নিজস্ব প্রতিকেদক, গাজীপুর: গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গাকৃবি) কৃষিতত্ত্ব বিভাগ উচ্চ লবণ সহিষ্ণু ও উচ্চফলনশীল একটি নতুন গমের জাত উদ্ভাবন করেছে। ‘জিএইউ গম ১’ নামের এই জাতটি দেশের প্রথম লবণাক্ততা সহনশীল গম, যা কৃষি খাতে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।
গাকৃবির কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এম. ময়নুল হক এবং অধ্যাপক ড. মো. মসিউল ইসলামের নেতৃত্বে দীর্ঘ গবেষণা, পরীক্ষা ও মাঠ পর্যায়ের বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতটি উদ্ভাবিত হয়। বুধবার (২ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আব্বাস উদ্দিন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
জানা গেছে, ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশের দক্ষিণাঞ্চলে কৃষকের মাঠে বাস্তবিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জাতটি লবণাক্ততা সহিষ্ণু ও উচ্চফলনশীল হিসেবে প্রমাণিত হয়। পরে ছয়টি স্থানে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির তত্ত্বাবধানে মাঠ মূল্যায়নে উত্তীর্ণ হওয়ার পর জাতীয় বীজ বোর্ড গত ১৭ জুন ‘জিএইউ গম ১’ এর ছাড়পত্র দেয়।
‘জিএইউ গম ১’ গমের দানা তামাটে ও চকচকে, যা ৯৫ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে পরিপক্ব হয়। আমন ধান কাটার পর বপনের উপযোগী এই জাতটি হেক্টর প্রতি স্বাভাবিক মাটিতে ৪.৫ টন এবং লবণাক্ত মাটিতে ৩.৭৫ টন পর্যন্ত ফলন দিতে পারে। এতে গাছের আকার বড়, কাণ্ড মোটা ও গুটির সংখ্যা বেশি হওয়ায় উৎপাদিত খড় গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহারেরও সুযোগ রয়েছে।
এই জাতটি প্রিমিয়াম কোয়ালিটির গম হিসেবে উচ্চ প্রোটিন ও কম ফ্যাটের হওয়ায় সহজে শরীরে শোষিত হয়। এতে বিদ্যমান গ্লুটেনিন শরীর গঠন, শক্তি উৎপাদন ও রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। ডিইউএস পরীক্ষায় এর ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য সাধারণ গমের চেয়ে অধিক উন্নত হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
এ বিষয়ে উদ্ভাবক অধ্যাপক ড. মো. মসিউল ইসলাম বলেন, “দেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও লবণাক্ত এলাকায় ফসল উৎপাদনের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে আমরা কাজ শুরু করি। এখন ‘জিএইউ গম ১’ সেই লক্ষ্য পূরণে সফল হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “এই জাতটি দ্রুত মাঠ পর্যায়ে বিস্তার লাভ করবে বলে আমরা আশা করছি।”
গাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. জিকেএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “এই জাতের উদ্ভাবন শুধু গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নয়, বরং দেশের কৃষি খাতের জন্য একটি বড় অর্জন। আমাদের গবেষকরা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।”
উল্লেখ্য, ‘জিএইউ গম ১’ উদ্ভাবনের মাধ্যমে গাকৃবির উদ্ভাবিত জাতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯১টি। এই অর্জন দেশের কৃষিতে টেকসই উন্নয়ন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।