নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুর সদর উপজেলার রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাস সংলগ্ন নয়নপুর ঈদগাহ মাঠে আবারও ‘বৃক্ষ ও কুটির শিল্প মেলা’র নামে লটারি ব্যবসা জেঁকে বসেছে। অনুমোদনহীন এ মেলাটি কিছুদিন আগে জেলা পুলিশ বন্ধ করে দিলেও এখন প্রশ্ন উঠেছে-প্রশাসনের নীরবতায় লটারির এই বিপুল অর্থ কোথায় যাচ্ছে?
এর আগে সংবাদ প্রকাশের পর মেলাটি বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই একই স্থানে, একই আয়োজকদের উদ্যোগে আবার শুরু হয় মেলা। প্রথমে শুধু প্রদর্শনী ও স্টল চালু রেখে জনমনে স্বাভাবিকতা আনা হয়, পরে গোপনে পুনরায় শুরু হয় র্যাফেল ড্রয়ের নামে লটারির ব্যবসা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিদিন শত শত টিকিট বিক্রি হচ্ছে-যার আর্থিক অঙ্ক লাখ টাকায় পৌঁছায়। অথচ পুরস্কার দেওয়া হয় অল্প কিছু টিকিটে, বাকি অর্থ চলে যাচ্ছে আয়োজক ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের পকেটে। যেহেতু মেলার কোনো সরকারি অনুমোদন নেই, তাই এসব অর্থ সরকারি রাজস্ব হিসাবেও জমা হচ্ছে না।
স্থানীয় বাসিন্দা মনিরুজ্জামান বলেন, “মেলা বন্ধের পর ভেবেছিলাম প্রশাসন এবার কড়া হবে। কিন্তু সপ্তাহ পেরোতেই আগের মতোই শুরু হয়ে গেল। নিশ্চয়ই কোনো প্রভাবশালী মহলের ছায়া না থাকলে এটা সম্ভব নয়।”
আরেকজন শ্রমিক রশিদ মিয়া বলেন, “প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার লটারি বিক্রি হচ্ছে, কিন্তু প্রশাসন চুপ। তাহলে এই টাকার ভাগ কারা নিচ্ছে?”
প্রশাসনিক সূত্র জানায়, মেলার আয়োজকরা জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন কিংবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড—কোনো জায়গা থেকেই অনুমতি নেয়নি।
গাজীপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাজ্জাত হোসেন বলেন, “উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে, প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জেলা প্রশাসক (ডিসি) নাফিসা আরেফীন জানান, “জেলা প্রশাসন থেকেও কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। কেউ অবৈধভাবে মেলা চালালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা আ.ন.ম আবুজর গিফারী বলেন, “যে এলাকায় মেলা হচ্ছে সেটি ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের আওতার বাইরে। তবে বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি।”
গাজীপুরের পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মো. যাবের সাদেক বলেন, “মেলার বিষয়ে কোনো আবেদন আসেনি, তাই অনুমোদনও নেই। কেউ যদি অবৈধভাবে মেলা চালায়, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে সচেতন মহলের প্রশ্ন-যখন প্রশাসন নিজেরাই বলছে অনুমোদন নেই, তখন সেনানিবাস সংলগ্ন সংবেদনশীল এলাকায় এমন মেলা কিভাবে চালু থাকে? একবার বন্ধ হওয়ার পরও আবার শুরু হওয়া কি প্রশাসনের দায় এড়ানোর ইঙ্গিত নয়?
জনগণ এখন জানতে চায়, সরকারি রাজস্ব বঞ্চিত রেখে প্রতিদিন লাখো টাকার এই লটারির অর্থ শেষ পর্যন্ত কার পকেটে যাচ্ছে, আর প্রশাসন কেন নীরব দর্শক হয়ে আছে?
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।