গিরগিটির মতো মুহূর্তেই রং বদলাবে বিএমডব্লিউর যে গাড়ি
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে শুরু হয়েছে কনজিউমার ইলেক্ট্রনিক্স শো বা সিইএস ২০২৩। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় ইলেক্ট্রনিক পণ্যের প্রদর্শনী হিসেবে পরিচিত এই প্রদর্শনীতে পৃথিবীর সব বড় বড় কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠান তাদের সর্বশেষ প্রযুক্তি সমৃদ্ধ পণ্য প্রদর্শন করে।
আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স কিংবা বৈদ্যুতিক মোটরসহ বিশ্বের অটোমোবাইলের জগতে দিন দিন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। ফলে একটি গাড়ি এখন আর শুধু একটি চার চাকার বাহনই নয়, বরং এমন একটি বাহন যার অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রিত হয় ইলেক্ট্রনিক্সের ব্যবহারে।
প্রযুক্তির এই উৎকর্ষতার চরম প্রদর্শন ঘটিয়ে বরাবরের মতোই এবারের লাস ভেগাস সিইএস এ আলোড়ন তুলেছে জার্মান অটোমোবাইল জায়ান্ট বিএমডব্লিউ। স্বয়ংক্রিয়ভাবে রং পরিবর্তনে সক্ষম এমন একটি গাড়ি নিয়ে এসেছে প্রতিষ্ঠানটি, যা চালক বা মালিকের মর্জি অনুযায়ী নিমিষেই গায়ের রং পরিবর্তন করে নানারূপ ধারণ করতে পারে।
অবশ্য রং পরিবর্তনে সক্ষম গাড়ি তৈরির ধারণাটি বিএমডব্লিউ এর জন্য নতুন নয়। এর আগের বছরের সিইএস প্রদর্শনীতে গাড়ির বাইরের রং পরিবর্তনে সক্ষম একটি গাড়ি প্রদর্শন করেছিল এই জার্মান অটোমোবাইল প্রতিষ্ঠানটি।
তবে আইইএক্স ফ্লো নামের আগের মডেলের এই গাড়িটির বাইরের সাদা, কালো ও ধূসর মাত্র এই তিনটি রংয়ে পরিবর্তিত হতে পারত। সেই গাড়িটি ছিল ইলেক্ট্রনিক ইংক বা ই-ইংক টেকনোলজি ব্যবহার করে নির্মিত বিশ্বের প্রথম গাড়ি।
তবে আগের সেই মডেলের থেকে এবারের কনজিউমার ইলেক্ট্রনিক্স শোতে প্রদর্শিত বিএমডব্লিউর নতুন মডেলের এই গাড়িতে ব্যবহৃত ই-ইংক প্রযুক্তির ফারাকটা বিশাল। বিএমডব্লিউ আই এক্স গাড়িটির রংয়ের পরিবর্তন মাত্র তিনটি রংয়ে সীমাবদ্ধ থাকলেও এবারের গাড়িটি সম্পূর্ণ রঙিন। অর্থাৎ চালক চাইলে গাড়িটিকে ৩২টি আলাদা আলাদা রঙে সাজাতে পারবেন। এমনকি সম্ভব হবে ভিন্ন ভিন্ন রঙের কম্বিনেশন ও অসংখ্য আলাদা আলাদা প্যাটার্নও।
বিএমব্লিউ আই ভিশন ডি নামের গাড়িটির গায়ে রয়েছে ২৪০টি আলাদা আলাদা কালার সেল। যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পূর্ণ আলাদাভাবে রং পরিবর্তন করতে পারে। ফলে এক নিমিষেই সাদা থেকে কালো, কিংবা কালো থেকে রঙিন কিংবা রেসিং কারের মতো ডোরাকাটা স্ট্রাইপ অর্থাৎ চালকের মর্জিমতো যে কোনো প্যাটার্নের রং গাড়িটি ধারণ করতে পারে।
তবে গিরগিটির মতো রং পরিবর্তনের সক্ষমতার পাশাপাশি এই বিএমডব্লিউ আই ভিশন ডি গাড়িটিতে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ অন্যান্য সব প্রযুক্তির সর্বশেষ সংযোজন। বিশেষ করে গাড়িটিতে রয়েছে আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলেজেন্স সমৃদ্ধ ভার্চুয়াল অ্যাসিসট্যান্স। এই প্রযুক্তির ফলে গাড়িটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালকের ইশারায় সাড়া দেয়ার পাশাপাশি চালকের সঙ্গে কথাবার্তাও বলতে পারে। যা অনেকটা ৮০ এর দশকের জনপ্রিয় টেলিভিশন সিরিজ নাইটরাইডারের গাড়িটির মতো। এ ছাড়া ফিউচারিস্টিক লুকিংয়ের গাড়িটিতে আলাদা কোনো ড্যাশবোর্ডই নেই। গাড়িটির উইন্ডশিল্ডই ড্যাশবোর্ড হিসেবে ব্যবহৃত হবে, যা হবে সম্পূর্ণ কম্পিউটারাইজড।
সব মিলিয়ে ব্যবহারকারীকে অনেকটা বিএমডব্লিউর রাজকীয় ও সম্ভ্রান্ত অনুভূতির সঙ্গে বৈদ্যুতিক গাড়ি টেসলার ফিউচারিস্টিক আমেজও উপহার দেবে আই ভিশন ডি গাড়িটি। এটির নামের শেষে থাকা ডি দিয়ে বোঝানো হচ্ছে ডিজিটাল ইমোশনাল এক্সপেরিয়েন্স।
তবে বিএমডব্লিউর গাড়িটিতে ব্যবহৃত ইলেক্ট্রনিক ইংক বা বৈদ্যুতিক কালি প্রযুক্তির প্রথম উদ্ভাবন করেছিল যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ই-ইংক করপোরেশন। এর আগেও তাদের এই প্রযুক্তি ই-রিডার্স ও বিভিন্ন স্মার্টওয়াচে ব্যবহৃত হয়েছে। সব মিলিয়ে গত কয়েক বছরে নানা পণ্যের ক্ষেত্রে এই ই-ইংক প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষ্য করা গেলেও বিশ্বের অটোমোবাইল খাতে এই ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার এই প্রথম বলে জানিয়েছে বিএমডব্লিউ।
আপাতত প্রোটো টাইপ মডেল হিসেবেই গাড়িটিকে প্রদর্শন করছে বিএমডব্লিউ। তাই এখনই বাজারে আসছে না এই মডেলটি। তবে প্রদর্শনের প্রথম দিন থেকেই সিইএস এর দর্শনার্থী ও গাড়িপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে গাড়িটি।
আরলিংটন ব্রিউবেকার নামের দর্শনার্থী রয়টার্সকে বলেন, ‘এই ধরনের গাড়ি টেলিভিশনেই দেখেছি। নিজের চোখে দেখার আগ পর্যন্ত আমি বিশ্বাসই করতে পারিনি যে এই ধরনের গাড়ি সত্যিই আছে। এটি এমন একটা জিনিস যা সম্পর্কে আমি আগে থেকে তেমন কিছুই জানতাম না। গত বছর এটিতে মাত্র দুটো রং ছিল, আর এবার নানা রঙের সমাহার। নিশ্চিতভাবেই আমি এই গাড়িটিকে চালাব।’
বিশেষ করে নিমিষেই রং পরিবর্তন করে গাড়িটির বহুরূপী সাজার এই সক্ষমতাই মুগ্ধ করছে দর্শনার্থীদের। এ ব্যাপারে নিউইয়র্ক থেকে সিইএস এ আসা প্রযুক্তিবিদ ব্রায়ানা রোওজার বলেন, ‘আপনি চাইলেই নিমিষেই গাড়িটির চেহারা পরিবর্তন করতে পারবেন, এটি অসাধারণ অনুভূতি।’
গাড়িটির নির্মাণে নেতৃত্ব দেন বিএমডব্লিউর ই-ইংক কর্মসূচির প্রজেক্ট লিডার স্টেলা ক্লার্ক। তিনি রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা এই ডিজাইনটি করেছি কারণ আমাদের মনে হয় মানুষ তা পছন্দ করবে। কারণ গত বছরই আমরা দেখেছি গাড়িটির সৌন্দর্য মানুষ পছন্দ করেছে।’
সম্পূর্ণ নতুন কনসেপ্টের এই গাড়িটি তৈরিতে নানা প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে হয়েছে উল্লেখ করে স্টেলা ক্লার্ক রয়টার্সকে বলেন, ‘আমাদের প্রকৌশলীদের জন্য গাড়িটি তৈরি করা ছিল খুবই কঠিন একটি চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে গাড়িতে ই-ইংক প্রযুক্তির ব্যবহার ছিল সম্পূর্ণ নতুন একটি বিষয়। পাশাপাশি এটিকে থ্রিডিতে রূপান্তর করার মতো বিষয়গুলোসহ সবই ছিল সম্পূর্ণ নতুন।’
ধারণা করা হচ্ছে, বাজারজাতের শুরুতেই বিশ্বের অটোমোবাইলপ্রেমী মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন তুলবে বিএমডব্লিউর এই রং পরিবর্তনে সক্ষম গাড়িটি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।