নিজস্ব প্রতিবেদত, গাজীপুর: পরিবেশবান্ধব উৎপাদনের স্বীকৃতি হিসেবে সম্প্রতি ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ পেয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুরে অবস্থিত এক্স সিরামিকস লিমিটেড। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই পুরস্কার তুলে দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। অথচ এই কারখানাই স্থানীয়ভাবে দীর্ঘদিন ধরে নদী দখল ও দূষণের অভিযোগে পরিবেশবাদী মহলে আলোচিত ও সমালোচিত।
২০০৯ সালে শ্রীপুর পৌরসভার বেড়াইদেরচালা গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় এক্স সিরামিকস। প্রায় ৭৫ বিঘা জমিতে গড়ে ওঠা এই কারখানাটি শুরু থেকেই পাশের ঐতিহ্যবাহী লবলঙ্গ নদীর অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলে। প্রাথমিকভাবে নদীর গা ঘেঁষে স্থাপনা নির্মাণ শুরু হলেও পরে একাধিক স্থানে নদী দখল, গতিপথ পরিবর্তন, কালভার্ট নির্মাণ এবং বর্জ্য নিঃসরণের অভিযোগ ওঠে। বর্তমান পরিস্থিতিতে লবলঙ্গ নদী কার্যত একটি নালায় পরিণত হয়েছে, যার মধ্য দিয়ে কারখানার তরল বর্জ্য প্রতিনিয়ত প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে, পুরস্কার প্রদানের মানদণ্ড নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। একাধিক পরিবেশ সংগঠনের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে এই কমিটিতে কারা ছিলেন, কী ধরনের যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে তালিকা তৈরি করা হয়েছে, এবং স্থানীয় পর্যায়ের পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন কি যথাযথভাবে করা হয়েছে?
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে চলছে ব্যাপক সমালোচনা। পরিবেশ কর্মীরা একে দেখছেন ‘নীতির পরাজয়’ এবং সরকারের পরিবেশবান্ধব শিল্প নীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মতো ঘটনা হিসেবে। পুরস্কারপ্রাপ্তির খবরে যে সচেতনতা বাড়ার কথা, তা উল্টো ভরসাহীনতা তৈরি করছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
একদিকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পরিবেশবান্ধব শিল্পের প্রশংসা, অন্যদিকে বাস্তবে একটি নদীকে হত্যা করার অভিযোগ এই দুই চিত্রের মাঝে গড়ে উঠছে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। গ্রিন অ্যাওয়ার্ডের মতো সম্মাননার জন্য যদি প্রকৃত পরিবেশবান্ধব মানদণ্ডকে অগ্রাহ্য করা হয়, তাহলে তা দেশের পরিবেশ সচেতনতা আন্দোলনকে এক ধরনের হতাশার দিকেই ঠেলে দিচ্ছে।
এখন প্রশ্ন উঠেছে পুরস্কারের মর্যাদা রক্ষা করতে হবে, নাকি পরিবেশ রক্ষা করতে হবে? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঠিক পদক্ষেপের অপেক্ষায় শ্রীপুরবাসী।
পরিবেশ সংগঠনগুলো এ পুরস্কার প্রদানে অবাক এবং ক্ষুব্ধ। নদী পরিব্রাজক দলের শ্রীপুর শাখার সভাপতি সাঈদ চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া, কৃষিজমির হ্রাস সবকিছুর পেছনে এই কারখানার ভূমিকা রয়েছে। এরপরও এই সম্মাননা প্রমাণ করে, কতটা অসংবেদনশীল প্রক্রিয়ায় এ ধরনের পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।
রিভার অ্যান্ড নেচার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম বলেন, আমরা নিজের চোখে দেখেছি, গ্রিন বলে কিছু নেই সেখানে। প্রশাসনের একাধিক প্রতিনিধিও একই পর্যবেক্ষণ করেছেন। পুরস্কারটি কীভাবে দেওয়া হলো, তা নিয়ে এখনো কেউ কোনো জবাব দেয়নি।
বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. মনির হোসেন। তিনে বলেন, যে প্রতিষ্ঠান একটি জীবন্ত নদী গিলে ফেলেছে, তাকেই দেওয়া হয়েছে গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড? আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অ্যাওয়ার্ড প্রত্যাহার করা হউক।
পরিবেশ অধিদপ্তরের গাজীপুর অঞ্চলের উপ পরিচালক মো. আরেফিন বাদল বলেন, কারখানাটির বিরুদ্ধে নদী দখল ও দূষণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তদন্ত শেষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। এক্স সিরামিকসের ছাড়পত্র আবেদন আপাতত স্থগিত আছে এবং একটি নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তবে এখনো কারখানা কর্তৃপক্ষ সাড়া দেয়নি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।