আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইউরোপ-মুখী নর্ড স্ট্রিম ওয়ান পাইপলাইন সংস্কার কাজের যুক্তিতে তিনদিনের জন্য গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া। খবর বিবিসির।
শনিবার তা পুনরায় চালুর কথা থাকলেও রাশিয়ার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত জ্বালানি সংস্থা গ্যাজপ্রম জানিয়েছে পাইপলাইনে ছিদ্র শনাক্ত হয়েছে। তার অর্থ, পাইপলাইন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
জি-সেভেন জোট গতকাল (শুক্রবার) এক বৈঠকে রুশ জ্বালানি তেলের আমদানি মূল্যের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করতে একমত হয়। পরপরই, নর্ড স্ট্রিম গ্যাস পাইপলাইন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার এই সিদ্ধান্ত জানায় রাশিয়া।
জি সেভেন জোটে রয়েছে – যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ক্যানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি এবং জাপান।
মস্কো একইসাথে হুঁশিয়ার করেছে যে সব দেশ রুশ তেলের সর্বোচ্চ আমদানি মূল্য বেঁধে দেওয়ার চেষ্টা করবে তাদের কাছে তেল বিক্রি করা হবেনা।
যে দ্রুত গতিতে ইউরোপে জ্বালানির দাম বাড়ছে তাতে আসন্ন শীত মৌসুমে সাধারণ মানুষ চরম সংকটে পড়বে বলে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তার মাঝেই রাশিয়া থেকে গ্যাস আসা বন্ধের এই দুঃসংবাদ হাজির হলো।
এমনিতেই ইউক্রেনে রুশ সামরিক হামলার পর ইউরোপে জ্বালানির বাজারে দাম দিনকে দিন চড়ছে। পাইপলাইন বন্ধের খবরে বাজার আরও আগুন হয়ে উঠতে পারে আশংকা দেখা দিয়েছে।
ইউরোপ গত ছয় মাস ধরে রুশ তেল ও গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমাতে বিকল্প নানা পথ নিচ্ছে , যদিও সেই লক্ষ্য অর্জনে সময় লাগবে।
ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মাইকেল বলেছেন রাশিয়ার এই পদক্ষেপ “দুঃখজনক হলেও একেবারে অপ্রত্যাশিত নয়।”
“গ্যাসকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংকল্প দুর্বল করা যাবেনা। জ্বালানি স্বনির্ভরতার জন্য আমাদের চেষ্টা আরও বেগবান হবে। নিজেদের জনগণ এবং ইউক্রেনের স্বাধীনতাকে সমর্থন করা আমাদের কর্তব্য।”
তবে রাশিয়া জ্বালানিকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহারের কথা অস্বীকার করছে। তাদের কথা – পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার কারণে পাইপলাইন রক্ষণাবেক্ষণ দুরূহ হয়ে পড়েছে।
তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন মনে করছে রাশিয়ার এই যুক্তি নেহাতই অজুহাত।
জার্মানির গ্যাস নেটওয়ার্কের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে রুশ গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে পরিস্থিতি সামলাতে জার্মানি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রস্তুত। তবে সাধারণ জার্মানদের জ্বালানি সাশ্রয় করতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
নর্ড স্ট্রিম ওয়ান গ্যাস পাইপলাইনটি সেন্ট পিটার্সবার্গের কাছে রুশ উপকূল থেকে জার্মানির পূর্বে গিয়ে উঠেছে। প্রতিদিন এই পাইপলাইন দিয়ে ১৭ কোটি ঘনমিটার গ্যাস সরবরাহ করা যায়।
নর্ড স্ট্রিম টু নামে দ্বিতীয় আরেকটি গ্যাস পাইপলাইন রাশিয়া এবং জার্মানি যৌথভাবে নির্মাণ করলেও ইউক্রেনে রুশ হামলার পর তা বন্ধ হয়ে যায়।
যুদ্ধ শুরুর পর নর্ড স্ট্রিম ওয়ান পাইপলাইনটিও কয়েকবার বন্ধ হয়ে যায়। জুলাইতে এই পাইপলাইন টানা ১০ দিন বন্ধ ছিল। পরে শুরু হলেও গ্যাস সরবরাহের মাত্রা অনেক কমে যায়।
সুইজারল্যান্ডের রাজধানী বার্ন থেকে একজন জ্বালানি বিশ্লেষক কর্নেলিয়া মায়ার বিবিসিকে বলেন, রুশ গ্যাস পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিশাল প্রভাব পড়বে ইউরোপে। জিনিসপত্রের দাম বাড়বে এবং মানুষজন চাকরি হারাবে, তিনি বলেন।
“এক বছর আগের তুলনায় ইউরোপ গ্যাসের দাম চারগুণ বেড়েছে …শুধু যে গ্যাসের দাম বাড়ছে তাই নয়, গ্যাস দিয়ে সার হয়, বহু শিল্প কারখানা চলে গ্যাস দিয়ে, ফলে কর্মসংস্থান নিয়ে সংকট হবে, বাজারে দাম বাড়বে।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।