Close Menu
Bangla news
    Facebook X (Twitter) Instagram
    Bangla news
    • প্রচ্ছদ
    • জাতীয়
    • অর্থনীতি
    • আন্তর্জাতিক
    • রাজনীতি
    • বিনোদন
    • খেলাধুলা
    • শিক্ষা
    • আরও
      • লাইফস্টাইল
      • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
      • বিভাগীয় সংবাদ
      • স্বাস্থ্য
      • অন্যরকম খবর
      • অপরাধ-দুর্নীতি
      • পজিটিভ বাংলাদেশ
      • আইন-আদালত
      • ট্র্যাভেল
      • প্রশ্ন ও উত্তর
      • প্রবাসী খবর
      • আজকের রাশিফল
      • মুক্তমত/ফিচার/সাক্ষাৎকার
      • ইতিহাস
      • ক্যাম্পাস
      • ক্যারিয়ার ভাবনা
      • Jobs
      • লাইফ হ্যাকস
      • জমিজমা সংক্রান্ত
    • English
    Bangla news
    Home গোপনীয়তা রক্ষা করার ইসলামিক দিক:জীবনে প্রয়োগ করুন
    লাইফস্টাইল ডেস্ক
    লাইফস্টাইল

    গোপনীয়তা রক্ষা করার ইসলামিক দিক:জীবনে প্রয়োগ করুন

    লাইফস্টাইল ডেস্কMd EliasJuly 4, 202516 Mins Read
    Advertisement

    সেদিন ফেসবুক ফিডে হঠাৎই চোখ আটকে গেল সুমাইয়ার ছবিতে। নিজের অজান্তেই, তার সাথে প্রাইভেটে হওয়া একটি স্পর্শকাতর কথোপকথনের স্ক্রিনশট পোস্ট করা আছে – তার বন্ধু তানজিমের প্রোফাইল থেকে। সুমাইয়ার মুখে নীরব আর্তনাদ, চোখে অশ্রু আর প্রশ্ন: “কেন? এটা তো আমার খুব গোপন কথা ছিল!” তানজিম হয়তো ভেবেছে মজা করছে, কিন্তু সেই এক মুহূর্তের অসতর্কতায় ভেঙে পড়েছে বিশ্বাসের ভিত, ক্ষতবিক্ষত হয়েছে এক মানুষের ব্যক্তিগত জগৎ। এই ডিজিটাল যুগে, যেখানে আমাদের প্রতিটি ক্লিক, প্রতিটি শেয়ার, প্রতিটি মেসেজ ডাটার গহ্বরে সংরক্ষিত, সেখানে গোপনীয়তা রক্ষা করার ইসলামিক দিক শুধু একটি ধর্মীয় নির্দেশনা নয়, বরং ব্যক্তিসত্তা, সামাজিক শান্তি এবং ঈমানি দায়িত্বের মৌলিক ভিত্তি। ইসলাম গোপনীয়তাকে শুধু সম্মান করেনি, তাকে দিয়েছে পর্দার (হিজাব) মতো পবিত্র মর্যাদা – যা শুধু দেহ নয়, বাক্য, চিন্তা এবং তথ্যের জন্যও সমভাবে প্রযোজ্য। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোনো মুমিনের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবে, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন” (সহীহ মুসলিম)। এই হাদিসটি শুধু পরকালীন পুরস্কারের কথা বলে না, এটি আমাদের দৈনন্দিন আচরণের জন্য একটি উজ্জ্বল নীতি নির্ধারণ করে দেয় – গোপনীয়তা রক্ষা ঈমানের অঙ্গ।

    গোপনীয়তা রক্ষা করার ইসলামিক দিক

    • গোপনীয়তা রক্ষা করার ইসলামিক দিক: কুরআন-সুন্নাহর আলোকে মৌলিক নীতিমালা
    • ডিজিটাল যুগে গোপনীয়তা রক্ষা: ইসলামিক নির্দেশনা বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ ও কৌশল
    • পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কে গোপনীয়তা: ইসলামের ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি
    • গোপনীয়তা রক্ষায় ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি: ব্যক্তিগত, পেশাগত ও আধ্যাত্মিক জীবনে প্রভাব
    • জেনে রাখুন

    গোপনীয়তা রক্ষা করার ইসলামিক দিক: কুরআন-সুন্নাহর আলোকে মৌলিক নীতিমালা

    ইসলামে গোপনীয়তার ধারণাটি অত্যন্ত গভীর ও ব্যাপক। এটি শুধু কারো ‘রহস্য’ লুকানোর বিষয় নয়; বরং এটি ব্যক্তির সম্মান, সমাজের ভারসাম্য, পারিবারিক সুরক্ষা এবং ঈমানের সাথে জড়িত একটি মৌলিক অধিকার ও দায়িত্ব। গোপনীয়তা রক্ষা করার ইসলামিক দিকের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহর মাধ্যমে।

    • আল্লাহর নিকট গোপনীয়তার মর্যাদা: কুরআনুল কারিমে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, “তোমরা অন্যের গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান করো না…” (সূরা আল-হুজুরাত, ৪৯:১২)। এই আয়াতটি সরাসরি অন্য মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য, কথাবার্তা বা দোষত্রুটি সন্ধান করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়। এটি শুধু নিষেধাজ্ঞা নয়; বরং ব্যক্তির ব্যক্তিসত্তার প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত সম্মানের স্বীকৃতি। অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, “তিনি গোপন কথাও জানেন এবং যা তার চেয়েও গোপন তা-ও জানেন” (সূরা ত্ব-হা, ২০:৭)। এ থেকে বোঝা যায়, গোপনীয়তা এমন একটি পবিত্র বিষয় যা আল্লাহ নিজেই সম্মান করেন।

    • রাসূল (সা.)-এর সুস্পষ্ট নির্দেশনা ও অনুশীলন: নবী করিম (সা.) ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষায় ছিলেন অত্যন্ত সতর্ক। তিনি সাহাবাদেরকে বারবার সতর্ক করেছেন অন্যের ঘরের ভিতর উঁকি দিতে, অন্যের কথোপকথন গোপনে শুনতে বা অন্যের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে। একটি সুপ্রসিদ্ধ হাদিসে তিনি ইরশাদ করেন, “হে ঐ সব লোকেরা যারা মুখে ঈমান এনেছ কিন্তু ঈমান এখনও তাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি! তোমরা মুসলমানদের দোষত্রুটি অন্বেষণ করো না। যে মুসলমানদের দোষত্রুটি অন্বেষণ করে, আল্লাহ তার দোষত্রুটি অন্বেষণ করেন। আর আল্লাহ যার দোষত্রুটি অন্বেষণ করেন, তিনি তাকে লাঞ্ছিত করেন, যদিও সে তার ঘরের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকে” (সুনান আবু দাউদ, তিরমিযী)। এই হাদিসটি গোপনীয়তা লঙ্ঘনের ভয়াবহ পরিণতির দিকে ইঙ্গিত করে – তা হতে পারে পার্থিব লাঞ্ছনা বা আখিরাতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি।

    • গোপনীয়তার পরিধি: ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ: ইসলামি দৃষ্টিকোণে গোপনীয়তার পরিধি ব্যাপক:

      • ব্যক্তিগত গোপনীয়তা: ব্যক্তির চিন্তা-ভাবনা, প্রার্থনা, ত্রুটি-বিচ্যুতি, আর্থিক অবস্থা, স্বাস্থ্য সমস্যা, ব্যক্তিগত কথোপকথন (ই-মেইল, মেসেজ, ফোনকল ইত্যাদি) সবই এর অন্তর্ভুক্ত। কারো অনুমতি ছাড়া তার ফোন চেক করা, ব্যক্তিগত ডায়েরি পড়া বা গোপনে রেকর্ড করা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
      • পারিবারিক গোপনীয়তা: স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্কের বিষয়াদি ইসলামে অত্যন্ত গোপনীয়। রাসূল (সা.) বলেছেন, “কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট অবস্থায় থাকবে সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হয় এবং স্ত্রী তার সাথে মিলিত হয়, অতঃপর সে তার গোপনীয়তা (শয্যাসঙ্গের বিবরণ) প্রচার করে” (সহীহ মুসলিম)। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের দুর্বলতা বা ব্যক্তিগত বিষয়ও গোপন রাখা অপরিহার্য।
      • অন্যের দোষত্রুটি গোপন করা: ইসলামে কারো দোষত্রুটি গোপন করা (সাতর রাখা) একটি মহৎ কাজ। এটি সমাজে লজ্জা ও সম্মান রক্ষায় সহায়ক। তবে, যদি কারো দোষত্রুটি প্রকাশ্যে আসে বা তা অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করার আশঙ্কা থাকে, তবে তা সংশোধনের জন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে জানানো জরুরি হতে পারে (যেমন বিচারক বা শাসক)।
    • গোপনীয়তা লঙ্ঘন: গিবত, নামিমাহ ও স্পাইয়িং: ইসলাম গোপনীয়তা লঙ্ঘনের বিভিন্ন রূপকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে:
      • গিবত (পরনিন্দা): কারো অনুপস্থিতিতে তার এমন দোষ আলোচনা করা যা সে অপছন্দ করে। কুরআনে একে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে (সূরা আল-হুজুরাত, ৪৯:১২)। গিবত শুধু কথায় নয়, ইশারায়, লেখায় বা ছবি/ভিডিও শেয়ার করেও হতে পারে।
      • নামিমাহ (চুগলখোরী): একজনের কথা অন্যজনের নিকট পৌঁছে দেওয়া যাতে তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয় বা সম্পর্ক নষ্ট হয়। রাসূল (সা.) বলেছেন, “চুগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না” (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)।
      • তাজাসুস (অন্যের দোষ অনুসন্ধান): ইচ্ছাকৃতভাবে অন্যের দোষত্রুটি বা গোপনীয়তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা। এটি সূরা হুজুরাতের আয়াত দ্বারা সরাসরি নিষিদ্ধ।
      • অনুমতি ছাড়া প্রবেশ বা উঁকি দেওয়া: কারো ঘর, ব্যক্তিগত ডিভাইস বা ডকুমেন্টে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ বা উঁকি দেওয়াও গোপনীয়তা লঙ্ঘন।

    গোপনীয়তা রক্ষা করার ইসলামিক দিকের মূলকথা হলো: প্রতিটি মানুষের একটি পবিত্র ব্যক্তিগত পরিসর রয়েছে যা অলঙ্ঘনীয়। এই পরিসরকে সম্মান করা, এর সীমানায় অনধিকার প্রবেশ না করা এবং এর বিষয়বস্তু রক্ষা করা প্রতিটি মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব ও নৈতিক বাধ্যবোধের অংশ। এটি শুধু নিষেধের বিষয় নয়; বরং সম্মান, দয়া এবং সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠার একটি সক্রিয় পদক্ষেপ।

    ডিজিটাল যুগে গোপনীয়তা রক্ষা: ইসলামিক নির্দেশনা বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ ও কৌশল

    আজকের বিশ্ব, বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, গোপনীয়তা রক্ষা করার ইসলামিক দিক বাস্তবায়ন করা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে জটিল। সোশ্যাল মিডিয়া (ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম), মোবাইল ব্যাংকিং, সার্বক্ষণিক অনলাইন কানেক্টিভিটি আমাদের জীবনকে সহজ করলেও গোপনীয়তার জন্য তৈরি করেছে বিশাল হুমকি। ঢাকার একজন কলেজ ছাত্র রাফিদের কথা ভাবুন। তার এক বন্ধু প্রেমে ব্যর্থ হয়ে তার সাথে হোয়াটসঅ্যাপে ভাগাভাগি করেছিল কিছু গভীর অনুভূতি। কিছুদিন পর রাফিদ হঠাৎ দেখে সেই ব্যক্তিগত কথোপকথনের স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়েছে তাদের পুরো ফ্রেন্ড সার্কেলে। বন্ধুটি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে, কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। এখানে রাফিদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটটি ‘ফরওয়ার্ড’ করার সিদ্ধান্তই ছিল গোপনীয়তার পবিত্র সীমানা লঙ্ঘন।

    ডিজিটাল যুগে ইসলামিক গোপনীয়তা রক্ষার প্রধান চ্যালেঞ্জসমূহ:

    1. অতিসহজ শেয়ারিং কালচার: একটি ক্লিকেই ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও, কথোপকথন বা তথ্য হাজারো মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। ‘ভাইরাল‘ হওয়ার মোহ বা সাময়িক মজা নেওয়ার প্রবণতা গোপনীয়তা লঙ্ঘনকে তুচ্ছ করে তোলে।
    2. ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট ও ডাটা সংগ্রহ: আমাদের প্রতিটি অনলাইন কার্যকলাপ (অনুসন্ধান, অবস্থান, কেনাকাটার অভ্যাস, সামাজিক যোগাযোগ) ডাটা হিসেবে সংরক্ষিত হয়। এই ডাটা প্রায়ই আমাদের অজান্তে বিশ্লেষণ, টার্গেটেড বিজ্ঞাপন বা এমনকি অপব্যবহারের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি সূরা হুজুরাতের নিষেধাজ্ঞার (‘তাজাসুস’) একটি আধুনিক রূপ।
    3. সোশ্যাল মিডিয়া প্রেশার ও ‘ওভারশেয়ারিং’: নিজের জীবনকে ‘পরিপূর্ণ’ দেখানোর চাপে বা ভুলুন্ঠিত হওয়ার ভয়ে মানুষ প্রায়শই অতিরিক্ত ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করে (অবস্থান, পারিবারিক সমস্যা, সম্পর্কের টানাপোড়েন), যা পরে গোপনীয়তা লঙ্ঘনের সুযোগ তৈরি করে।
    4. দুর্বল ডিজিটাল নিরাপত্তা সচেতনতা: সহজ পাসওয়ার্ড, পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার, অ্যাপ পারমিশনে অসতর্কতা, ফিশিং লিংকে ক্লিক করা – এসবের মাধ্যমে হ্যাকাররা সহজেই ব্যক্তিগত তথ্য ও অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করে গোপনীয়তা ভঙ্গ করতে পারে।
    5. অনলাইন গিবত ও অপপ্রচারের সহজলভ্যতা: সোশ্যাল মিডিয়া গিবত, অপবাদ ও চুগলখোরীর জন্য একটি বিশাল প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। অ্যানিমিটি অ্যাকাউন্ট থেকে কুৎসা ছড়ানো বা ব্যক্তিগত তথ্য লিক করা এখন অতি সাধারণ ঘটনা।

    ইসলামিক নীতিমালা অনুযায়ী ডিজিটাল গোপনীয়তা রক্ষার কার্যকর কৌশল:

    1. প্রাইভেসি সেটিংস: আপনার ডিজিটাল পর্দা (হিজাব): প্রতিটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, মোবাইল অ্যাপ এবং ডিভাইসে গভীরভাবে প্রবেশ করে প্রাইভেসি সেটিংস কনফিগার করুন।

      • কাকে আপনার পোস্ট, ছবি, ফ্রেন্ডলিস্ট, স্ট্যাটাস দেখতে পারবে, তা নিয়ন্ত্রণ করুন। ‘পাবলিক’ থেকে ‘ফ্রেন্ডস’ বা ‘কাস্টম’ এ নিয়ে আসুন।
      • লোকেশন ট্র্যাকিং বন্ধ করুন। শুধু প্রয়োজনের সময় চালু করুন।
      • আপনার ট্যাগ হওয়া পোস্ট/ছবি অটোমেটিকভাবে টাইমলাইনে শেয়ার হওয়ার অপশন বন্ধ করুন (রিভিউ ট্যাগস)।
      • অ্যাপ পারমিশন: প্রতিটি অ্যাপকে শুধুমাত্র সেই পারমিশন দিন যা তার কাজের জন্য অত্যাবশ্যক (যেমন, ক্যামেরা অ্যাপকে ক্যামেরা এক্সেস দেয়া ঠিক, কিন্তু একটি টর্চলাইট অ্যাপকে আপনার কন্টাক্টলিস্ট এক্সেসের প্রয়োজন নেই)।
    2. শেয়ারিং-এ ইসলামিক বিধি-নিষেধ প্রয়োগ:

      • অনুমতি নিন, নিন অনুমতি: কারো ছবি, ভিডিও, ব্যক্তিগত মেসেজ বা তথ্য শেয়ার করার আগে তার স্পষ্ট অনুমতি নিন। হাদিসে অনুমতি ছাড়া কারো সম্পদ নেওয়া যেমন হারাম, তেমনি অনুমতি ছাড়া কারো ডিজিটাল তথ্য (যা তার ‘সম্পদ’) শেয়ার করাও নিষিদ্ধ।
      • গিবত/নামিমাহ থেকে বিরত থাকুন: কোনো পোস্ট, কমেন্ট বা শেয়ার করার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন: এটা কি কারো দোষত্রুটি প্রকাশ করছে? এটা কি গিবতের শামিল? এটা শেয়ার করলে কি কারো ক্ষতি হতে পারে বা সম্পর্কে ফাটল ধরতে পারে? যদি উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয়, তাহলে বিরত থাকুন। রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস করে, সে যেন ভাল কথা বলে নতুবা চুপ থাকে” (সহীহ বুখারী, মুসলিম)।
      • ওভারশেয়ারিং এড়িয়ে চলুন: আপনার ব্যক্তিগত সমস্যা, পারিবারিক বিরোধ, আর্থিক অবস্থান বা খুব গভীর আবেগ অনলাইনে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন। এটি গোপনীয়তা রক্ষা করে এবং অপ্রয়োজনীয় জল্পনা-কল্পনা বা অপব্যবহারের সুযোগ কমায়। মনে রাখবেন, ইন্টারনেটে কিছু পোস্ট করলে তা চিরতরে থেকে যায়।
    3. ডিজিটাল নিরাপত্তা: ফরজে কিফায়ার মতো দায়িত্ব:

      • শক্তিশালী ও অনন্য পাসওয়ার্ড: প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টের (ইমেইল, ব্যাংকিং, সোশ্যাল মিডিয়া) জন্য আলাদা, জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার বিবেচনা করুন।
      • দুই-ফ্যাক্টর প্রমাণীকরণ (2FA) সক্রিয় করুন: এটি আপনার অ্যাকাউন্টে একটি অতিরিক্ত নিরাপত্তা স্তর যোগ করে।
      • সন্দেহজনক লিংক ও অ্যাটাচমেন্ট: অপরিচিত মেইল, মেসেজ বা লিংকে ক্লিক করবেন না। ফিশিং স্ক্যামের লক্ষ্য হতে পারেন।
      • সফটওয়্যার আপডেট: অপারেটিং সিস্টেম, ব্রাউজার এবং অ্যাপগুলো নিয়মিত আপডেট করুন। আপডেটে প্রায়ই নিরাপত্তা প্যাচ থাকে।
      • পাবলিক ওয়াই-ফাই সতর্কতা: পাবলিক ওয়াই-ফাইতে ব্যাংকিং বা গুরুত্বপূর্ণ লগইন করা এড়িয়ে চলুন। VPN ব্যবহার করুন।
    4. অন্যের ডিজিটাল গোপনীয়তা সম্মান:
      • কাউকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ট্যাগ করবেন না, বিশেষ করে বিব্রতকর ছবি বা পোস্টে।
      • কারো ব্যক্তিগত মেসেজ, ইমেইল বা ডকুমেন্ট শেয়ার করবেন না, এমনকি সেটা আপনার সাথে শেয়ার করা হলেও, যদি না তার স্পষ্ট অনুমতি থাকে।
      • অন্যের ফোন, ল্যাপটপ বা ডিভাইসে অনুমতি ছাড়া হাত দেবেন না।
      • সোশ্যাল মিডিয়ায় কারো সম্পর্কে নেতিবাচক বা অপবাদমূলক কিছু পোস্ট, শেয়ার বা কমেন্ট করবেন না। এটি গিবত ও নামিমাহ উভয়ের অন্তর্ভুক্ত।

    বাংলাদেশে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ: বাংলাদেশ সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ প্রণয়ন করেছে। এই আইনে অননুমোদিতভাবে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ, প্রকাশ বা ব্যবহারের শাস্তির বিধান রয়েছে। ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকেও এই আইনকে গোপনীয়তা রক্ষার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা যেতে পারে। তবে আইনের প্রয়োগ ও সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (BTRC) ওয়েবসাইটে কিছু ডিজিটাল নিরাপত্তা টিপস রয়েছে (https://www.btrc.gov.bd/)।

    ডিজিটাল যুগে গোপনীয়তা রক্ষা করার ইসলামিক দিক মানে শুধু টেকনিক্যাল সেটিংস নয়; বরং এটি একটি সচেতন মানসিকতা ও নৈতিক অবস্থান। প্রতিটি ক্লিক, শেয়ার এবং পোস্টের পিছনে ইসলামের শিক্ষা – অন্যের অধিকার (হক্কুল ইবাদ), গিবত থেকে বেঁচে থাকা, অনুমতি নেওয়া (ইস্তিযন) এবং দায়িত্বশীলতা (আমানত) – এই নীতিগুলোর প্রতিফলন ঘটানোই হলো প্রকৃত মুমিনের পরিচয়।

    পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কে গোপনীয়তা: ইসলামের ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি

    ইসলাম শুধু ব্যক্তির নয়, পরিবার ও সামাজিক কাঠামোর ভিতরেও গোপনীয়তার সুনির্দিষ্ট গণ্ডি টেনে দিয়েছে, যাতে পারস্পরিক বিশ্বাস ও সম্মান অটুট থাকে। এটি গোপনীয়তা রক্ষা করার ইসলামিক দিকের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

    • স্বামী-স্ত্রীর গোপনীয়তা: পবিত্র আমানত: ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সবকিছু, বিশেষত শয্যাসঙ্গ সংক্রান্ত বিষয়াদি, অত্যন্ত গোপনীয় এবং একে অপরের জন্য আমানতস্বরূপ। রাসূলুল্লাহ (সা.) এটিকে প্রকাশ করাকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন এবং চরম লজ্জাজনক কাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এটি শুধু মুখে বলার ব্যাপার নয়; এর মধ্যে পড়ে তাদের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, দুর্বলতা, বা এমন কোনো তথ্য যা তারা শুধু একে অপরের সাথেই শেয়ার করেছে। বন্ধু-বান্ধব বা পরিবারের সদস্যদের সামনে একে অপরের সমালোচনা করা বা ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করাও গোপনীয়তা লঙ্ঘনের শামিল এবং পারিবারিক সম্পর্কের ভিত্তিকে দুর্বল করে।

    • পারিবারিক বিষয়ের গোপনীয়তা: পরিবারের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, যেমন আর্থিক সংকট, সদস্যদের ব্যক্তিগত সমস্যা (স্বাস্থ্য, মানসিক অবস্থা), সন্তানদের ত্রুটি-বিচ্যুতি বা পারিবারিক মতবিরোধ, বাইরের লোকজনের সাথে শেয়ার না করাই ইসলামের নির্দেশ। রাসূল (সা.) বলেছেন, “তোমরা নিজেদের ঘরের গোপনীয়তা রক্ষা করবে”। এটি পরিবারের সম্মান রক্ষা করে এবং বাইরের অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ বা পরচর্চা থেকে সুরক্ষা দেয়।

    • অন্যের গোপনীয়তা রক্ষায় ইসলামের নির্দেশনা: ইসলাম শুধু নিজের গোপনীয়তাই নয়, অন্যের গোপনীয়তা রক্ষাকেও ঈমানের অঙ্গ হিসেবে সাব্যস্ত করেছে। এটি বিভিন্ন স্তরে প্রযোজ্য:

      • আত্মীয়-স্বজনের গোপনীয়তা: ভাই-বোন, চাচা-মামা, ফুফু-খালাদের ব্যক্তিগত বিষয় বা পারিবারিক সমস্যা অন্যের কাছে নিয়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকা।
      • প্রতিবেশীর গোপনীয়তা: প্রতিবেশীর ঘরের ভিতর উঁকি দেওয়া, তাদের ব্যক্তিগত কথাবার্তা শোনার চেষ্টা করা বা তাদের ব্যাপারে অনুমানভিত্তিক কথা ছড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। প্রতিবেশীর হক ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
      • বন্ধু ও সহকর্মীর গোপনীয়তা: বন্ধুর সাথে শেয়ার করা গোপন কথা, অফিসের গোপন তথ্য বা সহকর্মীর ব্যক্তিগত সমস্যা অন্য কাউকে বলা ইসলামি নৈতিকতাবিরোধী। এটি আমানতের খিয়ানত।
    • গোপনীয়তা রক্ষা ও সৎ উপদেশ (নসিহত) এর মধ্যে ভারসাম্য: একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কখন গোপনীয়তা রক্ষা করা যাবে না? ইসলাম শুধু অন্ধ গোপনীয়তার কথা বলে না। যদি কারো ভুল বা পাপের বিষয় জানা যায় যা:
      • প্রকাশ্যে সংঘটিত হচ্ছে (লোক দেখানো পাপ),
      • অন্যদের ক্ষতির কারণ হচ্ছে বা হতে পারে (যেমন প্রতারণা, চুরি, অপব্যবহার),
      • সংশোধনযোগ্য এবং সংশোধনের জন্য কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন,
      • অথবা ব্যক্তি নিজে সংশোধিত হতে চাইছে না এবং তার ভুল সমাজের জন্য ক্ষতিকর,
        তবে এমন ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে প্রথমে সরাসরি ও সদয়ভাবে উপদেশ দেয়া (নসিহত) কর্তব্য। যদি তা কাজ না করে এবং ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তবে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ (পিতামাতা, শিক্ষক, ধর্মীয় নেতা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা – পরিস্থিতি অনুযায়ী) কে জানানো যেতে পারে। এটির উদ্দেশ্য হবে সংশোধন ও ক্ষতি রোধ, অপমান বা লজ্জা দেওয়া নয়। এটি গোপনীয়তা রক্ষা করার ইসলামিক দিকের একটি সূক্ষ্ম কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ব্যালেন্স।

    পারিবারিক ও সামাজিক স্তরে গোপনীয়তা রক্ষা করার ইসলামিক দিক অনুশীলন করলে তৈরি হয় অটুট বিশ্বাস, পবিত্র সম্পর্ক এবং একটি শান্তিপূর্ণ, সম্মানজনক সামাজিক পরিবেশ। এটি ইসলামের সামাজিক শান্তি (সলাহ) ও পারস্পরিক দায়িত্ববোধের (তাকাফুল) চেতনার প্রতিফলন।

    গোপনীয়তা রক্ষায় ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি: ব্যক্তিগত, পেশাগত ও আধ্যাত্মিক জীবনে প্রভাব

    গোপনীয়তা রক্ষা করার ইসলামিক দিক কেবল নিষেধাজ্ঞার তালিকা নয়; এটি একটি সামগ্রিক জীবনদর্শন যা ব্যক্তির আত্মসম্মানবোধ, পেশাগত সততা এবং আল্লাহর সাথে সম্পর্ককে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।

    • ব্যক্তিগত অখণ্ডতা ও আত্মসম্মানবোধ: ইসলামের দৃষ্টিতে প্রতিটি মানুষই আল্লাহর সৃষ্টি হিসেবে মর্যাদাবান। তার ব্যক্তিগত পরিসর, চিন্তা-ভাবনা ও অনুভূতি তার অস্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই পরিসরকে সম্মান করা এবং গোপন রাখা ব্যক্তির আত্মসম্মানবোধ (করামাহ) রক্ষার জন্য অপরিহার্য। যখন কেউ তার গোপনীয়তা রক্ষা করতে পারে এবং অন্যরা তা সম্মান করে, তখন তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও নিরাপত্তাবোধ তৈরি হয়। এটি তাকে সমাজে মাথা উঁচু করে চলার শক্তি দেয়। বিপরীতভাবে, গোপনীয়তা লঙ্ঘন ব্যক্তিকে হেয়প্রতিপন্ন করে, লজ্জা ও হতাশায় নিমজ্জিত করে, যা প্রায়ই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার (যেমন উদ্বেগ, বিষণ্নতা) কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

    • পেশাগত জীবনে আমানতদারী ও নৈতিকতা: ইসলাম পেশাগত জীবনে আমানতদারীকে ঈমানের অংশ হিসেবে গণ্য করে। এই আমানতদারির একটি বড় অংশই হলো গোপনীয়তা রক্ষা।

      • চিকিৎসক, আইনজীবী, কাউন্সেলর: রোগী/ক্লায়েন্টের তথ্য গোপন রাখা তাদের পেশাগত নৈতিকতা ও আইনি বাধ্যবোধকতা। ইসলামি দৃষ্টিকোণে এটি একটি পবিত্র আমানত। রোগীর অনুমতি বা আইনি বাধ্যবোধকতা ছাড়া তার ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করা ইসলামে হারাম এবং আমানতের খিয়ানত।
      • কর্মচারী/কর্মকর্তা: প্রতিষ্ঠানের গোপন তথ্য, ট্রেড সিক্রেট, কৌশলগত পরিকল্পনা বা সহকর্মীর ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করা চরম বিশ্বাসঘাতকতা এবং পেশাগত অসততা।
      • শিক্ষক: শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত সমস্যা, পারিবারিক পটভূমি বা একাডেমিক দুর্বলতা গোপন রাখা শিক্ষকের দায়িত্ব।
        পেশাগত গোপনীয়তা রক্ষা না করলে শুধু আইনি সমস্যাই নয়, আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। রাসূল (সা.) বলেছেন, “আমানতদার ব্যক্তি যে আমানত রক্ষা করে, তার পূর্ণ প্রতিদান পাবে, আর যে খিয়ানত করে, সে বলে দেবে, হে আল্লাহ! আমার শাস্তি দিন” (সহীহ বুখারী)।
    • আল্লাহর সাথে সম্পর্ক: গোপন ইবাদত ও অন্তরের অবস্থা: ইসলামে গোপনীয়তার সবচেয়ে সুন্দর প্রকাশ ঘটে ব্যক্তির আল্লাহর সাথে সরল সম্পর্কে।

      • গোপন ইবাদতের ফজিলত: রাসূল (সা.) গোপন দান, গোপনে নফল নামাজ পড়া এবং গোপনে আল্লাহকে স্মরণ করার বিশেষ ফজিলত বর্ণনা করেছেন। এগুলো রিয়াকারি (লোক দেখানোর মনোভাব) মুক্ত এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের উৎকৃষ্ট মাধ্যম। একটি হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, “আমার বান্দা যখন গোপনে আমার স্মরণে মগ্ন হয়, তখন আমি তার অন্তরে ভালোবাসা বর্ষণ করি”।
      • অন্তরের গোপনীয়তা: আল্লাহ তাআলা মানুষের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সবকিছু জানেন। মানুষের মনের গোপন চিন্তা, ইচ্ছা, অনুভূতি সবই তার জানা। তাই গোপনীয়তা রক্ষার এই শিক্ষা মানুষকে এটাও স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সে সর্বদা আল্লাহর পর্যবেক্ষণে আছে। এই উপলব্ধিই তাকে গিবত, নামিমাহ, তাজাসুস এবং অন্যান্য গোপনীয়তা লঙ্ঘনের পাপ থেকে বিরত রাখে। এটি তাকওয়া (আল্লাহভীতি) বৃদ্ধি করে।
    • সামাজিক শান্তি ও বিশ্বাসের ভিত্তি: গোপনীয়তা রক্ষা সামাজিক জীবনের অলংকার।
      • বিশ্বাস ও নিরাপত্তা: যখন মানুষ নিশ্চিত থাকে যে তার ব্যক্তিগত বিষয় গোপন থাকবে, তখন সে অন্যদের প্রতি আস্থা রাখতে পারে, খোলামেলা আলোচনা করতে পারে এবং সাহায্য চাইতে পারে। এটি পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন মজবুত করে।
      • সংঘাত হ্রাস: গোপনীয়তা লঙ্ঘন (গিবত, চুগলখোরী, দোষ অন্বেষণ) সামাজিক সংঘাত, হিংসা-বিদ্বেষ ও বিভেদের মূল কারণ। গোপনীয়তা সম্মান করলে এই বিষবৃক্ষের মূলই কেটে ফেলা হয়।
      • সম্মানজনক সমাজ: যে সমাজে প্রতিটি সদস্যের গোপনীয়তা ও ব্যক্তিসত্তা সম্মানিত হয়, সে সমাজই প্রকৃতপক্ষে সভ্য ও শান্তিপূর্ণ। ইসলামের গোপনীয়তা সংক্রান্ত বিধিবিধান এমনই একটি সমাজ গঠনের দিকনির্দেশনা দেয়।

    গোপনীয়তা রক্ষা করার ইসলামিক দিক তাই কেবল একটি বিধিনিষেধ নয়; এটি ব্যক্তিকে আত্মসম্মানিত করে, পেশাকে সম্মানিত করে, আল্লাহর সাথে সম্পর্ককে গভীর করে এবং সামাজিক কাঠামোকে শক্তিশালী করে তোলে। এটি ইসলামের ভারসাম্যপূর্ণ ও যুগোপযোগী জীবনবিধানের একটি উজ্জ্বল নিদর্শন।

    গোপনীয়তা রক্ষা করার ইসলামিক দিক কে শুধু ধর্মীয় বিধান ভাবলে ভুল হবে; এটি আধুনিক যুগে আমাদের ব্যক্তিত্বের অখণ্ডতা, ডিজিটাল নিরাপত্তা এবং সামাজিক শান্তির জন্য এক অনিবার্য রক্ষাকবচ। কুরআন-হাদিসের সুস্পষ্ট নির্দেশনা আমাদের শেখায় যে অন্যের দোষ ঢেকে দেওয়া, ব্যক্তিগত পরিসর সম্মান করা এবং ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টে সতর্ক থাকা ঈমানেরই অঙ্গ। প্রতিটি অপ্রয়োজনীয় শেয়ার, প্রতিটি উঁকি দেওয়া, প্রতিটি গিবতই ভঙ্গ করে আমাদের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত পবিত্রতার সীমানা। ফোনের স্ক্রিন হোক বা পারিবারিক আড্ডা, অফিসের করিডর হোক বা মনের গহীন কোণ – সর্বত্র গোপনীয়তার এই পর্দা টিকিয়ে রাখাই হলো মুমিনের দায়িত্ব। আজ থেকেই সচেতন হোন: অনুমতি ছাড়া শেয়ার করবেন না, প্রাইভেসি সেটিংস চেক করুন, গোপন কথা আমানত মনে করুন। মনে রাখুন, আল্লাহ দেখছেন – আপনার গোপনীয়তাও, আর আপনি অন্যের গোপনীয়তা রক্ষা করছেন কিনা তাও।

    জেনে রাখুন

    ইসলামে কার গোপনীয়তা রক্ষা করা ফরজ?
    ইসলামে প্রতিটি মানুষের গোপনীয়তা রক্ষা করা মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব (ফরজে কিফায়া)। বিশেষ করে মুসলিম ভাই-বোন, পিতামাতা, সন্তান, স্বামী-স্ত্রী, প্রতিবেশী এবং যারা আপনাকে গোপন বিষয় বিশ্বাস করে তাদের গোপনীয়তা রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। রাসূল (সা.) বলেছেন, “তোমাদের কেউ পূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করবে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে” (সহীহ বুখারী)। এতে অন্যের গোপনীয়তা ও সম্মান রক্ষাও অন্তর্ভুক্ত।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় গোপনীয়তা রক্ষার ইসলামিক নিয়ম কী?
    সোশ্যাল মিডিয়ায় ইসলামিক নিয়মে গোপনীয়তা রক্ষার জন্য কয়েকটি মূলনীতি মেনে চলতে হবে:

    • অনুমতি নেওয়া: কারো ছবি, ভিডিও বা ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার আগে তার সরাসরি অনুমতি নিন।
    • প্রাইভেসি সেটিংস ব্যবহার: আপনার প্রোফাইল, পোস্ট এবং ট্যাগ রিভিউ করার সেটিংস কঠোর করুন, যাতে শুধুমাত্র কাছের মানুষজনই দেখতে পারে।
    • গিবত/পরনিন্দা এড়ানো: অন্যের দোষত্রুটি, ব্যর্থতা বা ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে পোস্ট, কমেন্ট বা শেয়ার করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন।
    • ওভারশেয়ারিং নয়: অতিরিক্ত ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করে নিজেকে ঝুঁকিতে ফেলবেন না।
    • সন্দেহজনক কন্টেন্ট শেয়ার না করা: যাচাই ছাড়া সংবাদ বা কারো ক্ষতির কারণ হতে পারে এমন কিছু শেয়ার করবেন না।

    কোন পরিস্থিতিতে অন্যের গোপনীয়তা প্রকাশ করা জায়েজ হতে পারে?
    ইসলামে সাধারণত গোপনীয়তা রক্ষা করা ওয়াজিব। তবে খুব সীমিত ও গুরুতর পরিস্থিতিতে, যখন:

    • কারো গোপন পাপ বা ভুল অন্যদের সরাসরি ক্ষতির কারণ হচ্ছে বা হবে (যেমন: প্রতারণা, চুরি, শারীরিক/মানসিক নির্যাতনের পরিকল্পনা)।
    • ব্যক্তির সংশোধনের কোনো ইচ্ছা নেই এবং বিষয়টি জনস্বার্থ বা সমাজের নিরাপত্তার সাথে জড়িত।
    • ইসলামি আদালত বা বৈধ কর্তৃপক্ষের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে।
      এমন ক্ষেত্রেও প্রথমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সরাসরি ও সদয়ভাবে সতর্ক করা (নসিহত) কর্তব্য। শুধুমাত্র তা ব্যর্থ হলে এবং ক্ষতি রোধের জন্য অপরিহার্য হলে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে জানানো যেতে পারে। উদ্দেশ্য সর্বদা সংশোধন ও ক্ষতি রোধ, অপমান বা প্রতিশোধ নেওয়া নয়।

    হাদিসে গোপনীয়তা রক্ষার কী গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে?
    হাদিসে গোপনীয়তা রক্ষাকে ঈমানের লক্ষণ, সমাজের শান্তির উপায় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন:

    • “যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোনো মুমিনের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবে, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন” (সহীহ মুসলিম)।
    • “তোমরা অন্যের দোষত্রুটি অন্বেষণ করো না…” (সুনান আবু দাউদ, তিরমিযী)।
    • স্বামী-স্ত্রীর শয্যাসঙ্গের গোপনীয়তা প্রকাশ করাকে কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট অবস্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে (সহীহ মুসলিম)।
      এসব হাদিস গোপনীয়তা লঙ্ঘনের ভয়াবহ পরিণতির পাশাপাশি তা রক্ষার মহান পুরস্কারের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

    বাংলাদেশে ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে গোপনীয়তা রক্ষায় সরকারের ভূমিকা কী?
    বাংলাদেশ সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর মাধ্যমে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন (যেমন অননুমোদিতভাবে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ, প্রকাশ, অপব্যবহার) কে দণ্ডনীয় অপরাধ ঘোষণা করেছে। এছাড়া মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ইত্যাদিতেও গোপনীয়তার বিষয় জড়িত। ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে, একটি ইসলামিক রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব হলো জনগণের জীবন, সম্পদ, সম্মান ও গোপনীয়তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা (‘মাকাসিদ আল-শারিয়াহ’)। সরকারের উচিত আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা, জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং ডিজিটাল অবকাঠামোকে নিরাপদ করা যাতে নাগরিকরা তাদের গোপনীয়তা রক্ষা করতে পারে, যা ইসলামি নীতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।


    জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।
    ইসলামিক করার করুন গোপনীয়তা গোপনীয়তা রক্ষা করার ইসলামিক দিক দিক:জীবনে প্রয়োগ, রক্ষা লাইফস্টাইল
    Related Posts
    ফাঙ্কশনাল

    এই ৭ লক্ষণে বুঝুন আপনি কি ফাঙ্কশনাল ডিপ্রেশনে ভুগছেন?

    August 15, 2025
    মেয়েরা বিয়ের জন্য

    মেয়েরা বিয়ের জন্য যেমন ছেলেদের পারফেক্ট মনে করেন

    August 15, 2025
    জীবনসঙ্গী

    যেসব পুরুষদের একেবারেই জীবনসঙ্গী হিসেবে পছন্দ নয় মহিলাদের

    August 15, 2025
    সর্বশেষ খবর
    পোষ্টার

    খাগড়াছড়িতে শেখ মুজিবের পোষ্টার লাগানোতে ছাত্রলীগের ৪ নেতাকে গণপিটুনি

    মরদেহ উদ্ধার

    নিখোঁজের ৫ দিন পর নদীতে যুবকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার

    ফাঙ্কশনাল

    এই ৭ লক্ষণে বুঝুন আপনি কি ফাঙ্কশনাল ডিপ্রেশনে ভুগছেন?

    Mondo Digital Recruitment: Leading the Tech Talent Revolution

    Mondo Digital Recruitment:Leading the Tech Talent Revolution

    Khicuri

    বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত কাঙালি ভোজের খিচুড়ি জব্দ

    অঙ্গপ্রতিষ্ঠান

    ৩পদে ১৯ জনকে নিয়োগ দেবে পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান

    Monin Flavor Innovations: Leading the Global Beverage Revolution

    Monin Flavor Innovations: Leading the Global Beverage Revolution

    Monster Energy Marketing Innovations

    Monster Energy Marketing Innovations: Leading the Global Beverage Revolution

    নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত

    নির্বাচনে জাতীয় পার্টিসহ আওয়ামী দোসরগুলোকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিতে হবে

    আংশিক নিষেধাজ্ঞা

    হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম কলে রাশিয়ার আংশিক নিষেধাজ্ঞা

    • About Us
    • Contact Us
    • Career
    • Advertise
    • DMCA
    • Privacy Policy
    • Feed
    • Banglanews
    © 2025 ZoomBangla News - Powered by ZoomBangla

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.