নিজস্ব প্রবিতেদক, গাজীপুর: গাজীপুর ৫টি সংসদীয় আসন রয়েছে। আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এ আসনগুলোর তিনটিতেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নারীদের মনোনয়ন দিয়েছে। আসনগুলো হলো গাজীপুর-৩, ৪ ও ৫ আসন। মনোনয়ন পাওয়া ওই তিন নারীর বাবারা ছিলেন ওইসব আসনের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা এবং জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিবিদ। তারা প্রয়াত হওয়ার পর যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে তাদের মেয়েরা হয়েছেন নৌকার মাঝি।
অতীতে গাজীপুর-৪ ও ৫ এ দুটি সংসদীয় আসনে নারী প্রার্থী থাকলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যোগ হয়েছে গাজীপুর-৩ আসন। এখানে প্রথমবারের মতো কোনো নারী প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
এটি জাতীয় সংসদের ১৯৬ নম্বর আসন। শ্রীপুর উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন একটি পৌরসভা ও গাজীপুর সদর উপজেলার ৩টি ইউনিয়ন (মির্জাপুর, ভাওয়াল গড় ও পিরোজালী) নিয়ে গাজীপুর-৩ আসন গঠিত। সংসদীয় এ আসন থেকে দীর্ঘদিনের সংসদ সদস্য ছিলেন জাতীয় নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট রহমত আলী। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি অসুস্থতার জন্য দলের কাছে মনোনয়ন চাননি। পরে দলের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ। তবে অ্যাডভোকেট রহমত আলীর মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগে তার অবস্থান বিবেচনায় মেয়ে রুমানা আলী টুসিকে নারী সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য করা হয়। টুসি কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক। তবে ইকবাল হোসেন সবুজ এবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হন। এ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয় পান প্রয়াত সংসদ সদস্য রহমত আলীর মেয়ে রুমানা আলী টুসি। কিন্তু এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে টুসি সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীরে সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ।
রুমানা আলী টুসি বলেন, ‘আমার বাবা স্বাধীনতার পর বহু দিন এ এলাকার মানুষের সেবা করেছেন, জাতীয় রাজনীতি করেছেন। বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা শেখ হাসিনার পাশে থেকেছেন। রাজনীতিক পরিবারের কারণে ছোটকাল থেকে রাজনীতির প্রতি বিশেষ আকর্ষণ আমার। আমি জয়ী হতে পারলে এলাকার পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য কাজ করতে চাই। একইসঙ্গে এলাকার উন্নয়ন নিশ্চিত করে প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখব।’
এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী রুমানা আলী টুসি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ইকবাল হোসেন সবুজসহ মনোনয়ন জমা দিয়েছেন মোট ৮ জন। অন্য প্রার্থীরা হলেন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মো. আ. রহমান, জাতীয় সমাজত্রান্ত্রিক দলের (জাসদ) মো. জহিরুল হক মন্ডল বাচ্চু, জাকের পার্টির মো. আলাউদ্দিন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মো. জয়নাল আবেদীন, জাতীয় পার্টির এফএম সাইফুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র এ কে এম সাখাওয়াত হোসেন খাঁন।
এটি জাতীয় সংসদের ১৯৭ নম্বর আসন। কাপাসিয়া উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে গাজীপুর-৪ সংসদীয় আসন গঠিত। মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের পরিবারের হাতে ছিল নৌকার টিকিট। আগের ধারাবাহিকতায় এবারও দলের মনোনয়ন পেয়েছেন বঙ্গতাজের মেয়ে ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সিমিন হোসেন রিমি। তার ভাই সাবেক প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ সংসদ থেকে পদত্যাগ করলে ২০১২ সালে উপনির্বাচনে তিনি প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর থেকে পরপর দুইবার এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এ আসনের বর্তমান সংসদ সিমিন হোসেন রিমি এবারও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাছে মনোনয়ন চান। দল তার প্রতি আস্থা রেখে নৌকার বৈঠা তুলে দিয়েছে। তবে এ আসনে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হয়ে রিমির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের ভাগনে শিল্পপতি আলম আহমেদ।
সিমিন হোসেন রিমি বলেন, ‘আমি আমার বাবা (তাজউদ্দীন আহমদ), জাতির পিতা ও আওয়ামী লীগের আদর্শ ধারণ করে রাজনীতি করে যাচ্ছি। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর পিছিয়ে পড়া এলাকার উন্নয়নে গতি এনেছি। সঙ্গে মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমানো, বাল্যবিয়েমুক্ত এলাকা গড়ে তোলা, সবার জন্য স্বাস্থ্য-শিক্ষার সুযোগ ও মাদকমুক্ত এলাকা গঠনে কাজ করেছি। এবার লক্ষ্য স্মার্ট দেশ গঠনে কাজ করা। এ লক্ষ্যে আমি আবারও নৌকা প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করছি।’
এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সিমিন হোসেন রিমি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের উপদেষ্টা শিল্পপতি আলম আহমেদসহ মনোনয়ন জমা দিয়েছেন মোট ৭ জন। অন্য প্রার্থীরা হলেন জাতীয় পার্টির মো. সামসুদ্দিন খান, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ফ্রন্টের (বিএনএফ) মোহাম্মদ সারোয়ার-ই-কায়নাত, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মাসুদ চৌধুরী, জাকের পার্টির জুয়েল কবির, স্বতন্ত্রর সামসুল হক।
এটি জাতীয় সংসদের ১৯৮ নম্বর আসন। কালীগঞ্জ উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন একটি পৌরসভা ও গাজীপুর সদর উপজেলার ১টি ইউনিয়ন (বাড়িয়া) নিয়ে গাজীপুর-৫ আসন গঠিত। মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক শহীদ ময়েজ উদ্দিনের মেয়ে মেহের আফরোজ চুমকির হাতে এবারও নৌকা তুলে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বাবার পরিচয়ে রাজনীতিতে এলেও তিনি রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগের বিশ্বস্ত নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি। ১৯৯৬ সালে তিনি সংরক্ষিত নারী আসনে প্রথমবারের মতো সংসদে যান। পরে ২০০৯, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন দুই বার মেয়াদে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাছে দলীয় মনোনয়ন চান। দল তাকে মনোনয়ন দেয়। তবে এ আসনে দল থেকে মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হন ডাকসুর সাবেক ভিপি, সাবেক সংসদ সদস্য ও গাজীপুর জেলা পরিষদের সাবেক দুই বারের চেয়ারম্যান আখতারউজ্জামান। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে তিনি মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। সেই হিসেবে ময়েজউদ্দিন কন্যার সঙ্গে তিনি নৌকার বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
মনোনয়ন পাওয়ার পর নিজের প্রতিক্রিয়ায় মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, ‘বাবার দেখানো পথেই রাজনীতির মাঠে বিচরণ করে চলছি। আমৃত্যু আওয়ামী লীগের আদর্শ ধারণ করতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে নারীদের এগিয়ে আসতে হবে সবার আগে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে আমরা এগিয়ে যাব।’
এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মেহের আফরোজ চুমকি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ডাকসুর সাবেক ভিপি, সাবেক সংসদ সদস্য ও গাজীপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আখতারউজ্জামানসহ মনোনয়ন জমা দিয়েছেন মোট ৯ জন। অন্য প্রার্থীরা হলেন জাতীয় পার্টির এম. এম নিয়াজ উদ্দিন, জাকের পার্টির এ এস এম মনিরুজ্জামান, গণফোরামের মো. সোহেল মিয়া, জাতীয় সমাজত্রান্ত্রিক দলের (জাসদ) মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম আকন্দ, বাংলাদেশ সুপ্রিম পাটির উর্মি (তৃতীয় লিঙ্গ), ইসলামী ফ্রন্টের মো. আল-আমিন দেওয়ান ও স্বতন্ত্রর মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।