নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুর সিটি করপোরেশনে (জিসিসি) চীনের একটি প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবিত রক্ত আমাশয় (শিগেলা) টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানোর প্রস্তাব দিয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)। তবে স্থানীয় অভিভাবক ও কর্তৃপক্ষের শঙ্কার কারণে প্রয়োজনীয় সরকারি অনুমোদন ছাড়া সিটি করপোরেশন এ বিষয়ে অগ্রসর হতে অনীহা প্রকাশ করেছে। ফলে বিষয়টি নিয়ে একপ্রকার অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
আইসিডিডিআরবি গত ১৩ এপ্রিল জিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো চিঠিতে এই ট্রায়ালের অনুমতি ও সহযোগিতা চায়। পুষ্টি গবেষণা বিভাগের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং প্রধান গবেষক ডা. রুবান রাকিব স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে জানানো হয়, ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের ওপর এস. ফ্লেক্সনেরি–এস. সোনেই বাইভ্যালেন্ট কনজুগেট ভ্যাকসিন–এর কার্যকারিতা যাচাই করতে ফেজ–থ্রি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনা করা হবে।
ঢাকা, টঙ্গী ও মির্জাপুর এলাকা মিলিয়ে প্রায় ৮ হাজার শিশুর ওপর পরীক্ষামূলকভাবে এই টিকা প্রয়োগের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মধ্যে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৪৮ ও ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় দেড় হাজার শিশু অংশ নেবে বলে আইসিডিডিআরবি জানিয়েছে। গবেষণাটি চলবে দুই বছরব্যাপী।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, চীনে ইতোমধ্যে ২১ হাজার মানুষের ওপর এই টিকার তিন ধাপের (ফেজ–১ থেকে ফেজ–৩) পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে, এবং তা নিরাপদ ও কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের অসুস্থতা ও মৃত্যুর অন্যতম কারণ শিগেলা বা রক্ত আমাশয়। এখন পর্যন্ত এ রোগ প্রতিরোধে কোনো অনুমোদিত টিকা বাজারে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. রহমত উল্লাহ জানান, আইসিডিডিআরবির আবেদনটি নিয়ে জিসিসির মাসিক সমন্বয় সভায় আলোচনা হয়। বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মতামত চাওয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ সুস্পষ্ট অবস্থান জানায়নি।
তিনি আরও বলেন, “স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক লাইন ডিরেক্টর জানিয়েছেন, শিগেলা টিকা ইপিআই তালিকাভুক্ত নয়। তাই বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও গবেষণা বিভাগের অনুমোদন নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”
পরে ২১ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও গবেষণা) ডা. আফরিনা মাহমুদ জবাবে জানান, গবেষণাটি যেহেতু কমিউনিটি পর্যায়ে পরিচালিত হবে এবং অধিদপ্তরের অধীন কোনো প্রতিষ্ঠান ব্যবহৃত হবে না, তাই অধিদপ্তরের কোনো আপত্তি নেই।
তবে, বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) থেকে এখনো কোনো মতামত পায়নি জিসিসি।
এ ছাড়া, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় জানায়, বিষয়টি সিটি করপোরেশনের নিজস্ব এখতিয়ারভুক্ত এবং তারা চাইলে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
গাজীপুরে এ টিকা ট্রায়াল নিয়ে অভিভাবকসহ সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই শিশুদের ওপর পরীক্ষামূলক টিকা প্রয়োগে আপত্তি জানাচ্ছেন।
গাজীপুরের বিশিষ্ট চিকিৎসক ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. মাজহারুল আলম বলেন, “যেকোনো নতুন টিকা প্রয়োগের আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন অপরিহার্য। এসব অনুমোদন ছাড়া শিশুদের শরীরে পরীক্ষামূলক টিকা প্রয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।”
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহেল হাসান বলেন, “অনেকে আমাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করেছেন। আমি তাদের জিজ্ঞেস করেছি—আপনি কি আপনার সন্তানের ওপর এ টিকা পরীক্ষা করতে দেবেন? যদি রাজি না থাকেন, তাহলে আমি কীভাবে আমার এলাকার কোনো শিশুর ওপর এটি প্রয়োগ করতে দিই?”
জিসিসির প্রশাসক ও ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, “আমরা নীতিগতভাবে একমত হয়েছি, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ থেকে স্পষ্ট মতামত না পাওয়া পর্যন্ত গাজীপুরে শিগেলা টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি দেওয়া হবে না।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।