গ্রহাণু ও চাঁদে খনিজ সন্ধান প্রতিযোগিতায় লিপ্ত পরাশক্তিরা

খনিজ সন্ধান

চাঁদ নিয়ে যে আবারও প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, সে কথা সবার জানা। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ইতিমধ্যেই আর্টেমিস ১ মিশন সম্পন্ন করেছে। পরবর্তী দুই ধাপে, অর্থাৎ আর্টেমিস ৩ মিশনে ফের চাঁদে নামবে মানুষ। নাসার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় রয়েছে চন্দ্রকলোনি তৈরি।

খনিজ সন্ধান

ওদিকে রাশিয়া সম্প্রতি একটি অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। একই সময়ে সবচেয়ে কম খরচে চাঁদের বুকে অবতরণ করেছে ভারতের চন্দ্রযান ৩। জাপানও সাম্প্রতিক এক অভিযানে চাঁদের বুকে নিরাপদে অবতরণ করিয়েছে মুন স্নাইপার নভোযান।

সেই স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া প্রথম চন্দ্রজয়ের প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। এর হাত ধরে শুরু হয় মহাকাশ যুগ। সে প্রতিযোগিতার পর্দা নামে মার্কিন নভোচারী নীল আর্মস্ট্রংয়ের চাঁদে পা রাখার মাধ্যমে। তবে চাঁদে অভিযান চালানোর আগ্রহ হারিয়ে যায় অনেকাংশে। কারণ, মহাকাশ জয়ের প্রতিযোগিতায় জিতে যায় যুক্তরাষ্ট্র। তখন শুরু হয় বিভিন্ন গ্রহাণু, সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহসহ বিভিন্ন দিকে অভিযান পরিচালনা।

তবে এতদিন পর চাঁদ জয়ের সেই প্রতিযোগিতা আবারও ফিরে এসেছে। এবারে আরও বড় পরিসরে, আরও বিপুলভাবে শুরু হয়েছে এই প্রচেষ্টা। শুধু তাই নয়। বিভিন্ন গ্রহাণুতেও অভিযান চালাচ্ছে এখন দেশগুলো। সাইকি নামের একটি গ্রহাণুর উদ্দেশে নভোযান পাঠিয়েছে সম্প্রতি নাসা। ওদিকে হায়াবুসা ২ গ্রহাণুতে অভিযান চালিয়েছে জাপান। প্রশ্ন হলো, কেন? কেন এই প্রতিযোগিতা?

এর পেছনের উত্তরটা হয়তো অনেকে জানেন। অনেকে হয়তো চমকে যেতে পারেন উত্তর শুনে—মাইনিং। হ্যাঁ, গবেষণার বিষয় আছে, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা প্রমাণের গুরুত্ব আছে, আছে আরও অনেক কিছু। তবে এসব ছাড়িয়ে বারবার উঠে আসছে মূল্যবান খনিজ সন্ধানের বিষয়টি।

অর্থাৎ এটাই একমাত্র কারণ নয়, খনিজ সন্ধানের কথাটি যে কেউ অনেক বড় করে বলছে, তাও নয়; তবে বারবার আলোচনায় বিষয়টি ফিরে ফিরে আসছে। প্রশ্ন উঠছে এ বিষয়ের আইন নিয়েও। যেমন যেকোনো দেশ কি চাইলেই চাঁদ বা কোনো গ্রহাণুতে খনিজ সন্ধান ও সংগ্রহ করতে পারবে? চাঁদ বা কোনো গ্রহাণুর মালিকানা আসলে কার? এরকম বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব, এ ধরনের খনিজ আহরণের সম্ভাবনাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়েই এ লেখা।

শুরু করা যাক চাঁদের মালিকানা কার—এ প্রশ্ন দিয়ে। বিজ্ঞানচিন্তার জুলাই ২০২৩ সংখ্যায় ‘চাঁদের মালিক কে’ শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশিত হয়। সেখান থেকে খানিকটা অংশ উদ্ধৃত করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে—

মানুষ চাঁদে পা রাখারও দুই বছর আগে, ১৯৬৭ সালে ‘আউটার স্পেস ট্রিটি’ নামে একটি চুক্তি সাক্ষরিত হয়। এ চুক্তি অনুযায়ী, কোনো দেশ চাঁদ বা মহাশূন্যের কোনো বস্তুর মালিকানা দাবি করতে পারবে না। পৃথিবীর বাইরের সব সম্পত্তির মালিক গোটা মানবজাতি। ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১০৯টি দেশ এই চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। আরও ২৩টি দেশ এ চুক্তি স্বাক্ষর করলেও এখনো আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়নি।

এ থেকে বুঝতেই পারছেন, কোনো দেশ চাঁদের মালিকানা দাবি করতে পারে না। তবে এর মধ্যে একটা আইনি ‘কিন্তু’ আছে। এই ‘কিন্তু’ ধরেই অনেকে বলছেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চাইলে চাঁদের নির্দিষ্ট অংশের মালিকানা দাবি করতে পারে। তবে মহাকাশ আইন বিশেজ্ঞদের মতে, কোনো জাতি বা রাষ্ট্র যদি মহাকাশের মালিকানা দাবি করতে না পারে, তাহলে কোনো রাষ্ট্রের মানুষও মালিকানা দাবি করতে পারে না।

তাতে অবশ্য বিভিন্ন রাষ্ট্রের বয়েই গেছে! যুক্তরাষ্ট্র ২০১৫ সালে ইউএস সিনেটে পাশ করেছে ‘স্পেস অ্যাক্ট’। এই আইনে বলা আছে, মার্কিন নাগরিকরা মহাকাশের বিভিন্ন সম্পদের মালিকানা দাবি করতে পারবেন। ওদিকে লুক্সেমবার্গ সরকার ২০১৭ সালে একটা আইন পাশ করেছে, যাতে তারা নিজ দেশের নাগরিকদের মহাজাগতিক বস্তু থেকে সম্পদ সংগ্রহ ও মালিকানাধীন রাখার অধিকার দিয়েছে।

জাপান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত এর বিরুদ্ধে আপিল করলেও খুব একটা লাভ হয়নি তাতে। তবে বর্তমানে দেশগুলো চেষ্টা করছে মিলেমিশে একটা নীতিতে আসার। কারণ, শুধু চাঁদে নয়, গ্রহাণুতে খনিজ সন্ধানের বিষয়টিও এখন গুরুত্বপূর্ণ। তাই সবার জন্য একটি নীতিমালা এখন আসলে একরকম আবশ্যকই হয়ে উঠেছে।