জুমবাংলা ডেস্ক: গ্রীষ্মকালীন নাবি টমেটো চাষের অন্যতম জেলা দিনাজপুর। প্রতি বছর এই জাতের টমেটো চাষ করে লাভবান হন কৃষকরা। তবে গত দুই-তিন বছর করোনার প্রভাব ও পোকার আক্রমণে লোকসান গুনেছে। এর মাঝেও এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলন ও বেশি দাম পাওয়ায় গত কয়েক বছরের লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার আশা করছেন তারা। বর্তমানে স্থানীয় পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি টমেটো ১৫-১৭ টাকা বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকা। বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিবেদক বিপুল সরকার সানি-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক বছর ধরে জেলায় গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ হচ্ছে। সাধারণত জানুয়ারি মাসের শেষে ও ফেব্রুয়ারির শুরুতে টমেটো চাষ করা হয়। ৬০-৭০ দিন পর টমেটো পাকতে শুরু করে। এবার সময় উপযোগী হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ফসল উৎপাদন হয়েছে। যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে।
সরেজমিনে জেলা সদরের শেখপুরা ইউনিয়নের গাবুড়া বাজারে দেখা গেছে, কৃষকরা ভ্যানে করে খাঁচাভর্তি করে টমেটো নিয়ে বাজারে আসছেন। ভোর থেকেই চলছে বেচাকেনা। কৃষকরা দাম চাচ্ছেন ৬০০-৭০০ টাকা মণ। মানভেদে ৫৫০-৬০০ টাকা মণ কিনছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। অবশ্য বড় সাইজের বাছাইকৃত টমেটোর মণ ৭০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
শুধু গাবুড়া বাজার নয়, সদরের মোস্তানবাজারেও প্রচুর টমেটো বেচাকেনা হয়। সকাল থেকে বাজারের দুই পাশের সড়কের কয়েক কিলোমিটারে টমেটোর খাঁচা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। সেগুলো কিনতে এসেছেন বিভিন্ন স্থানের পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
কৃষকরা জানিয়েছেন, প্রতি বিঘায় টমেটো চাষ করতে এক থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। সেখান থেকে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি টমেটো বিক্রি করা যায়। খরচ বাদে প্রতি বিঘায় দেড়-দুই লাখ টাকা লাভ হয়। তবে গত কয়েক বছর লোকসান হয়েছে। এবার চিত্র ভিন্ন। মৌসুমের শুরুতেই দাম ভালো পাওয়ায় খুশি তারা। তবে দাম কমে যাওয়ার শঙ্কায় আছেন অনেক কৃষক।
শেখপুরা ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তার দুই বিঘা জমিতে নাবি টমেটো চাষ করেছেন। গত তিন বছর লোকসান হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এবার বাজারে দাম ভালো। প্রতি মণ ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছি। তবে শঙ্কায় আছি, শেষের দিকে যদি দাম কমে যায়, তাহলে লাভ বেশি হবে না। কারণ সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি বেশি। বর্গা জমি বেশি দাম দিয়ে নিতে হয়। এই দাম থাকলে আমরা লাভবান হবো।’
এবার আড়াই বিঘা জমিতে বাহুবলী জাতের টমেটো আবাদ করেছেন দিঘন গ্রামের কৃষক ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর টমেটো চাষ করি। প্রতি বিঘায় চাষ করতে এক থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। গত বছরগুলোতে দাম কম থাকায় তেমন লাভ হয়নি। এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। ৬০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত মণ বিক্রি করছি। আশা করছি, আগের বছরের লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবো।’
একই গ্রামের কৃষক নূর ইসলাম বলেন, ‘২৪ শতাংশ জমিতে টমেটো চাষ করেছি। বাজারে দাম ভালো। ৬০০ মণ বিক্রি করছি। এই দাম থাকলে গত বছরগুলোর লোকসান উঠে আসবে।’
মোস্তানবাজারে বাজারে টমেটো বিক্রি করতে আসা বলতৈড় গ্রামের কৃষক তহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এলাকায় প্রচুর টমেটো আবাদ হয়। কিন্তু বেশিদিন রাখা যায় না। যখন যে দাম সে দামে বিক্রি করতে হয়, না হয় পচে যায়। এখানে একটা হিমাগার থাকলে কৃষকরা দাম ভালো পেতেন। যখন দাম কম থাকতো তখন হিমাগারে রাখতাম, দাম বাড়লে বিক্রি করতাম। এখানে একটা হিমাগার স্থাপনের দাবি জানাই।’
গাবুড়া বাজারে টমেটো কিনতে এসেছেন শরীয়তপুরের পাইকারি ব্যবসায়ী ওয়াফেজ মোল্লা। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দাম অনেক বেশি। আমরা এখান থেকে কাওরানবাজারে পাঠাই। এ বছর দাম বেশি হওয়ায় তেমন লাভ হচ্ছে না। অনেক সময় কেনা দামেও কাওরানবাজারের ব্যবসায়ীদের দিতে হচ্ছে। কারণ সেখানে যেতে যেতে অনেক সময় টমেটো নষ্ট হয়ে যায়।’
মোস্তানবাজারে টমেটো কিনতে এসেছেন ঢাকার পাইকারি ব্যবসায়ী আরিফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘এবার দাম বেশি হওয়ায় কৃষকদের লাভ হচ্ছে। এক ক্যারেটে ২৫-২৭ কেজি টমেটো নেওয়া যায়। ঢাকায় নেওয়া পর্যন্ত খরচ হয় ৬৮০-৭০০ টাকা। যেহেতু কাঁচামাল সেহেতু দাম ওঠানামা করে। কোনোদিন প্রতি ক্যারেট ১০০ টাকা বেশিতে বিক্রি হয়, কোনোদিন আবার ১০০ টাকা কমে বিক্রি করতে হয়। তবে দাম কম থাকলে আমাদের লাভ হয়।’
একই বাজারে টমেটো কিনতে আসা নারায়ণগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘টমেটোর এবার চাহিদা বেশি। নারায়গঞ্জে এসব টমেটো পাঠাচ্ছি। কিছুটা লাভ হচ্ছে। সামনের দিনে দাম কমলে একটু বেশি লাভ হবে।’
সদরের বাহাদুরবাজারের খুচরা ব্যবসায়ী কমল রায় বলেন, ‘খুচরা বাজারে ২০-২৫ টাকা কেজিতে টমেটো বিক্রি করছি। তবে বাছাইকৃত বড় সাইজের টমেটোর কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি করছি। চাহিদা বেশ ভালো।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় এক হাজার হেক্টর জমিতে টমেটো আবাদ হয়েছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে একই পরিমাণ জমিতে আবাদ হয়েছিল। দুই অর্থবছরে হেক্টরপ্রতি উৎপাদন হয়েছে ৪৫ দশমিক ১১ মেট্রিক টন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. নূরুজ্জামান বলেন, ‘জেলায় এ বছর এক হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে নাবি টমেটো চাষ হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। দামও ভালো পাচ্ছেন কৃষকরা।’
তিনি বলেন, ‘এই টমেটো স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বাইরের জেলাগুলোতে যাচ্ছে। তবে কৃষকদের চাষের বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে, একই জমিতে যেন বার বার টমেটো চাষ না হয়। আলু এবং টমেটো সমগোত্রীয় ফসল হওয়ায় আলুর জমিতে টমেটো চাষ করলে ফলন ভালো হয় না। ফলে অন্য জমিতে চাষ করতে হবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।