নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুর-১ (কালিয়াকৈর ও গাজীপুর সিটির একাংশ) আসনে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সরগরম রাজনৈতিক মাঠ। বিএনপির পাঁচজন হেভিওয়েট নেতা প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে আছেন, আর প্রথমবারের মতো এখানে ‘চমক’ দেখানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
বর্তমান সীমানা অনুযায়ী গাজীপুর-১ আসন গঠিত কালিয়াকৈর উপজেলা ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ১–১৮ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে। শিল্প ও কৃষি প্রধান এই আসনে মোট ভোটার ৬ লাখ ৯৫ হাজার ৮৬৪ জন—যার মধ্যে পুরুষ ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৫১৫, নারী ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৮ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১১ জন।
তবে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবে সীমানা পরিবর্তন করে সিটি করপোরেশনের মাত্র ১–১২ নম্বর ওয়ার্ড এই আসনে রাখার কথা বলা হয়েছে।
বিএনপি থেকে আলোচনায় থাকা পাঁচ সম্ভাব্য প্রার্থী হলেন—কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব চৌধুরী ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক মেয়র মজিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রমবিষয়ক সহসম্পাদক হুমায়ূন কবীর খান, গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকার।
চৌধুরী ইশরাক হঠাৎ করেই আলোচনায় এসেছেন বাবার রাজনৈতিক পরিচয়ের সূত্রে এবং সম্প্রতি জেলা বিএনপির সদস্য সচিব হওয়ায় তার মনোনয়ন নিয়ে জল্পনা বাড়ছে। তবে কালিয়াকৈরে বিএনপির কমিটি গঠনকে ঘিরে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ও কর্মসূচি তৃণমূলে অস্থিরতা তৈরি করেছে।
কাজী ছাইয়েদুল আলম বলেন, “তৃণমূল জনগণ আমাদের শক্তি। ছোটখাটো অন্তঃকোন্দল থাকবেই, কিন্তু দল সবার আগে। তারেক রহমানের কাছে সবার তথ্য রয়েছে, যাকে মনোনয়ন দেবে, আমরা সবাই তার হয়ে কাজ করব।”
ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, “দল যাকে নমিনেশন দেবে আমরা তার হয়ে কাজ করব। আমরা ভোটারদের কাছে যাচ্ছি এবং ৩১ দফা বাস্তবায়নে কাজ করছি।”
বিএনপির বিপরীতে জামায়াতে ইসলামী এরই মধ্যে প্রার্থী ঘোষণা করেছে—সাবেক সচিব শাহ আলম বকশী। তিনি তৃণমূলে সভা-সমাবেশ, ধর্মীয় ও সামাজিক আয়োজন, এবং ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
শাহ আলম বকশী বলেন, “ভোটার হচ্ছে প্রাণ। আমরা তাদের সুখ-দুঃখ বোঝার চেষ্টা করছি, দোয়া ও ভোট চাচ্ছি। খুব ভালো সাড়া পাচ্ছি।”
২০০৮ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় গাজীপুরে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে পারেনি জামায়াত। তবে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে তারা সক্রিয় হয়ে উঠেছে এবং এবার প্রথমবারের মতো এই আসনে জয়ের লক্ষ্য নিয়েছে।
স্বাধীনতার পর থেকে গাজীপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কেউ ক্ষমতায় আসেনি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বহু নেতা-কর্মীর নামে মামলা হয়েছে; অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন বা আত্মগোপনে আছেন। এই পরিস্থিতি ভোটের সমীকরণে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
অন্যদিকে বিএনপি ও জামায়াতের ভোটব্যাংক থাকলেও, সংসদ নির্বাচনে তারা কখনো জয়ী হয়নি—যদিও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপি মেয়র ও ভাইস চেয়ারম্যান এবং জামায়াত ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।