রঞ্জু খন্দকার, গাইবান্ধা থেকে: ওপরে সবুজ ঘাসের বিছানা। কোথাও উঁকি দিচ্ছে গাছগাছালি। সমতল ভূমি দেখে অনেকক্ষেত্রেই বোঝার উপায় নেই আপনি দাঁড়িয়ে রয়েছেন একটি ভবনের ছাদে। মূল ভবনটি আপনার পায়ের নিচে!
অবশ্য গাইবান্ধার স্থানীয় ব্যক্তিরা জানেন, এটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ- এর কার্যালয়। নাম ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার। ফ্রেন্ডশিপ চরের মানুষদের নিয়ে কাজ করে। সেন্টারটির অবস্থান ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের মদনের পাড়া গ্রামে।
মদনের পাড়া গ্রামের আব্দুল মাজেদ বলেন, এ স্থাপনাটি শুধু গাইবান্ধা নয়, দেশেরই গর্ব। অনেকেই এটি দেখতে আসেন। তবে সবাই ভেতরে ঢুকতে পারেন না। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ঢুকতে হয়।
জেলা সদর থেকে ৩ কিলোমিটার পূর্বে গাইবান্ধা-বালাসী সড়কের পাশে ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারটির অবস্থান। স্থাপত্যের অপূর্ব শৈলীর কারণে এটি আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছে।
সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, লাল ইটের ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারটির ফটক বাইরে থেকে তালাবদ্ধ। ওপর থেকে এটি দেখতে অনেকটা মহাস্থানগড়ের বৌদ্ধবিহারের মতো।
অনুমতি নিয়ে ভেতরে ঢুকে দেখা গেল, সবুজ ঘাসের সমতল থেকে কোথাও নিচে নেমে গেছে সিঁড়ি। সিঁড়ি দিয়ে নেমে কিছুটা ফাঁকা স্থান। সেখানে নানা ফুলের গাছ শোভা ছড়াচ্ছে। এখান থেকে বিভিন্ন কক্ষে যাওয়া যায়।
অল্প কিছু দর্শনার্থীও ভবনটি ঘুরে দেখছিলেন। তাঁদের একজন আসমাউল হুসনা। তিনি ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। বাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার বালাবামুনিয়া গ্রামে।
আসমাউল বলেন, তাঁর জেলায় এত সুন্দর একটি স্থাপনা আছে, আগে দেখেননি। এটির সুনাম দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। তাই এবার দেখতে এসেছেন।
কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, এখানে দুটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে একটি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত। কেন্দ্র দুটিতে একসঙ্গে ২০০ জন প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। এখানে আবাসিক কক্ষ রয়েছে ২৪টি। এর মধ্যে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত পাঁচটি। সব কক্ষে ৫০ জন লোক থাকতে পারবেন। পানি নিষ্কাশনের জন্য রয়েছে পাঁচটি নর্দমা।
এ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ফ্রেন্ডশিপের কুড়িগ্রাম কার্যালয়ের কর্মী খাজা নাজিমুদ্দিন। তিনি বলেন, এখানে আশপাশের বিভিন্ন কার্যালয়ের কর্মীরা প্রশিক্ষণ নেন। বিদেশি প্রতিনিধিরাও থাকেন।
এখানকার আবাসিকে খেলাধুলার ব্যবস্থা ও গ্রন্থাগার রয়েছে। গ্রন্থাগারে আছে পাঁচ শতাধিক বই। রয়েছে ইন্টারনেট সুবিধা, মিউজিক সিস্টেম ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর।
ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারের সহকারী ব্যবস্থাপক লোকমান হোসেন জানান, এখানে বিদ্যুৎ না থাকলে জেনারেটরের ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে খাবারের ব্যবস্থা। এখানে একসঙ্গে ৭০ জন লোক খেতে পারেন।
জেলা তথ্য বাতায়ন থেকে জানা যায়, প্রায় ৮ বিঘা জমির ওপর প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হয়েছে। ২০১২ সালের ১৮ নভেম্বর এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। সেন্টারটির ভবনের আয়তন ৩২ হাজার বর্গফুট।
‘আরবান কন্সট্রাকশন’ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সেন্টারটি নির্মাণ করে। এতে ব্যয় হয় প্রায় ৮ কোটি টাকা। সময় লাগে প্রায় ২ বছর। সুন্দর স্থাপত্য নির্মাণের জন্য এটি ২০১২ সালে ‘এআরপ্লাসডি অ্যাওয়ার্ড’ পায়। লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আর্কিটেক্স রিভিউ এ পুরস্কার দেয়।
সেন্টারটির স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী। তিনি এটির জন্য ২০১৬ সালে ‘আগাখান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার’ পান। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক (একেডিএন) এ পুরস্কার দেয়।
এক সাক্ষাৎকারে কাশেফ মাহবুব বলেন, ‘এ ভবনের জমি খুবই নিচু ছিল। পানি আটকাতে চারদিকে বাঁধ দেওয়া হয়। ভবনের ছাদের লেভেল রাস্তার প্রায় সমতলে। আমার লক্ষ্য ছিল অল্প খরচে ভিন্নধর্মী কিছু করা। সবাই যাতে ভবনে স্বাচ্ছন্দ্যে বিচরণ করতে পারেন, সেটা মাথায় রাখতে হয়েছে। পর্যাপ্ত আলো আর বাতাসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে দেশি উপকরণ। এটি একটি পরিবেশবান্ধব ভবন।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।