মনোজ কুমার সাহা, বাসস: জলাভূমি বেষ্টিত গোপালগঞ্জ জেলায় গত অর্থ বছরে চাহিদার তুলনায় ১৪ হাজার ৭৭৪ মেট্রিক টন মাছ বেশি উৎপাদন হয়েছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে এসব মাছ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চালান করা হয়েছে। অতিরিক্ত মাছ উৎপাদন করে খামারী লাভের টাকা ঘরে তুলছেন। চাহিদার উদ্বৃত্ত মৎস্য উৎপাদন করে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন মৎস্য খামারীরা। এতে অর্থনীতির চাকা গতিশীল হচ্ছে।
গোপালগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বিজিৎ বৈরাগী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ওই কর্মকর্তা আরো জানান, গোপালগঞ্জ জেলার ৫ উপজেলায় ২২৯ টি বিল ও জলাভূমি, ১০ টি নদী, ৬টি বাওড় ও ৩৩৪ টি খাল রয়েছে। এসব উৎস হতে প্রতি বছর ১০ হাজার মেট্রিক টন পুঁটি, ট্যাংরা, শৈল, মাগুর, কই, শিং, টাকি, খলিশা, গজার, রুই, কাতলা, বোয়াল, আইড়, চিংড়ি, ইলিশ, নান্দেলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত হয়। ১৯ হাজার ৩৫০টি বেসরকারি পুকুর ও ১৩২টি সরকারী খাস পুকুরে ১৭ হাজার ১৫৮ জন খামারী ৩১ হাজার ২শ’ মেট্রিক টন রুই, কাতলা, মৃগেল, পাঙ্গাস, তেলাপিয়া,গ্রাস কার্পসহ কার্প জাতীয় মাছ উৎপাদন করেন। এছাড়া ২ হাজার ৩৭৫ চিংড়ি ঘেরে ১০০০ খামারী ১ হাজার ৭১৩ মেট্রিক টন চিংড়ি উৎপাদন করেন। সব মিলিয়ে জেলায় ৪১ হাজার ৯১৩ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়। প্রতি কেজি মাছ গড়ে ২শ’ টাকা দরে খামারী ও মৎস্যজীবীরা বিক্রি করেন। সে হিসেবে এ জেলায় ৮৩৮ কোটি ২৬ লাখ টাকার মাছ উৎপাদিত হয়। গোপালগঞ্জ জেলাবাসীর সারা বছরের মাছের চাহিদা ২৭ হাজার ১৩৯ মেট্রিক টন মাছ । চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত উৎপাদন হয় ১৪ হাজার ৭৭৪ মেট্রিক টন মাছ।
ওই কর্মকর্তা আরো জানান, উদ্বৃত্ত উৎপাদিত মাছ ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হয়। মাছে উদ্বৃত্ত এ জেলায় মাছ চাষের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। তাই প্রতি বছরই খামারীরা নতুন নতুন খামারের সংখ্যা বৃদ্ধি করে চলেছেন। এ কারণে এ জেলায় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কাজুলিয়া গ্রামের মৎস্যচাষি হাফিজুর রহমান বলেন, মাছ চাষে মৎস্য অধিদপ্তর আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা, পরামর্শ দিচ্ছে। আমাদের মাছ খুবই সুস্বাদু। তাই ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় আমাদের মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ কারণে আমরা লাভজনক মাছের চাষ সম্প্রসারণ করছি।
মুকসুদপুর উপজেলার উজানী গ্রামের মৎস্য চাষি খলিলুর রহমান সোহেল বলেন, মৎস্য খাদ্যের দাম বেড়েছে। আমরা মৎস্য খাদ্য নির্ভর মাছ চাষ করলে লাভ কম হত। চান্দা বিলে আমার পুকুর। এখানে প্রাকৃতিক পরিবেশে ও বিলের খাবার দিয়ে খুব কম খরচে আমরা মাছ উৎপাদন করি। এ প্রক্রিয়ায় মাছ চাষে আমাদের বেশ লাভ থাকে। তাই প্রতি বছর আমরা মাছ চাষ বৃদ্ধি করছি। মৎস্য খাদ্য নির্ভর খামারীদের কথা চিন্তা করে মাছের খাবারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার দাবি জানান ওই মৎস্য খামারী।
কাশিয়ানী উপজেলার রাজপাট গ্রামের মৎস্য খামারী জামাল উদ্দিন বলেন, গোপালগঞ্জে উৎপাদিত সুস্বাদু মাছের চাহিদা রয়েছে সারা দেশে। এখানে মাছের উৎপাদনও আমরা বাড়াচ্ছি। এখন পদ্মা সেতু হয়েছে। আমরা সরাসরি ঢাকার বাজারে মাছ নিয়ে মার্কেট ধরতে পারছি। এতে আমরা আগের তুলনায় প্রতি কেজি মাছ ৫০ টাকা বেশিতে বিক্রি করতে পারছি। আমাদের লাভ বাড়িয়ে দিয়েছে পদ্মা সেতু।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।