
স্পোর্টস ডেস্ক : ১৩ মার্চ ২০২০-এ বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকএসপি) ছিল তারাদের মিলন মেলা। মুশফিকুর রহিম, মেহেদি মারুফ, সোহরাওয়ার্দী শুভরা ফিরে গেলেন ২০০০ সালে। ২০০০ ব্যাচের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে শুধু ক্রিকেটাররাই ছিলেন না, ফুটবলার, সাতারু, শুটার থেকে শুরু করে ছিলেন সেই ব্যাচের সকলেই। তবে সকলের মধ্যমণি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিক।
সকাল থেকেই দেখে গেছে নানা কার্যক্রমের। বর্ণাঢ্য র্যালি দিয়ে শুরু, দল বেঁধে সকলকে নিয়ে মুশফিকের নাচ। সঙ্গে ব্যান্ড পার্টি। অডিটোরিয়ামে কোচ-শিক্ষকরা তাদের ছাত্রদের নিয়ে নানা স্মৃতিচারণ এবং মন্তব্য করেন। এরপর ছিল মধ্যাহ্নভোজের বিরতি। অডিটরিয়াম থেকে বের হতেই তখন পাওয়া পেল মুশফিকের ক্রিকেট গুরু মতিউর রহমানকে যিনি ছোট বেলায় মুশফিকদের ক্রিকেট শিক্ষক ছিলেন।
সবার প্রিয় মতি স্যারের কাছেই জানতে চাওয়া হলো ছোট বেলার মুশফিকের গল্প। বর্তমান সময়ের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান কেমন ছিলেন সেটা বলতে গিয়ে স্মৃতির সব পুরনো পাতায় ফেরত গেলেন তিনি। জানালেন, ছোট থেকেই অসম্ভব প্রতিভাবান এবং নেতাসুলভ ছিলেন মুশফিক। ৩২ বছর বয়সী মুশফিক ছোট থেকেই পরিশ্রমী ছিলেন বলে জানান মতিউর রহমান।
মতি স্যার বলেন, ‘ছোট থেকেই বোঝা যেত সে প্রচন্ড প্রতিভাবান। তার কাজের লক্ষ্মণ দেখেই বোঝা যেত ভবিষ্যতে বড় কিছু একটা হবে, দেখেই বোঝা যেত। ওকে যে কাজটাই দেওয়া হত সে মনোযোগ দিয়ে করতো এবং সে সহজেই জিনিসটাকে রপ্ত করতো। ছোটবেলা থেকেই সে পরিশ্রমি ছিল এবং সে জানে যে পরিশ্রমের বিকল্প কোন কিছু নেই।’
‘বড় হতে গেলে পরিশ্রম করতে হবে। মেধাই সবকিছু নয়। মেধাটাকে জায়গামত দেখতে গেলে আমার কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। ওর সবচেয়ে ভালো গুণ ছিল যে যেখানেই যেত যে জিনিসটা তাকে নির্দেশ করা হত যে এই কাজটা কর সে কাজের মধ্যেই থাকতো। কখনোই স্যারদের কাছে অপ্রিয় হতনা। এ জন্য তার প্রতি সকলেরই বিকেএসপিতে প্রচুর ভালোবাসা।’ আরও যোগ করেন তিনি।
২০০৬ সালে বিকএসপি ছাড়েন মুশফিক। ২০০০ থেকে এই ৬ বছরে অনেক স্মৃতির সাক্ষী হয়েছেন মুশফিক। ভালো-মন্দ সব স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে মতি স্যার শোনালেন মুশফিকের কান ধরে টান মারার গল্প। শিক্ষকের নিষেধ অমান্য করে আচার খাওয়ায় কানে টান খেয়েছিলেন বাংলাদেশর সাবেক এই অধিনায়ক।
মজার ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মতি স্যার বলেন, `একদিন লাঞ্চ আসতে দেরি হচ্ছিল। বিকেএসপি থেকে আমাদের খাবার যেতো সুস্থ সুন্দর থাকার জন্য। তো লাঞ্চ আসতে দেরি হয়েছে সেই সময়ে আমি সবাইকে বলছি বাইরের কোন খাবার খাবানা। অনেকে ভাজা খায়, অন্যান্য জিনিস খায়।’
‘কোণায় গিয়ে দেখি সে আচার খাচ্ছে। রাগে দিলাম কান ধরে টান। এখনো বলে স্যার আপনার কান টানা আমার এখনো মনে আছে। তবে রাগ ছিল আমার, যেন ভয়ে অন্য কিছুর মধ্যে না জড়াতে পারে তারা। নিজের কাজের মধ্যে যেন থাকে, তারাও সতর্ক থাকতো। এখনো বলে স্যার আপনার কান টানা আমার এখনো মনে আছে।’ আরও যোগ করেন তিনি।
মতি স্যারের সঙ্গে কথোপকথন শেষ হতে না হতেই নামাজের সময় চলে আসে। শুক্রবার জুম্মার নামাজ এক সঙ্গেই আদায় করেন শিক্ষকসহ তাঁদের পুরাতন ছাত্ররাও। সবুজ পাঞ্জাবি সাথে করেই নিয়ে এসেছিলেন মুশফিক। তা পরেই চলে যান মধ্যাহ্নভোজে। এই দিনে সকলের মধ্যমণি হয়ে থাকা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান সকলের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিলেন, কাছে গিয়ে সবার খবর নিচ্ছিলেন। মাঠের মুশফিকের চেয়ে অন্যরকম এক মুশফিককেই দেখা গেছে এদিন।
মুশফিক সবার নজর কেড়েছিলেন দিনের শুরুতেই। কারণ ব্যাচের ১৩৫ জন ক্যাডেটকে সকাল বেলায় সামলেছেন ক্রিকেট মাঠে সতীর্থদের সামলে নেওয়ার মত করেই। গাঢ় নীল টি-শার্ট গায়ে দিয়ে সবার সঙ্গে দাঁড়িয়ে-বসে ছবি তোলা দিয়ে শুরু হয় মুশফিকের দিন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।