নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: চলতি বছরের গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন গাজীপুরের পাঁচটি উপজেলার ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ সব জনপ্রতিনিধিরা। এর ফলে ব্যাহত হচ্ছে নাগরিক সেবা। জরুরি প্রয়োজনে সেবা না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ জনগণ। এসব উপজেলার ৩৯টি ইউনিয়নের মধ্যে সাতজন চেয়ারম্যান নিয়মিত অফিস করলেও বাকি ৩৪ জন চেয়ারম্যান আছেন আত্মগোপনে।
যদিও গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা অনুপস্থিত থাকায় তাদের স্থানে সরকারি অফিসের বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাদের সেবা দেওয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে জেলা প্রশাসন থেকে।
এলাকাবাসী ও সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুরে পাঁচটি উপজেলায় ৩৯টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। এর মধ্যে গাজীপুর সদর উপজেলায় ৪টি, কালিয়াকৈর উপজেলায় ৯টি, শ্রীপুর উপজেলায় ৮টি, কাপাসিয়া উপজেলায় ১১টি ও কালীগঞ্জ উপজেলায় ৭টি ইউনিয়ন রয়েছে। জেলার ৩৯টি ইউনিয়ন পরিষদের ৩৪ জন চেয়ারম্যানই ইউনিয়ন পরিষদে না গিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন।
গাজীপুর সদর উপজেলায় ৪টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। চারটিতেই চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর থেকেই ৪টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে অনেকে কয়েকদিন অফিস করেন। তবে জেলার থানাগুলোতে হত্যা ও হত্যা চেষ্টার ঘটনায় প্রায় এক ডজন মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলার আসামিদের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নাম থাকায় তাদেরকে আর দেখা যায়নি ইউনিয়ন পরিষদে। অনেক চেয়ারম্যানরা তাদের পদ ধরে রাখার জন্য নিরাপদ স্থানে থেকে হাজিরা খাতা ও গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রে স্বাক্ষর করছেন বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব বলেন, তার পরিষদের চেয়ারম্যান ঢাকার উত্তরা বাসায় অবস্থান করেন। প্রতিদিন গুরুত্বপূর্ণ নথি তার উত্তরার বাসায় নিয়ে গেলে তিনি স্বাক্ষর করে দেন। পরদিন সেগুলি তার বাসা থেকে আবার নিয়ে আসা হয়। এভাবেই কাজ করতে হচ্ছে।
এলাকাবাসী জানায়, বিগত সরকারের সময় নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা পলাতক থাকায় পরিষদের দাপ্তরিক কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে জনগণকে ট্রেড লাইসেন্স, জাতীয় সনদ, জন্মনিবন্ধন, মৃত্যু সনদ, ওয়ারিশ সনদ, প্রত্যয়পত্র, নাগরিকত্ব সনদসহ বিভিন্ন সনদের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের দ্বারস্থ হতে হয়। কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। নিজেদের এবং সন্তানদের বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজসহ স্কুল-কলেজে ভর্তি সংক্রান্ত কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে। দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সরকারি সেবা গ্রহণের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। কাজে গতি ফিরিয়ে আনতে জরুরি ভিত্তিতে অনুপস্থিত চেয়ারম্যানদের পরিবর্তে বিকল্প ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায় অনেক মানুষের ভিড়। এদের কেউ জন্ম নিবন্ধন আবার কেউ ট্রেডলাইসেসেন্স নিতে এসেছেন। কিন্তু চেয়ারম্যান মো. জালাল উদ্দিন উপস্থিত না থাকায় তারা সেই সেবা পাচ্ছেন না। অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন আবার অনেকে বিকল্প কি করা যায় সেটাই খোঁজার চেষ্টা করছেন। একই অবস্থা দেখা গেছে, সদর উপজেলার বাড়িয়া, মির্জাপুর ও ভাওয়াল গড় ইউনিয়ন পরিষদে। এছাড়া কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক ইউনিয়ন পরিষদ, মধ্যপাড়া, চাপাইর, ফুলবাড়িয়া, শ্রীফলতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদেরও পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনায় ৫টি উপজেলার অন্তত ১৫ জন চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তাদের প্রত্যেকের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
সদরের স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হালিম বলেন, ব্যাংক থেকে লোন নিবো, এর জন্য ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করা প্রয়োজন। গত তিন দিন ধরে পরিষদে এসে চেয়ারম্যানকে না পেয়ে ট্রেডলাইসেন্সও নিতে পারছি না। পরে চেয়ারম্যানের মুঠোফোনে ফোন করলে তার ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।
কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক ইউনিয়ন পরিষদের সচিব হারুন অর রশিদ বলেন, চেয়ারম্যান পরিষদে আসেন না। প্রতিদিন বিকেলে নথি নিয়ে গিয়ে স্বাক্ষর করে নিয়ে আসতে হয়।
গাজীপুর স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) মো. ওয়াহিদ হোসেন বলেন, এরই মধ্যে আমরা কাপাসিয়ার ১১টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সরিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অন্যান্য ইউনিয়নের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। যারা অনুপস্থিত তাদের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।