নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: চলতি বছরের মার্চ মাসে ১৪২টি পরিবারকে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর উপহার দেওয়া হয়। এখানে ঠাঁই হয়েছে প্রায় তিন শতাধিক অসহায় মানুষের।
এই ঘরগুলোই এখন এসব মানুষের বেঁচে থাকার অবলম্বন। বেঁচে থাকার জন্য স্থায়ী ঠিকানা পেয়ে এখন তারা নতুন স্বপ্নের বীজ বুনছে। ঘরের পাশে বাড়তি জায়গায় তারা ফলন করছেন বিভিন্ন ধরনের সবজি। এতে নিজেদের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি তা বিক্রি করে বাড়তি আয়ও করছেন অনেকে। এ যেন জীবন বদলে যাওয়া এক গ্রাম।
এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রী শুধু ঘরই উপহার দেননি, এখানে প্রয়োগ করা হয়েছে অর্ন্তভুক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের উদ্যোগে এখন স্বাবলম্বী হওয়ার পথে এ গ্রামের মানুষগুলো।
আশ্রয়ণের গ্রামটিতে গত কয়েক মাসে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। সড়কের ধারে, অলিতে-গলিতে বিভিন্ন ফলদ ও ভেষজ উদ্ভিদ চোখে পড়ে। উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্যোগে প্রতিটি ঘরের আঙিনায় গড়ে উঠেছে ফল ও সবজির বাগান। পুষ্টির কথা বিবেচনা করে লেবু, মাল্টা, মৌসুমি সবজি লাউ, পেঁপে, বেগুন, শসা ও সজনের চারা রোপণ করা হয়েছে। ফলও এসেছে অধিকাংশ গাছে। অল্প কয়েকদিনেই সবুজে ছেয়ে গেছে পুরো গ্রাম।
আশ্রয়ণের বাসিন্দা হেলেনা আক্তার বলেন, আমরা ঘরের চারপাশে সবজি চাষ করেছি। বেশ কয়েকদিনেই ঘরের চারপাশ সবুজে পরিণত হয়েছে। উৎপাদিত বিভিন্ন শাকসবজি পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে অবশিষ্ট বিক্রি করে বাড়তি আয়ের আশা করছি।
পাশের ঘরের বাসিন্দা খোদেজা খাতুন বলেন, উপজেলা প্রশাসনের লোকজন নিয়মিত এসে আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। তারা আমাদের গাছের চারাও দিয়েছন, আবার সবজির বীজও দিয়েছেন। আমাদেরকে বলেছেন যেন এক ইঞ্চি জায়গাও খালি না রাখি। তাদের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা সব খালি জায়গায় সবজি ও ফলের বাগান তৈরি করেছি। আশা করছি নিজের চাহিদা মিটিয়ে বাজারেও কিছু বিক্রি করতে পারব।
শ্রীপুর উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে থাকা বাসিন্দারা যেন বিষমুক্ত নিরাপদ ফল ও সবজি পেতে পারেন সেজন্য উপজেলা কৃষি বিভাগ গ্রামটিতে পারিবারিক পুষ্টি বাগান প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এর ফলে নিজেদের চাহিদা মিটিয়েও তারা অতিরিক্ত ফল ও সবজি বিক্রি করতে পারছেন।
দারিদ্র বিমোচনে অর্ন্তভুক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল প্রয়োগের কারণে এখানে প্রতিটি মানুষ স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারবেন। সেই লক্ষ্যে এখানকার বাসিন্দাদের প্রশিক্ষণ প্রদান, নারীদের সেলাই, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প ও যোগ্যতা অনুযায়ী শিল্প কারখানার নানা ধরনের কাজের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রায় ৮ একর সরকারি ভূমি অবৈধ দখলমুক্ত করে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অধীনে এই প্রকল্পটি বর্তমান সরকারের অন্যতম একটি মাইলফলক। ঢাকা বিভাগে এটি একটি মডেল প্রকল্প। গ্রামবাসীর সুবিধার্থে দৃষ্টিনন্দন মসজিদ, কমিউনিটি সেন্টার, বিদ্যালয়, প্রশস্ত রাস্তাঘাটসহ নানা সুবিধা রয়েছে এখানে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে গ্রামের নারীদের সাবলম্বী করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তরিকুল ইসলাম বলেন, নয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পটি আমাদের মডেল প্রকল্প। কঠোর নজরদারির মাধ্যমে এখানে প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ হলো প্রকল্পের প্রতিটি মানুষকে সাবলম্বী করে গড়ে তোলা। আমরা সে লক্ষ্যেই তাদের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে কাজ করছি। আগামী জানুয়ারিতে সেখানে স্কুল কার্যক্রম চালু হবে। এখানে নাগরিকদের বসবাসের পূর্ণাঙ্গ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। সরকারের প্রতিটি বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগে কাজ চলছে।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী এখানে শুধু ঘর দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেনি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশমতো আশ্রয়ণের প্রতিটি বাসিন্দাদের সাবলম্বী করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। নয়াপাড়ার এ প্রকল্পটি আমাদের একটি মডেল প্রকল্প। এখানের বাসিন্দাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশনসহ মৌলিক ও মানবিক চাহিদা নিশ্চিত করে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যথাযথ কাজের ব্যবস্থা করে দিতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।