নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে গাজীপুর-১ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা বেড়েছে বহুগুণে। নির্বাচনের তারিখ এখনো ঘোষণা না হলেও বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও গণঅধিকার পরিষদসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা মাঠে নেমেছেন জনসংযোগ ও সংগঠন গোছানোর কাজে।

তবে বিএনপিতে দেখা দিয়েছে তীব্র বিভাজন। দীর্ঘদিন ধরেই চারটি গ্রুপে ভাগ হয়ে কাজ করছেন দলটির স্থানীয় নেতারা। এর ফলে আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে দ্বন্দ্ব আরও গভীর হচ্ছে বলে মনে করছেন দলীয় সূত্র।
গাজীপুর-১ আসনে বিএনপির রাজনীতি বর্তমানে চারটি গ্রুপে বিভক্ত। এই চার গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন— ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী ছাইয়্যেদুল আলম বাবুল, কেন্দ্রীয় সহ-শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীর ছেলে ও জেলা বিএনপির সদস্যসচিব চৌধুরী ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকী, এবং সাবেক পৌর মেয়র ও কেন্দ্রীয় নেতা মজিবুর রহমান। এরা সবাই ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশী।
কাজী ছাইয়্যেদুল আলম বাবুল বলেন, “দলের কঠিন সময়ে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে পেরেছি। তাই মনোনয়নের ব্যাপারে আমি আশাবাদী।”
হুমায়ুন কবির খান জানান, “দল যদি মনোনয়ন দেয়, ধানের শীষকে বিজয়ী করে আনবো।”
অন্যদিকে মজিবুর রহমান বলেন, “মেয়র থাকাকালে এলাকার উন্নয়ন করেছি। জনগণ পাশে পেয়েছি, এবার দল আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে আশা রাখি।”
চৌধুরী ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, “আমার বাবার অবদান এলাকার মানুষ ভুলে যায়নি। আমি তাঁর পথ অনুসরণ করে জনগণের পাশে আছি। দল নিশ্চয়ই আমাকে বিবেচনা করবে।”
বিএনপিতে বিভাজন থাকলেও জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে প্রার্থী নির্ধারণ স্পষ্ট।
জামায়াতের পক্ষ থেকে সাবেক সচিব শাহ আলম বকশি প্রার্থী হয়েছেন। তিনি বলেন, “জনগণ এখন আমাদের কথা শুনছে। আগামীর নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লার জয় হবে বলে আমরা আশাবাদী।”
অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী জি এম রুহুল আমিন বলেন, “মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। পুরনো দলগুলোর শাসন দেখে ক্লান্ত জনগণ এবার বিকল্প নেতৃত্বে আস্থা রাখবে।”
গাজীপুর-১ আসনটি পুরো কালিয়াকৈর উপজেলা এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৭ থেকে ১২ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত।
এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৭৪ জন — এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৩৭ হাজার ২৪১ জন, নারী ২ লাখ ৩৮ হাজার ২৭ জন, এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৬ জন।
২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে সীমানা পুনর্নির্ধারণের মাধ্যমে বাসন, কোনাবাড়ী ও কাশিমপুর ইউনিয়ন যুক্ত হয় এ আসনে। পরবর্তী সময়ে গাজীপুর সিটির ওয়ার্ডসমূহ যোগ করে আবারও সীমারেখা পরিবর্তন করা হয়।
দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুর-১ আসন ছিল আওয়ামী লীগের দখলে। ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত টানা চারবার এ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এর আগে ১৯৯১ ও ২০০১ সালে এমপি হন অ্যাডভোকেট রহমত আলী, আর ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে জয়ী হন বিএনপির তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বর্তমানে দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং অনেক নেতা পলাতক।
নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও চলছে আলোচনা। কোনাবাড়ীর ব্যবসায়ী বাবুল হোসেন বলেন, “আওয়ামী লীগ না থাকলে বিএনপির সম্ভাবনা বেশি, তবে জামায়াতের জনপ্রিয়তাও বেড়েছে।”
মধ্যপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা ইকবাল হোসেন দিলুর ভাষায়, “এ আসনে দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের প্রভাব ছিল। এবার হয়তো বিএনপির সুযোগ আছে। তবে হিন্দু ভোট আর আওয়ামী লীগের সমর্থকরা যে দিকে যাবে, সেদিকেই ফল নির্ধারিত হবে।”
গাজীপুর-১ আসনে এবার মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিএনপির ভেতরের বিভাজন ও ইসলামী ধারার দুটি দলের সংগঠিত তৎপরতার মধ্যে। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর প্রার্থী তালিকা ও জোটগত অবস্থান চূড়ান্ত হলে এ আসনটি দেশের অন্যতম আলোচিত নির্বাচনী এলাকায় পরিণত হতে পারে— এমনটাই বলছেন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



