নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: ধানের পর গাজীপুরের প্রধান অর্থকরী ফসল কাঁঠাল। স্বাদ, ঘ্রাণ, আকার ও মিষ্টতায় এ জেলার কাঁঠালের খ্যাতি দেশজুড়ে। কাঁঠালের রাজধানীখ্যাত গাজীপুরে এসময়ে চারিদিকেই পাকা কাঁঠালের ঘ্রাণ।
এখন কাঁঠালের মৌসুম। দেশের সর্ববৃহৎ কাঁঠালের হাট ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শ্রীপুর জৈনা বাজারে এখন জমজমাট হয়ে উঠেছে কাঁঠালের বেচাকেনা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন পাইকাররা এখানে কাঁঠাল কিনতে আসছেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়- গাজীপুরের শ্রীপুর, কাপাসিয়া, কালিয়াকৈরের একাংশ ও সদর উপজেলার কাঁঠালের সুখ্যাতিই বেশি। এ অঞ্চলের মাটির গুণে কাঁঠালের ফলন ও স্বাদ বেশি। খাজা, গালা ও দুরসা- এখানে এই তিন জাতের কাঁঠাল উৎপাদন হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পশ্চিম পাশে বিশাল জায়গাজুড়ে কাঁঠালের পাইকারি বাজার বসেছে। বাজারে বড় বড় আড়তদারের কাছ থেকে পাইকারি দরে কাঁঠাল কিনে সেগুলো ট্রাকে তুলছেন ক্রেতারা। অপর দিকে সড়কের পাশে শত শত ভ্যানগাড়িতে কাঁঠাল ভর্তি করে বিক্রির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন ছোট ব্যবসায়ীরা। তারা মূলত স্থানীয় পাইকার। একেকটি ভ্যানগাড়িতে মাঝারি আকারের ২০ থেকে ৫০টি কাঁঠাল ধরে। বড় পাইকাররা ভ্যানগাড়িতে থাকা কাঁঠালগুলোর আনুমানিক মূল্য নির্ধারণ করে দরকষাকষি করছেন।
মৌসুমে কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে পানির দরে। ১৫ কেজির উপরে বড় সাইজের একটি কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। আর মাঝারি সাইজের কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১৫-২০ টাকায়। বাগান মালিক, পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, কাঁঠালের দাম পড়ে যাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।
বাগান মালিক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, গাছের খুব একটা যত্ন করি না। তবু এবার আমার বাগানের ৭০ থেকে ৮০টি গাছে প্রচুর কাঁঠাল ধরেছে। গত ১৫ দিনে ছোট-বড় ৫০০-৭০০ কাঁঠাল বিক্রি করেছি। এরকম ২০০টি মাঝারি ও ছোট্ট আকারের প্রতি পিস কাঁঠাল ২৫ টাকায় বিক্রি করেছি। বড় আকারের কাঁঠালগুলো প্রতি পিস ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কাঁঠালগুলো দ্রুত পেকে পচে যাওয়ার ভয়ে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি।
জৈনা বাজারের আড়তদার সোহেলরানা বলেন, এবারের বন্যার কারণে কাঁঠাল বেচাকেনাও কম। কাঁঠালের বাজার অর্ধেকে নেমে এসেছে।
এদিকে জৈনা বাজারের পুরাতন আড়তদার ইসলাম উদ্দীন মেম্বার বলেন, ১৯৮৫ সাল থেকে এখানে আড়তদারি করি। নোয়াখালী, চিটাগাং, ফেনি, চাঁদপুর, সিলেট, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলা থেকে কাঁঠালের জন্য পাইকাররা আসেন। কম দামে ভালো মানের কাঁঠাল পাওয়া যায় এই ঐতিহ্যবাহী হাটে।
সিলেট থেকে আসা পাইকার রসুল মিয়া বলেন, শ্রীপুরের লাল মাটির উৎপাদিত কাঁঠালের স্বাদ অনেক ভালো। রসে টইটম্বুর মিষ্টি এসব কাঁঠালের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই এখান থেকে প্রতি সপ্তাহে আট ট্রাকে কাঁঠাল নিয়ে বিক্রি করছি। ট্রাক দিয়ে কাঁঠাল নেওয়ার খরচসহ শ্রমিকদের খরচ বাদ দিলে খুব বেশি লাভ করা সম্ভব হয় না।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন, শ্রীপুরে বাণিজ্যিক কাঁঠাল-বাগান নেই। এ উপজেলায় ২৮০০ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল গাছ রয়েছে। এসব গাছে বছরে ৬০ হাজার টন কাঁঠাল উৎপাদন হয়। স্থানীয়ভাবে চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করেন বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।