প্রচণ্ড গরম। চারদিকে ঘেমে-নেয়ে একাকার সবাই। রাগী সূর্যটা যখন আগুন ঝরায়, তখন গরম লাগবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এর মধ্যে এক পশলা বৃষ্টিও হয়ে গেছে। কোনো লাভ হয়নি। বৃষ্টি থামার পর যে গরম, সে-ই। মাঝ থেকে গরমে অস্বস্তির পরিমাণটা বেড়ে গেল। ঘামে শরীর আঠালো হয়ে আসছে।
যেকোনো গুমোট দিনের সাধারণ চিত্র এটি। অনেকে বলেন, আর্দ্র বা গুমোট দিনে মানুষ বেশি ঘামায়, তাই অস্বস্তিটাও বাড়ে। আসলেই কি তাই? নাকি আসল ঘটনা অন্য কিছু?
এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে আমাদের দেহ কেন ঘামে, তা জানা দরকার। মানবদেহ খুব স্পর্শকাতর একটি জৈবিক সিস্টেম বা ব্যবস্থা। এটি ঠিকঠাকভাবে কাজ করার জন্য নির্দিষ্ট তাপমাত্রা প্রয়োজন। দেহের ভেতর এই তাপমাত্রার পরিমাণ ৩৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা এটি।
পরিবেশের তাপমাত্রা ওঠানামা করলে দেহের ভেতরে এই তাপমাত্রা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। তাপমাত্রা ঠিক রাখার জন্য তখন আমরা মোটা কাপড় পড়ি (শীতে) বা ফ্যানের নিচে বসি (গরমে)। তবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের এ কাজ দেহ আমাদের বাহ্যিক কর্মকাণ্ডের ওপর ছেড়ে দিয়ে বসে থাকে না। নিজেও কিছু কাজ করে। যেমন শীতকালে চর্বি বা ত্বকের লোম ব্যবহার করে অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা ধরে রাখার চেষ্টা করে।
আবার গরমের দিনে যখন তাপমাত্রা বেশি হয়, তখন ঘামের মাধ্যমে সেটা কমিয়ে আনার চেষ্টা করে। পানি তাপের সুপরিবাহী। এর সঙ্গে লবণ যোগ করলে পরিবাহিতা আরেকটু বাড়ে। গরম থেকে ত্বককে রক্ষা করতে দেহ তাই ত্বকের নিচে থাকা অসংখ্য ঘামগ্রন্থির মাধ্যমে লবণাক্ত পানি বের করে দেয়। ত্বকের ওপর এই পানি উঠে এলে আমরা বলি ঘাম হচ্ছে।
ঘাম বের করে দেওয়া মানেই কিন্তু কাজ শেষ নয়। বরং শুরু বলতে পারেন। লবণাক্ত পানি ত্বকের উষ্ণতা শোষণ করে ধীরে ধীরে বাষ্পে পরিণত হয়, মিশে যায় বায়ুমণ্ডলে। ফলে প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও দেহ কিছুটা শীতল থাকে।
গোল বাঁধে তখনই, যখন বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। ঘাম কত দ্রুত বাষ্পে পরিণত হবে, তা নির্ভর করে এই বাতাসের আর্দ্রতার ওপর। বাতাসের আর্দ্রতা আর কিছু নয়, বাতাসে থাকা জলীয় বাষ্পের পরিমাণ। ভেজা বা গুমোট দিনে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে। ফলে শরীরের ঘাম ধীর গতিতে বাষ্পীভূত হয়। অর্থাৎ ত্বকের উষ্ণতা ঘামে স্থানান্তরিত হয়—অর্থাৎ ঘাম উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, কিন্তু দ্রুত বাষ্পীভূত হয় না। তাই শরীর একদিকে আঠালো হয়ে ওঠে, অন্যদিকে অস্বস্তি বাড়ে গরমে।
দেহের তাপমাত্রা দ্রুত না কমার কারণে ঘামের পরিমাণ কিছুটা বাড়তে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ নিয়ে অবশ্য বিতর্ক আছে। অনেকের মতে আর্দ্র দিনে ঘাম হ্রাস পায় বটে, কিন্তু ঘাম না শুকানোয় দেহের অস্বস্তি বাড়ে, তাই আমাদের মনে হয় ঘাম বাড়ছে—এমনটাই মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট বা এমআইটির এক্সপেরিমেন্টাল স্টাডিজের লেকচারার প্র্যাট্রিসিয়া ক্রিস্টি।
শেষ করি একটা মজার তথ্য দিয়ে। মোবাইল ফোনে আবহাওয়াবার্তার অ্যাপে আমরা এখন দিনের তাপমাত্রা দেখার পাশাপাশি ‘অনুভূত তাপমাত্রা’ বা ‘ফিলস লাইক’ দেখতে পাই। দিনের তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে দেখা যায়, অনুভূত তাপমাত্রার পরিমাণ ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটা বের করা হয় বায়ুমণ্ডলের আর্দ্রতা হিসেব করে। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ প্রায় ৫৩.২৬ শতাংশ হলে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে আমাদের কাছে ৪২ ডিগ্রির মতো মনে হবে।
এটাই ‘অনুভূত তাপমাত্রা’। এই অনুভূত তাপমাত্রার পরিমাণ বের করা হয় হিট ইনডেক্স ব্যবহার করে। আপনি চাইলেই হিট ইনডেক্সের সূত্র ব্যবহার করে যেকোনো দিনের ‘ফিলস লাইক’ তাপমাত্রা বের করতে পারেন। আবার উল্টোভাবে বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণও হিসেব করতে পারবেন, যদি আপনার দিনের তাপমাত্রা ও অনুভূত তাপমাত্রা জানা থাকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।