জুমবাংলা ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ভোলা ইস্যুতে আর কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ধৈর্য্যধারণ ও গুজবে কান না দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, একটি মহল অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্যে ফেসবুক ব্যবহার করে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে (ভোলা ইস্যু) ধৈর্য্যধারণ করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
যুবলীগের কাউন্সিলের প্রাক্কালে সংগঠনের ৩৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল রবিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে গেলে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন, একজন হিন্দুর ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে অবমাননাকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, পুলিশ ওই হিন্দু ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। সে সাধারণ ডায়েরী করে বলেছে, তার ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে অবমাননা করা হয়েছে। তিনি বলেন, যে মুসলিম ছেলেটি এ কাজটি করেছে তাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্যদেরও গ্রেফতার করা হবে। পাশাপাশি যারা এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা চালাচ্ছে তাদেরও গ্রেফতার করা হবে।
ভোলার ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যখনই দেশ অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে তখনই এক শ্রেণির লোক সব সময় দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালায়।
তিনি কোন গুজবে কান না দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এতে বিভিন্নভাবে সমাজ বিপদে পড়তে পারে। তাই প্রত্যেককে প্রকৃত ঘটনা জানতে হবে এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি কেউ যাতে ডিজিটাল প্রযুক্তির অপব্যবহার করতে না পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী প্রকৃত অপরাধীকে চিহ্নিত করতে সহায়তার পরিবর্তে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে এমন ধরনের বিষয় প্রচার না করার জন্য গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, কোন ধর্মের লোকজনের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা সরকার চায় ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে সকল ধর্মের মানুষ এক সঙ্গে বসবাস করবে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সব মানুষ লড়াই করেছে।
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন একজন মুসলমান কিভাবে ফেসবুকে হিন্দুর আইডি ব্যবহার করে হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে অবমাননা করতে পারে। তিনি এটাকে খুবই দুঃখজনক বিষয় উল্লেখ করেন। এই নজিরবিহীন ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিন ব্যক্তি নিহত এবং আরও অনেকে আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশংকাজনক।
তিনি প্রশ্ন তোলেন এ ঘটনার পেছনে উদ্দেশ্য কি? কেন লোকজন সমবেত হয়েছে এবং পুলিশের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে।
এ সময় মঞ্চে আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন। যুবলীগ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি কেবল একজন হিন্দুর ফেসবুক আইডি হ্যাক করেনি, বরং তার (হিন্দু ছেলে) কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন, অন্যথায় তার ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে আরো মিথ্য তথ্য দেয়ার হুমকি দেন।
প্রধানমন্ত্রী আশ্চার্যান্বিত হন এবং প্রশ্ন করেন ‘একজন মুসলিম কি করে একজন হিন্দুর ফেসবুক ব্যবহার করে রাসুল হযরত মুহম্মদ (সা:) কে অসম্মান করতে পারে।’
যুবকদের দেশের উন্নয়নের প্রধান শক্তি আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘তাদের এই শক্তিকে দেশের কল্যাণ এবং দেশ গড়ার কাজে ব্যবহার করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী পুনরায় সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি এবং মাদক বিরুদ্ধে আমরা অভিযান অব্যাহত রাখবো এবং এক্ষেত্রে যারাই অপরাধী হবে তাদের কোন ক্ষমা নেই, তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। কারণ আমরা যখন দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি তখন স্বাভাবিকভাবে কিছু মানুষের মধ্যে একটা লোভের সৃষ্টি হয়, যার ফলাফল আমাদের সমাজটাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। কাজেই এ ধরনের অন্যায়-অবিচার কখনো বরদাশত করা হবে না’।
প্রধানমন্ত্রী যুবলীগের কাউন্সিলের প্রসঙ্গে বলেন, যুবলীগের কাউন্সিল দরজায় কড়া নাড়ছে। কি করে এটাকে আরো শক্তিশালী এবং সফলভাবে সমাপ্ত করতে পারি সেজন্য এর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আমরা কথা বলছি।
তিনি বলেন, জাতীয় শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল নভেম্বরের মধ্যে শেষ করার প্রস্তুতি চলছে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিল ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোর কাউন্সিল যথাসময়ে অনুষ্ঠানের আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যথাসময়ে কাউন্সিল আয়োজনে সংগঠন আরো শক্তিশালী এবং সুশৃঙ্খল হয়।’
তিনি বাংলাদেশের প্রকৃত ইতিহাস এবং ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর অবদান সম্পর্কে জানার জন্য বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ এবং বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তানী গোয়েন্দা প্রতিবেদন নিয়ে রচিত‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অন ফাদার অব দি নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ পড়ে দেখার জন্য যুবলীগের নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপিত হবে এবং ২০২১ সালে উদযাপিত হবে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত সময়কে সরকার ‘মুজিব বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোকে এই অনুষ্ঠানটি তিনি ব্যাপকভাবে উদযাপনেরও আহবান জানান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।