চট্টগ্রাম মহানগরের একটি বাসায় ভাবির সঙ্গে পরকীয়ার জেরে খুন হয়েছেন মাধব দেবনাথ নামে এক যুবক। সেই হত্যার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন ভাবি বীথি দেবনাথ।
জবানবন্দি শারীরিক সর্ম্পকের পর অন্তরঙ্গ ভিডিও করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া এবং সেই ভিডিও স্বামীকে দেয়ার ঘটনায় দেবরকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন বলে স্বীকার করেন ভাবি।
রোববার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার জাহানের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন ভাবি বীথি দেবনাথ। পরে বীথিকে কারাগারে পাঠান আদালত।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন জানান, গত শুক্রবার রাতে নগরীর কোতোয়ালি থানার টেরিবাজার আফিমের গলির একটি বাসা থেকে মাধবের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার মরদেহ উদ্ধারের পর ওই পরিবারের ছয় জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়।
এর মধ্যে বীথি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে খুনের দায় স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, বাসা থেকে যে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে সেটি তার স্বামীর ফুফাতো ভাই মাধব দেবনাথের। তার বাড়ি কুমিল্লায়। হাজারী লেইনে একটি গহনা তৈরির কারখানায় স্বামীর সঙ্গে কাজ করতেন মাধব দেবনাথ।
মাধব দেবনাথ তার শ্বশুর বাড়িতে মাসে সাড়ে ৩ হাজার টাকা খোরাকি (খাবার ও থাকা বাবদ) দিয়ে থাকতেন। একটা সময় মাধব দেবনাথ অসুস্থও হয়েছিলেন। সে সময় তার সেবা করেছিলেন তিনি। মাধবের সঙ্গে ফোনে কথা ও মেসেজ আদান প্রদান হতো তার। বাসায় কেউ না থাকলে তার সঙ্গে দেখা করতে আসতেন মাধব। আসা যাওয়ার সুবাধে মাধবের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে বিথীর। যা পরবর্তীতে শারিরীক সম্পর্কে গড়ায়।
বিথী আরো জানান, করোনার কারণে সারাদেশে লকডাউন শুরু হলে মাধব কুমিল্লা চলে যায়। আর আমরা লালদীঘি থেকে বাসা বদলে টেরিবাজার চলে যাই। মাধব গ্রামে থাকা অবস্থায় স্বামীর মোবাইলে ইমোতে ভিডিও কলে যোগাযোগ হতো। সে সময় মাধবের জোরাজুরিতে আমি আমার বিশেষ মুহূর্তের ভিডিও ও কিছু ছবি পাঠাই।
তিন মাস পর গ্রাম থেকে এসে ১০-১২ দিনের জন্য আবার আমাদের বাসায় খোরাকি হিসেবে উঠেন মাধব। গত জুন মাসে আমার স্বামীকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলো মাধব। সেই টাকা নিয়ে আমার স্বামীর সঙ্গে মাধবের সম্পর্কের অবনতি হয়। পরে সেই টাকা ফিরিয়ে দিয়ে মাধবকে বাসায় আসতে নিষেধ করে আমার স্বামী। কিন্তু তবুও মাধব আমার সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করে।
পরে আগস্ট মাসে বাড়িতে গেলে সেখানে আমার ভাবির মোবাইল থেকে আমার সঙ্গে কথা বলে মাধব। তখন মাধব আমাকে হুমকি দেয়- তার কাছে আমার ব্যক্তিগত ভিডিও-ছবি রয়েছে। আমি যদি তার সঙ্গে বারবার শারিরীক সম্পর্ক না করি তাহলে সেই ভিডিও আমার স্বামীর বাড়ির লোকজনের কাছে পাঠিয়ে দেবে সে।
তখন মাধবকে ভিডিওর বিষয়ে কাউকে কিছু না বলার জন্য অনুরোধ করি এবং চট্টগ্রাম আসলে তার সঙ্গে দেখা করবো বলে জানাই।
এরপরও আমার ননদকে আমাদের সম্পর্কের কথা জানিয়ে দেয় মাধব। এমনকি নভেম্বর মাসে একটি ফেইক ফেসবুক আইডি থেকে আমার স্বামীর মেসেঞ্জারে সেই ভিডিওটিও পাঠিয়ে দেয় মাধব। এ নিয়ে আমার স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয় আমার।
পরে ২ ডিসেম্বর রাতে টেরিবাজারে আগুন লাগার পর বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে দরজা খোলা পেয়ে মাধব বীথির কক্ষে যান। সেখানে বীথি তাকে দেখে বিশেষ কায়দায় শারীরিক সম্পর্ক করার কথা বলে মাধবের হাত-পা বেঁধে গলায় কাপড় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে মরদেহ খাটের নিচে রেখে দেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।