নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: চলছে চৈত্র মাস। বাড়ছে তাপমাত্রা। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গাজীপুর মহানগরে বাড়ছে মশার উপদ্রব। বাসাবাড়ি, দোকানপাট, অফিস-আদালত, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সর্বত্রই মশার রাজত্ব। মশা নিধনে ওষুধ না ছিটানো এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে মশার ঘনত্ব বেড়েছে বহুগুণ। শিল্পনগরী এখন মশার নগরীতে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মশা নিধনের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নীরবতায় মশারা যেন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। গ্রিন ও ক্লিন সিটি গড়ার প্রতিশ্রুতি যেন শুধু আশ্বাসেই আটকে আছে। উচ্চ দ্রব্যমূল্য ও গরম ছাপিয়ে মশার উপদ্রব এখন নগরবাসীর জন্য ‘গোদের উপর বিষফোড়া’ হয়ে দেখা দিয়েছে। জলাশয়গুলো মশার প্রজননের নিরাপদ ও উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এলাকাবাসী দিনে যেমন মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ, তেমনি সন্ধ্যার পর পুরো নগরী মশার অভয়াশ্রমে পরিণত হয়। কয়েল জ্বালিয়ে, মশারি টানিয়ে, ইলেকট্রিক ব্যাট বা ওষুধ স্প্রে করে কোনোভাবেই মশার আক্রমণ প্রতিহত করা যাচ্ছে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, মহানগরীর ৫৭টি ওয়ার্ডে মশক নিধনের জন্য উন্নত প্রযুক্তির শতাধিক ফগার মেশিন ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ভেহিকল মাউন্টেন ফগার মেশিন রয়েছে। রয়েছে পোল্যান্ডের তৈরি ডেন্টাসাইড ২৫০ নামক মশার ওষুধ। কিন্তু এখনো নগরীতে মশকবিরোধী জোরালো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
মহানগরীর উত্তর ছায়াবীথি এলাকার আমেনা খাতুন বলেন, ‘মশা আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। মশার যন্ত্রণায় ঘরের দরজা-জানালা খোলা রাখা যায় না। বাচ্চারা পড়তে বসে মশার কামড়ে অস্থির হয়ে যায়। দিনের বেলায়ও কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হয়। সন্ধ্যার পর ঘরে থাকা যায় না। মশা যেখানে কামড়ায়, সেখানে যন্ত্রণা করে, লালচে হয়ে যায়।’
মাধববাড়ী এলাকার ব্যবসায়ী শ্রীনিবাস চন্দ্র বলেন, ‘আমাদের এলাকায় অনেক মশা। সরকারি কোয়ার্টারে মশার ওষুধ ছিটানো হয় দেখছি, কিন্তু আমাদের এলাকায় দেয় না। রাত-দিন সারাক্ষণ গরম ও মশার কামড়ে জীবন অতিষ্ঠ।’
দক্ষিণ ছায়াবীথি এলাকার গৃহিণী আয়েশা বেগম বলেন, ‘আমাদের এখানে মশার ওষুধ ছিটাতে দেখা যায় না। কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করব, যেন দ্রুত আমাদের এলাকায় মশার ওষুধ ছিটানো হয়। মশা অনেক বেড়ে গেছে। দিনে ঘুমাতে গেলে বা সন্ধ্যার পর থেকে মশারি টাঙিয়ে রাখতে হয়। মশার সমস্যা খুবই জটিল হয়ে পড়েছে।’
এ নিয়ে কথা হলে গাজীপুরের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন মাহমুদা আক্তার জানান, মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় আবদ্ধ জলাশয়, নালা ও ময়লার স্তূপ রয়েছে। শীতের শেষে সামান্য বৃষ্টি হওয়ার পর এসব স্থানে মশার বংশবিস্তারের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তাপমাত্রা বাড়ায় এসব স্থানে যে মশার ডিম ছিল, সেগুলো থেকে মশার ঘনত্ব বেড়ে গেছে।
মশা নিধনে সিটি করপোরেশনকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন গাজীপুর নাগরিক ফোরামের সভাপতি জালাল উদ্দিন। তিনি বলেন, মশা মারার ওষুধ ছিটানো, বিভিন্ন জলাশয়, নর্দমা ও ডোবা পরিষ্কার করা—এসব দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। সেই সঙ্গে যেসব জলাশয় আছে, সেসব স্থানে লার্ভিসাইড, অ্যাডাল্টিসাইট কিংবা গাপ্পি মাছ ছাড়তে হবে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম শফিউল আজম বলেন, ‘নাগরিকদের এসব সমস্যার বিষয়ে আমরা সচেতন। বিভিন্ন সময়ে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে, নানা পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। মশকনিধনে নাগরিকদের আরও সচেতন করতে কাজ চলছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।