রঞ্জু খন্দকার, গাইবান্ধা থেকে: কটেজের নাম গোধূলি, মায়া কিংবা গল্প। হ্রদ কিংবা পুকুর সামনে রেখে সেসব কুটিরে শুধু গোধূলিবেলায় নয়, শান্ত সকাল, দুরন্ত দুপুর, স্নিগ্ধ বিকেল কিংবা মায়াবী রাতেও প্রিয়জনের সঙ্গে জমে উঠতে পারে গল্প।
এই গল্পের আসর জমাতে আপনাকে যেতে হবে গাইবান্ধার নিভৃত গ্রামে গড়ে ওঠা ‘এসকেএস ইন’ নামে ‘ফোর স্টার’ মানের রিসোর্টে। সদর উপজেলা থেকে কলেজ সড়ক ধরে মাত্র ৪ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে গড়ে উঠেছে রিসোর্টটি।
শুধু দুজন গল্প করতে নয়, পারিবারিক যেকোনো মিলনমেলা থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক সম্মেলন করতেও বেছে নিতে পারবেন এসকেএস ইন। এখানে থাকতে পারেন রাতেও অথবা ঘুরে আসতে পারেন শুধু অতিথি হয়ে।
২০১৬ সালে সদর উপজেলার রাধাকৃষ্ণপুর গ্রামে প্রায় ১৯.২ একর জমিতে এসকেএস নামের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গড়ে তুলেছে রিসোর্টটি। এখানে দর্শনার্থী প্রবেশমূল্য ২০০ টাকা প্রতিজন। ভেতরে যেকোনো রাইড বা সুবিধা পেতে গুনতে হবে বাড়তি টাকা।
সম্প্রতি এসকেএস ইন রিসোর্টটিতে ঢুকে দেখা যায়, হাতের ডানপাশে বাচ্চাদের খেলার জায়গা। সেখানে নানা রাইড। একবার একটা শেষ করে অন্য রাইডে উঠছে শিশুরা।
রবিউল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি স্ত্রী ও বাচ্চাসহ এসেছিলেন সেখানে। রবিউল পেশায় ব্যাংকার। তাঁর স্ত্রী শিক্ষিকা।
রবিউল জুমবাংলাকে জানান, অবসর পেলে তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এখানে ঘুরতে আসেন। এমন স্থানে বাচ্চাদের আনলে ওরা অনেক মজা করে। স্ত্রীকে দেখিয়ে বলেন, ‘আমাদেরও মন ভালো হয়। সময় ভালো কাটে।’
খেলার স্থান পেরিয়েই রয়েছে কৃত্রিম ফোয়ারা। সেটা পার হয়ে একটি রেস্তোরাঁ। নাম-‘জলধারা’। জলধারার কর্মীরা জানালেন, এখানে যেকোনো সময় নাশতা করা যায়। তবে লাঞ্চ বা ডিনার করতে চাইলে আগে থেকে জানাতে হবে।
জলধারা পার হয়েই বাহারি নামের সব কটেজ শুরু। পুকুর পাড় থেকে বিস্তৃত হয়ে কৃত্রিম লেকের চারপাশেই ছড়িয়ে রয়েছে এসব কুটির। এখানে গাইবান্ধার আদি নাম ‘ভবানীগঞ্জ’ নামে রয়েছে চার তলা ভবন। এ ছাড়া বালাসি, সারাবেলা, রাধাকুঞ্জ, কাশফুল, ছায়াপদ্ম, কামিনী, নীলপদ্ম এ রকম বিভিন্ন নামেও রয়েছে আলাদা ভবন ও ভিলা।
এসকেএস ইন রিসোর্টে গোধূলি ও গল্প নামের ভিলা দুটো পার হলেই সামনে রয়েছে বাস্কেটবল খেলার কোর্ট। তার পাশে রয়েছে গ্রাম বাংলার দৃশ্য সম্বলিত ম্যুরাল। এর পাশে বাঁশঝাড়। বাঁশঝাড় পেরিয়ে উইন্টার গার্ডেন।
এসব কিছু দেখার ফাঁকে আপনার চোখ হয়ত তারকাটার ফাঁক গলে চলে যাবে বাইরে। সেখানে দেখতে পাবেন ফসলের মাঠ। হয়ত সবুজ ধানখেত, অথবা সোনালী ধানে নত হয়ে আছে গাছ কিংবা ধানকাটার পর ন্যাড়া মাঠ।
প্রকৃতি দর্শন করতে করতেই চলে আসবেন রিসোর্টের পূর্বপ্রান্তে। সেখানে রয়েছে সবুজমোড়ানো লতানো বাগান। এর মুগ্ধতা না কাটতে হঠাৎ সামনে পড়বে হরিণের দল। সেগুলো চড়ে বেড়াচ্ছে তারকাটার ভেতর।
হরিণ দেখতেই হয়ত চমকে উঠবেন ময়ূরের ডাকে। ভাগ্য ভালো হলে গিয়ে দেখবেন পেখম মেলে নাচ জুড়েছে পুরুষ ময়ূরটি। এর পাশেই ডাকছে ম্যাকাও পাখি, কাকাতুয়া। পাখির খাঁচায় আরও রয়েছে লাভবার্ড। ছোট পাখিগুলো হয়ত তখন ভালোবাসাবাসিতে ব্যস্ত।
পাখির খাঁচার সামনে এক শিশুকে তার অভিভাবক বলছিল, ময়ূরের পেখম আছে, ময়ূরীর নেই।
পাখি দেখে আবার কিছুটা পেছন ফিরে আসলে দেখবেন ঝুলন্ত সেতু। সেখানে অনেকে ছবি তুলছিলেন। সেতু ধরে সামনে গেলেই সুইমিং পুল। নীল তার জলরাশি।
সুইমিং পুলে টিকিট কেটে পানিতে নামতে হয়। আগে থেকে পুলে নামার ইচ্ছা থাকলে সাঁতারের পোশাক নিয়ে আসতে পারেন। সেখানে অনেক শিশু, তরুণ-তরুণীকে সাঁতার কাটতে দেখা গেল।
সুইমিং পুলে সাঁতার কাটছিল শিশু শুভ। তার বাবা শাহওয়াজ কবির বসেছিলেন পাশে। শাহওয়াজ এসেছিলেন পলাশবাড়ী থেকে। তিনি পেশায় শিক্ষক।
শাহওয়াজ জুমবাংলাকে বলেন, ছেলের জন্মদিনে ওকে খুশি করতে এখানে এসেছেন। গাইবান্ধায় সুন্দর একটা রিসোর্ট আছে, জানা ছিল। কিন্তু সেটা যে এত সুন্দর, গোছানো, পরিপাটি– ধারণা ছিল না।
তিনি আরও বলেন, এটার নাম এসকেএস ইন। ইন মানে তো সরাইখানা, যেখানে পথিকেরা আশ্রয় নেয়। এখানেও উত্তরাঞ্চহল ঘুরতে আসা পর্যটকেরা আশ্রয় নিতে পারেন। এখানে আসলে রুচিশীল যে কারও ভালো লাগবে। এটা এখন গোটা উত্তরবঙ্গের রুচিশীলতার প্রতীক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।