জুমবাংলা ডেস্ক : নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জে শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) তৃতীয় দফায় গাজী টায়ার কারখানার ওয়েস্টিজ গোডাউনে জ্বলেছে আগুন। পরে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিটের ৫০ মিনিটের প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণ এসেছে। এদিকে ঢাকার বংশালে পান্না সাইকেল স্টোরে গাজী টায়ার শেষ হয়েছে সপ্তাহখানেক আগে। তখন এ দোকানে প্রতিটি গাজী টায়ার বিক্রি হয়েছে ৭০০ টাকা করে। অথচ এক সপ্তাহ আগেই দাম ছিল ৫২০ টাকা।
বংশালের এক বিক্রেতা বললেন, দোকানে গাজীর মাল আনতে পারতাছি না। সাপ্লাই এখন বন্ধ হইয়া গেছে। গাজীর মাল বন্ধ হওয়ায় অন্য কোম্পানিরাও দাম বাড়াইয়া দিছে। শুনতেছি টায়ারের কাঁচামালেরও নাকি সংকট লাগছে। কোম্পানিরা বলতেছে রাবারের দাম অত্যধিক বাইড়া গেছে। সেজন্য কয়েকদিন আগে আমার রূপসা টায়ার আনতে হইচে বেশি দামে।
পান্না সাইকেল স্টোরের সামনে রূপসা ও আমান গ্রুপের টায়ার ঝুলছিল। আগের চেয়ে এ দুই কোম্পানির পাইকারি দর ৯০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৭০ টাকায়।
পাশের দোকান আধুনিক সাইকেল স্টোরের বিক্রেতা সুমন মিয়া বলেন, পাখি টায়ার ৬৫০ টাকা, আর গাজী টায়ার ৭৫০ টাকা। গাজী এখন মার্কেটেও তেমন নাই।
ফজলু সাইকেল স্টোরের বিক্রেতা বলেন, গাজী গ্রুপের টায়ার বাজারে ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন ছিল। এটির কারখানায় আগুন লাগার ঘটনার পর থেকেই সব টায়ারের দাম বাড়ছে। মূলত অন্য কোম্পানিরা এখন সুযোগ নিচ্ছে আরকি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চালান হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, নিয়মিত রিকশা চালালে একটি টায়ার আড়াই মাস টিকে। আগে ৫২০ টাকা দিয়ে টায়ার কিনলেও সম্প্রতি তিনি কিনেছেন ৭০০ টাকায়।
তিনি বলেন, আমরা অল্প আয়ের মানুষ। কেমনে কইরে এত দাম দিয়ে টায়ার কিনমু? রিকশায় সবচেয়ে বেশি খরচ হয় টায়ার। তিন চাক্কার কোনো না কোনোটা প্রতি মাসে লাগাতি হয়।”৫০টি রিকশার মালিক বেলাল মোল্লা। তার গ্যারেজ বউ বাজার বালুর মাঠ এলাকায়। তিনি গাজী ও রূপসা মিলিয়ে ১৫টি টায়ার আগে থেকেই কিনে রেখেছিলেন। তাই নতুন করে এখনও টায়ার কিনতে হয়নি তার।
তার প্যাডেলচালিত রিকশা রয়েছে ৩৫টি এবং ব্যাটারিচালিত রিকশা রয়েছে ১৫টি। প্যাডেলচালিত রিকশার টায়ার ছয় থেকে আট মাস পর্যন্ত টিকলেও ব্যাটারিচালিত রিকশার টায়ার আড়াই মাসের মতো টিকে বলে জানান তিনি।
গাজী টায়ারসের ঘটনায় শঙ্কা প্রকাশ করে কে তিনি বলেন, এখন এই টায়ারগুলা ফুরাইয়া গেলে, আমি বিপদে পইড়া যামু। গাজীর গ্রুপে আগুন লাগছে তাই অন্য কোম্পানির কী হইছে? তাগোর দাম বাড়ানো লাগেবো কেন? আসলে সবাই সুযোগ নেয়। এদেরকে সরকারে ধরা দরকার। দিনশেষে বিপদে পড়ে গরিবরা। তাগোর ব্যবসা তো করতেছেই।
ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, ভাঙচুরের মধ্যে দুই দফায় লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে নায়ারণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ারসের কারখানায়। এতেই এ ব্র্যান্ডের নির্দিষ্ট পণ্যগুলোতে ব্যাপক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
বংশালে মুন সাইকেল স্টোরের বিক্রেতা শাহাবুদ্দিন বলেন, আন্দোলনের পরে গাজী গ্রুপে ঝামেলা হওয়ার পরে থেকে টায়ারের দাম বাড়ছে।
বংশালের সাইকেলের বিভিন্ন পণ্যের পাইকারি দোকান গ্রিন লাইফ সাইকেল স্টোরের টায়ার বিক্রেতা রাজিন বিন শহীদ বলেন, গাজী টায়ারসের কারখানায় আগুনের ঘটনার পর রাতারাতি রিকশার টায়ারের দাম বাড়ছে ১০০ টাকা করে। এছাড়া সাইকেলের টায়ারের দাম বাড়ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত।
গাজীর গোডাউনে লুটপাট ও কারখানায় আগুন লাগার কারণে কোম্পানিগুলো সুবিধা নেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রতিটি টায়ার উৎপাদনে আগে তাদের যে উৎপাদন খরচ ছিল, এখনও তাই আছে। কিন্তু বাজারে টায়ারের বড় কোম্পানি গাজীর অনুপস্থিতিতে এই অপকর্মগুলো করতেছে অন্যান্য কোম্পানিগুলো।
এসময় তিনি প্রতিবেদককে একটি কোম্পানির রিসিট দেখিয়ে বলেন, তারা সাইকেলের প্রত্যেকটা টায়ারে দাম বাড়িয়েছে ২৫ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। আগুন লাগার আগে রাবারের সমস্যা নাই, বাজার স্বাভাবিক। আর আগুন লাগার পরে কোম্পানিগুলোর নানা অজুহাত।
রিকশা-ভ্যানের টায়ার বিক্রেতারা টায়ারের দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে রাবারের দাম বাড়ানোর কথা জানালেও দাম বাড়েনি বড় গাড়ির টায়ারের।
মহাখালীতে খুচরায় টায়ার বিক্রির বিক্রয়কেন্দ্র শাকিল মটরসের বিক্রেতা মো. মোজাহার আলী বলেন, আমার কাছে প্রাইভেট কার, জিপসহ বিভিন্ন বড় গাড়ির টায়ার আছে। এসবের কোনোটারই দাম তেমন বাড়ে নাই।
গাজী গ্রুপ মূলত রিকশা-ভ্যানের টায়ার তৈরি করে। তারা বড় গাড়ির টায়ার বিক্রি করে না। আর দেশীয় কোনো কোম্পানিই বড় গাড়ির টায়ার তৈরি করে না। এগুলো বিদেশে থেকে আসে। এ কারণে এর প্রভাব নেই বলে তিনি তুলে ধরেন।
সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।