ইলেকট্রন যেভাবে সরে যায়, তাকে বলে রিডবার্গ অবস্থা। আর ইলেকট্রনের এই বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করার গাণিতিক উপায়কে বলা হয় তরঙ্গ প্যাকেট (Wave packet)।
এর আগের গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, রিডবার্গ তরঙ্গ প্যাকেটগুলো ভিন্ন ধরনের রিডবার্গ তরঙ্গের সঙ্গে মিলিত হলে ব্যাতিচার ঘটে। সাধারণ দুটো তরঙ্গের উপরিপাতনের ফলে (অর্থাৎ একটি তরঙ্গ আরেকটির ওপর এসে পড়লে) যেরকম ব্যতিচার ঘটে, সেরকমই অনেকটা। তবে রিডবার্গ তরঙ্গ প্যাকেট উপরিপাতিত (সুপারপজিশন) হলে নতুন এক ধরনের প্যাটার্ন পাওয়া যায়।
সাম্প্রতিক এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, একই কোয়ান্টাম অঞ্চলে যদি একাধিক তরঙ্গ প্যাকেট উপরিপাতিত হয়, তখন অনেকগুলো অনন্য প্যাটার্নের ব্যাতিচার পাওয়া যায়। প্রতিটি অনন্য প্যাটার্ন তাদের ইউনিক (অনন্য) পরিমাণ সময় প্রকাশ করে। এর অর্থ হচ্ছে, এই প্যাটার্নগুলোকে টাইম স্ট্যাম্প বা সময়ের একক হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
একক তো হলো, কিন্তু প্রাপ্ত তথ্য থেকে সময় পরিমাপের উপায় কী? সেজন্য এই গবেষক দল হিলিয়াম পরমাণু ব্যবহার করেন। দেখেন, উত্তেজিত হিলিয়াম পরমাণুর সঙ্গে অতিবেগুনী আলোর লেজারের ছোট ছোট পালস বা স্পন্দনের সাহায্যে বর্ণালী পরিমাপ করা সম্ভব। এই বর্ণালী পরিমাপ করার অর্থ সময়কে পরিমাপ করা। গবেষক দলটি তাঁদের এই পদ্ধতি ব্যবহার করে ৮১ পিকোসেকেন্ড পর্যন্ত সময় পরিমাপ করেছেন প্রায় নিখুঁতভাবে।
যান্ত্রিক ত্রুটির পরিমাণ ছিল মাত্র ৮ ফেমটোসেকেন্ডেরও কম। বলে রাখা প্রয়োজন, এক ফেমটোসেকেন্ড অতি, অতিক্ষুদ্র সময়। ১ সেকেন্ডকে ১০০ কোটি ভাগ করে, প্রতিটি ভাগকে আবার ১০ লাখ ভাগ করলে, এর এক ভাগকে বলে ১ ফেমটোসেকেন্ড।
তার মানে বুঝতেই পারছেন, এই বিজ্ঞানীদের পরিমাপ করা সময়ের হিসেবে ত্রুটির পরিমাণ প্রায় নেই বললেই চলে। কোয়ান্টাম কম্পিউটার এবং মহাকাশ অভিযানে ব্যবহৃত অতিসূক্ষ্ম নানা যন্ত্রপাতিতে সময় পরিমাপের জন্য নতুন এই পদ্ধতি দারুণ কাজে লাগবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।