গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি: আজ ১২ ডিসেম্বর। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস আজ। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এবং বিভীষিকাময় দিনের শেষে আজকের এই দিনে শত্রুমুক্ত হয় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা।
আজ বুধবার (১২ ডিসেম্বর) মুক্ত দিবস উপলক্ষে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদ, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক সংগঠন দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
মুক্ত দিবস উপলক্ষে উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পন করে বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মনোয়ার হোসেন চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্নঃ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান জননেতা আব্দুল লতিফ প্রধান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ বর্মন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজির হোসেন, ওসি তদন্ত আফজাল হোসেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী সাখোয়াত হোসেন ও অন্যান্য নেতানেতৃবৃন্দ।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাক হানাদার বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ট এ এলাকার মানুষ সন্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধে ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ে পাক হানাদারেরা। ফলে চুড়ান্ত বিজয়ের ৩ দিন আগেই স্বাধীনতার স্বাদ পান এখানকার মুক্তিকামী মানুষ। সেই সঙ্গে জয় বাংলা শ্লোগান আর আনন্দ, উৎফুল্লে ফেটে পড়েছিল গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সকল মুক্তিকামী মানুষ।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. নূরুল ইসলাম আজাদ জানান, ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় গণহত্যার খবর ওয়্যারলেসের মাধ্যমে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় এসে পৌঁছায়। তখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে প্রতিহত করার জন্য স্বাধীনতা পাগল জনতাকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন ও সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়। সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ গোবিন্দগঞ্জের অদূরে বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের কাঁটাখালী সেতুটি ধ্বংস করে পাকিস্তানি বাহিনীর অগ্রযাত্রা প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ২৬ মার্চ সারারাত চলে প্রস্তুতি। ২৭ মার্চ সকালে শত শত মুক্তিপাগল তরুণ যুবক-ছাত্র জনতা কোদাল, শাবল, হাতুড়ি, খুন্তি ইত্যাদি নিয়ে ট্রাকযোগে কেউবা আবার হেঁটে পৌঁছেতে থাকে কাটাখালীতে। সেখানে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এবং সেতুটি ধ্বংস করতে যার কাছে যা আছে তাই নিয়ে শুরু করে ভাঙ্গার কাজ।
তিনি জানান, এরপর সবার অক্লান্ত পরিশ্রমে ব্রীজের উত্তর পাশে কিছু অংশ ভাঙা হলে হঠাৎ করে রংপুরের দিক থেকে পাক বাহিনীর একটি কনভয় ছুটে আসে ব্রীজের কাছে। কনভয়টি কাটাখালী ব্রীজের নিকট পৌঁছেই এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকে মুক্তিপাগল বাঙ্গালীর ওপর। এ সময় নিরস্ত্র বাঙ্গালী জনতা প্রাণভয়ে ছুটে পালাতে গেলে পাকহানাদার বাহিনীর এলোপাতাড়ি গুলির আঘাতে শহীদ হন আবদুল মান্নান আকন্দ, বাবলু মোহন্ত, বাবু দত্তসহ অজ্ঞাত পরিচয় এক কিশোর ও এক বৃদ্ধ। আহত হয় আরও ১৫/২০জন। এরপর পাক হানাদার বাহিনী মুক্তিপাগল গোবিন্দগঞ্জবাসীর বাড়িতে বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ, ধর্ষণ আর হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে।
তখন থেকে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১১ ডিসেম্বর ভোর রাতে হিলি, গাইবান্ধা এবং বোনারপাড়া ও মহিমাগঞ্জ থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধাদের ত্রিমুখী আক্রমণে প্রায় দুইশ’ পাকসেনা নিহত হয়। এ সময় ভয়ে অন্যান্য পাকসেনারা ইউনিফর্ম খুলে লুঙ্গি, গেঞ্জি পড়ে পালিয়ে যায়।
পরদিন ১২ ডিসেম্বর সকালে জয়বাংলা স্লোগানে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে স্বাধীনতাকামী গণমানুষের বিপুল হর্ষধ্বনীর মধ্যদিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও ছাত্র-জনতা হাইস্কুল মাঠে সমবেত হয়ে লাল-সবুজ জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে। হানাদার মুক্ত হয় গোবিন্দগঞ্জ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।