জুমবাংলা ডেস্ক : চমৎকার অর্থনৈতিক অগ্রগতির বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র হয়ে উঠেছে। এই দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের স্তর ও গুণগত মান বাড়াতে একসঙ্গে কাজ করতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাত্কারে এ কথা বলেছেন ইউরোপিয়ান এক্সটারনাল অ্যাকশন সার্ভিসের (ইইএএস) উপমহাসচিব এনরিক মোরা। সমুদ্র নিরাপত্তা, সন্ত্রাস মোকাবেলা, সাইবার নিরাপত্তা, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশ ও ইইউ কিভাবে একসঙ্গে কাজ করতে পারে সে বিষয়ে ভাবনা জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশের সঙ্গে প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক সংলাপে ইইউ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিতে গত বুধবার ঢাকায় এসেছিলেন এনরিক মোরা। সফর শেষে গতকাল শুক্রবার তিনি ঢাকা ছাড়েন।
ইইএএস উপমহাসচিব এনরিক মোরা বলেন, সমুদ্র নিরাপত্তার জন্য তাঁদের একটি উদ্যোগ আছে। সেখানে তাঁরা বাংলাদেশের সঙ্গে মিলে কাজ করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী।
সমুদ্র নিরাপত্তা প্রসঙ্গে এনরিক মোরা বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ। আমি মনে করি, এটি বাংলাদেশের জন্যও একটি প্রধান স্বার্থ। ’
বাংলাদেশ ও ইইউর মধ্যে আরো ভালো সহযোগিতার জন্য পারস্পরিক বোঝাপড়ার ওপর জোর দেন ইইএএস উপমহাসচিব এনরিক মোরা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপে সমুদ্র নিরাপত্তা খাতে সম্পৃক্ততায় বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে।
কাজের পরিবেশ উন্নয়ন : এনরিক মোরা বলেন, বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্ক দ্রুত বিকশিত ও সম্প্রসারিত হচ্ছে এবং আগামী বছর উভয় পক্ষ তাদের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি করবে। সম্পর্কের মধ্যে আরো শক্তি সঞ্চার করার জন্য এটি একটি ভালো মুহূর্ত।
মোরা বলেন, এ বছরের শুরুর দিকে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্যদের (এমইপি) একটি প্রতিনিধিদল এ দেশে পোশাক কারখানা পরিদর্শন করেছে। কিভাবে নিরাপত্তার মানের উন্নতি এবং কাজের পরিবেশ আধুনিকীকরণ করা হয়েছে, তা তারা দেখেছেন।
এনরিক মোরা বলেন, ‘তাঁরা সন্তুষ্টি নিয়ে ব্রাসেলসে ফিরে গেছেন। তাঁরা এ দেশে কাজের পরিবেশ এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তার ভালো মান দেখেতে পেয়েছেন। ’
ইইএএস উপমহাসচিব এনরিক মোরা বলেন, এমইপিরা যা দেখেছেন তাতে অনেকাংশে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তাঁরা স্বীকার করেছেন, বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। এখন এমনকি ‘লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইনের (এলইইডি)’ সনদ পাওয়া বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ‘গ্রিন ফ্যাক্টরির’ কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ।
এক প্রশ্নের জবাবে মোরা বলেন, ‘সামাজিক ও পরিবেশগত সম্মতিতে উন্নতি খুবই ইতিবাচক। বাংলাদেশের শিল্প ভবিষ্যতের জন্য নিজের অবস্থান তৈরি করছে। স্পষ্টতই শিল্পের ভবিষ্যত্ পরিমাণের চেয়ে মানের ওপর বেশি নির্ভর করবে। ’ তিনি বলেন, এ ধরনের পরিবর্তনগুলো আংশিক ইউরোপের ভোক্তাদের কারণে হয়েছে। পোশাক কিভাবে তৈরি হচ্ছে, সে বিষয়ে তাদের ক্রমবর্ধমান দৃষ্টি রয়েছে। ইউরোপের অনেক শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড এটি বুঝতে পেরেছে এবং সেই অনুযায়ী তাদের পণ্য বাজারজাত করেছে।
জলবায়ু অর্থায়ন : মোরা বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ-খাওয়ানো এবং নবায়নযোগ্য উপায়ে পরিবর্তনের জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বৈশ্বিক পর্যায়ে ইইউ বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর বৈধ চাহিদাগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়েছে। তিনি বলেন, ইইউ ও এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো জলবায়ু অর্থায়নে বৃহত্তম জোগানদাতা। ২০২১ সালে ইইউ এ খাতে ২৩ বিলিয়নের ইউরো দিয়েছে।
কপ২৭ জলবায়ু সম্মেলনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য ক্ষতিপূরণ তহবিল নিশ্চিত করতে ইইউর প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেন এনরিক মোরা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রশমন ও অভিযোজন প্রচেষ্টায় ইইউ সহায়তা করছে। আমরা ঋণ এবং অনুদানের মাধ্যমে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিতে রূপান্তরের জন্য বড় ধরনের সহায়তা দেব। ’
রোহিঙ্গা সংকট : রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে এনরিক মোরা বলেন, এটা বাংলাদেশের একার ইস্যু নয়। আবার এটি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের দ্বিপক্ষীয় ইস্যুও নয়। তিনি বলেন, এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন হতে হবে।
এনরিক মোরা বলেন, ‘আমরা অস্ত্রসহ বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা এবং উন্নয়ন সহায়তা স্থগিতের মাধ্যমে মিয়ানমারের সামরিক কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করছি। ’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বার্তা খুবই স্পষ্ট। আর তা হলো মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক উত্তরণ দরকার। ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে আপনাদের (মিয়ানমারের জান্তা) সহযোগিতা করতে হবে। ’
পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে সাময়িকভাবে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের অব্যাহত উদার ভূমিকা ও পদক্ষেপের জন্য ইইউ তার কৃতজ্ঞতা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।