শীতকালের চেয়ে গ্রীষ্মকালে সূর্যের তাপ বেশি হয় কেন? গ্রীষ্মকালে পৃথিবী কি তাহলে সূর্যের খানিকটা কাছে চলে আসে? তাই যদি হতো, তাহলে গ্রীষ্মকালে আকাশে সূর্য শীতকালের চেয়ে বড় দেখাত। যেকোনো জিনিস কাছ থেকে বড় দেখায়, দূর থেকে ছোট। অথচ আকাশে সূর্যের আকার কী গ্রীষ্মে কী শীতে—সব সময় এক। তাহলে দেখা যাচ্ছে, যে ‘চুল্লির আগুন’ থেকে আমরা তাপ পাচ্ছি, সেটা কত দূরে অবস্থান করছে, ব্যাপারটা আসলে সেখানে নয়।
দিনের বেলায় সকালের চেয়ে বেশি উত্তাপ দেয়, তাই না? শুধু তা-ই নয়, গ্রীষ্মকালের দিন শীতকালের দিনের চেয়ে অনেক বেশি বড়। গ্রীষ্মকালে সূর্য অনেক সকাল-সকাল ওঠে, অস্ত যায় বেশ দেরি করে। দিন বড় বলে সূর্য বায়ু আর পৃথিবীকে এবং তোমাকে-আমাকেও ভালো মতো গরম করে তোলার সময় পায়। এ কারণে শীতকালের তুলনায় গ্রীষ্মকালে তাপ বেশি।
গ্রীষ্মের পর আসে শরৎকাল। দিনে দিনে সূর্য আকাশের আরও নিচে দিয়ে চলতে থাকে। সে ক্রমেই দেরি করে উঠতে থাকে, দিগন্তের ওপারে অস্ত যেতে থাকে আরও আগে আগে। দিন দিন সে আরও কম তাপ আর আলো দেয়। আরও বেশি ঠান্ডা, আরও বেশি অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আসতে থাকে। শীত নামে। ডিসেম্বরে আকাশে সূর্যের আবির্ভাব ঘটে মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য, তাও আবার সব সময় তাকে চোখে দেখা যায় না। আকাশের গায়ে একেবারে নিচে সে অবস্থান করছে—ঘরবাড়ি ও গাছপালার আড়ালে কোথাও লুকিয়ে পড়ছে।
উত্তরের দেশগুলোতে অবস্থা আরও খারাপ। সেখানে শীতকালে সূর্য হয়ে পড়ে আরও দুর্বল। কোনোরকমে দিগন্তের ওপরে গিয়ে ওঠে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি তার ওঠার আর কোনো শক্তিই যেন থাকে না। কেবল ঘণ্টাখানেকের মতো আকাশে আলো দেয়—এর বেশি সামর্থ্য তার থাকে না। আবার ফিরে আসে রাত। তারপর কয়েক দিন বাদে আকাশে আলো দেওয়াও বন্ধ করে দেয়। এর পরে কয়েক সপ্তাহের মতো ঘনিয়ে আসে নিশ্ছিদ্র রাত। প্রচণ্ড ঠান্ডা পড়ে। সর্বত্র অন্ধকার, কালিমা।
পৃথিবী ধীরে ধীরে ঘোরে। আমরা তার ওপরে আছি। আমরা যখন আলো ও অন্ধকারের সীমানার কাছাকাছি চলে আসি, তখন সূর্যোদয় দেখতে পাই। ছবিতে এই জায়গায় লেখা আছে ‘সকাল’। তারপর আমরা পৃথিবী-নাগরদোলায় চেপে সারাদিন ধরে সূর্যকিরণের নিচ দিয়ে চলতে থাকব। দুপুরবেলায় সূর্য আকাশে ঝুলতে থাকবে প্রায় সরাসরি আমাদের মাথার ওপরে।
আরও কিছু সময় পরে সূর্য চলে যাবে দিগন্তরেখার পেছনে। যেখানে ‘সন্ধ্যা’ শব্দটি লেখা আছে, আমরা যখন তার কাছাকাছি চলে আসব, তখন সূর্য আমাদের আর আলো দেবে না। এবারে দেখ, রাত কী ছোটই-না হবে। গ্রীষ্মকালে সূর্যকিরণের নিচ দিয়ে আমরা কত দীর্ঘ পথই-না যাত্রা করি, আর কত অল্প পথই-না আমাদের যেতে হয় ছায়ার নিচ দিয়ে!
অতএব দিন এত বড় আর রাত এত ছোট হয় বলেই এবং সূর্য যেহেতু ওপর থেকে, সরাসরি আমাদের মাথার ওপর কিরণ দেয়, সে কারণে গরম লাগে। গ্রীষ্মকাল শুরু হয়। একেবারে উল্টোটা ঘটে যখন পৃথিবী সরে যায় অন্য দিকটায়। উত্তর গোলার্ধ তখন আর সূর্যের দিকে কাত হয়ে না থেকে সূর্যের কাছ থেকে কাত হয়ে সরে যায়।
নিজের কক্ষপথে পৃথিবীর প্রতিবার আবর্তনের সময় আমাদের অনেকক্ষণ ছায়ায় বসে থাকতে হচ্ছে। পৃথিবী নামক নাগরদোলাটি মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য আমাদের নিয়ে আসে সূর্যকিরণের নিচে, তারপর আবার অনেকক্ষণের জন্য নিয়ে যায় ছায়ায়।
আমাদের রাতের পথ হয় দীর্ঘ, আর দিনের পথ ছোট। দিনের বেলায়ও এখন আর গ্রীষ্মকালের মতো সূর্য খাড়া ভাবে আমাদের ওপর আলো ফেলে না, ফেলে পাশ থেকে। তার রশ্মি হয় ম্লান। পৃথিবীর ওপর সূর্যরশ্মি তেরছাভাবে পিছলে পড়ে। পৃথিবীকে তেমন একটা গরম করতে পারে না। আমাদের ঠান্ডা লাগে। শীত নামে।
আমরা যদি বিষুবরেখার কাছাকাছি কোথাও বাস করতাম, তাহলে আমাদের কখনোই ঠান্ডায় জমে যেতে হতো না, ওভারকোট গায়ে দিতে হতো না। বছরের যেকোনো ঋতুতে সেখানে সূর্য সরাসরি ওপর থেকে কিরণ দেয়। সূর্য অনেক অনেক ওপরে উঠে যায়।
তাই বিষুবরেখার কাছাকাছি দেশগুলোতে সব সময়ই বেজায় গরম। ওই দেশগুলোকে বলাও হয় ‘গরম দেশ’। ঠান্ডা কাকে বলে, বরফ কী—এ সব সে দেশের অধিবাসীরা জানেই না। আবার বিষুবরেখার ওপারে, ভূমণ্ডলের নিচের অর্ধাংশে ফের পাবে শীত ও গ্রীষ্মকাল।
জানুয়ারি আমাদের সবচেয়ে ঠান্ডা মাস। এটাতেই আমরা অভ্যন্ত। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার কথাই ধরো না কেন, সেখানে জানুয়ারি ভর গ্রীষ্মকাল। মে মাস সেখানে শরৎকাল, জুলাইতে কঠিন শীত, আর সেপ্টেম্বরে কিশলয় দেখা দেয়, সর্বত্র সবুজের সমারোহ, তখন বসন্তের সমাগম।
আমাদের দেশ আর অস্ট্রেলিয়া ভূমণ্ডলের দুই ভিন্ন ভিন্ন অর্ধাংশে অবস্থান করছে। আমরা আছি উত্তর গোলার্ধে, আর অস্ট্রেলিয়া দক্ষিণ গোলার্ধে। তাহলেই বুঝে দেখ, পৃথিবীর অক্ষদণ্ড কাত হয়ে থাকার ফলে কী মজার ব্যাপার ঘটছে! কিন্তু পৃথিবী যদি সত্যিকারের নাগরদোলার মতো ‘খাড়া দাঁড়িয়ে থেকে’ ঘুরপাক খেত, তাহলে গোটা জিনিসটা হতো একেবারে অন্যরকম।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।