স্পোর্টস ডেস্ক : বাংলাদেশ দলের সাবেক কোচ শ্রীধরন শ্রীরামের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কুশলাদি বিনিময় শেষ না হতেই নিজ থেকে বললেন, ‘গ্রেট উইন’। কোন ‘উইনে’র কথা বলছেন, নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। পাকিস্তানকে পাকিস্তানের মাঠেই বাংলাদেশ যেভাবে ধবলধোলাই করে এসেছে, সেটি শুধু ক্রিকেটীয় দৃষ্টিতেই ভারতের ক্রিকেটসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বড় করে দেখতেন। তাঁদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের কোনো প্রতিপক্ষ নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছে, সেটি গুরুত্ব তো দিতেই হয়। তবে ভারত আরও একটি কারণে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স আতশি কাচ দিয়ে দেখছে।
পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ শেষে কদিন পর ভারতে খেলতে যাবে বাংলাদেশ। টেস্টে দুই দলের লড়াইয়ের পরিসংখ্যান যতই একপেশে থাক, এবার বাংলাদেশকে যে হালকাভাবে নেওয়া যাবে না, সেটি কদিন আগে সুরেশ রায়না ভারতীয় দলকে সতর্ক করেছেন। আরেক সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমানে ধারাভাষ্যকার দীপ দাশগুপ্ত অপেক্ষায় একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সিরিজের। তিনি বললেন, ‘আমার মনে হচ্ছে, ভালোই হবে সিরিজটা। বাংলাদেশের একটি ইতিবাচক দিক, তারা একটি সিরিজ জিতে এসেছে। পাকিস্তান ভালো দল, তাদের ওদেরই বাড়িতে গিয়ে হারানো, তা-ও দেশের বাইরে গিয়ে। সে হিসেবে (ভারতের বিপক্ষে সিরিজ) ইন্টারেস্টিং হওয়াই উচিত।’
শ্রীরামও মনে করেন, এবার ভারতের বিপক্ষে ভারতের মাঠে বাংলাদেশ অসহায় আত্মসমর্পণ করবে না, ‘বলতে পারি, এটা দারুণ একটা সিরিজ হবে। ভারত অনেক অভিজ্ঞ এবং ঘরের মাঠে দুর্দান্ত দল। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এটি অন্য রকম চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে।’
শ্রীরাম ঘরের মাঠে ভারতের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের যে কথাটা বললেন, দীপ দাশগুপ্ত মনে করেন, মূলত সফরকারী ব্যাটাররা এতটাই সংগ্রাম করেন, ওটাই স্বাগতিকদের সঙ্গে পার্থক্য গড়ে দেয়। বললেন, ‘দেখুন, বোলাররা ভালো করেছে, পাকিস্তানে কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটাররা রান করেছে। প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ জানাতে ২৫০ রান অন্তত করতে হবে। শুধু বাংলাদেশের কথাই বলছি না, এখানেই অনেক দলের সমস্যা হয়ে যায় ভারতের মাঠে, রান অতটা বাড়ে না, যতটা দরকার।’ ব্যাটারদের কথা বললেও দীপের বিশেষ নজর কেড়েছে বাংলাদেশের তরুণ পেসাররা। ‘তিন-চার বছর ধরে বলছি, নতুন প্রজন্মের যে পেস বোলাররা বেরিয়ে আসছে বাংলাদেশে, ওরা খুবই ভালো। হাসান মাহমুদ তো আজ থেকে না, এশিয়া কাপেও খেলেছিল, তখন থেকে সে খুব ভালো বোলার। তিন-চার বছর ধরে জোরে বোলাররাই ভালো করছে’—বলছিলেন দীপ।
বাংলাদেশের বর্তমান পারফরম্যান্স দেখে ভারতের সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক ও বিশ্লেষক গৌতম ভট্টাচার্য ভারতীয় ক্রিকেটারদের ভালোভাবে তৈরি হওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন, ‘আমি যদি গৌতম গম্ভীর হতাম, অধিনায়ক ও ছেলেদের জড়ো করে খরগোশ আর কচ্ছপের গল্পটা বলতাম। বলতাম যে আমার মনে হচ্ছে, খুব আত্মতুষ্টিতে ভুগছ! দুজন ক্রিকেটার ইতিমধ্যে বলেছেন, দলিপ ট্রফি খেলবেন না—রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি; বোর্ড সেটা মেনেও নিয়েছে। কিন্তু তারা যেন একটু ভেবে দেখে, সবশেষ কবে লম্বা সংস্করণে খেলেছে। যত দূর মনে পড়ছে, মার্চ মাসে সবশেষ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তারা লম্বা সংস্করণের ম্যাচ খেলেছে, এরপর আর খেলেনি।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে সাফল্য আর বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সামনে রেখে রোহিতদের সতর্কবার্তাই দিলেন গৌতম, ‘তারা যদি মনে করে যে এত লম্বা বিরতিতেও বাংলাদেশের বিপক্ষে নেমেই রান করতে পারবে, তাহলে ভালো কথা। কিন্তু এই বাংলাদেশ নতুন বাংলাদেশ এবং এমন একটা রাজনৈতিক আবহ রয়েছে, তারা আরও বেশি তেড়েফুঁড়ে আসছে। এখন যদি তোমাদের এখনো (টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ) জেতার হানিমুন না শেষ হয়, তাহলে তোমরা কিন্তু পস্তাবে।’
আইসিসির টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ দল সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলবে ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে চেন্নাইয়ে, আর কানপুরে দ্বিতীয় টেস্ট শুরু ২৭ সেপ্টেম্বর। দুটি ভেন্যুর উইকেট-কন্ডিশন নিয়ে দীপের বিশ্লেষণ, ‘চেন্নাইয়ে সাধারণত যেমন উইকেট হয়, সে রকমই থাকবে, আলাদা কিছু করবে না। যে রকমই টার্ন চেন্নাইতে দেখা যায়, সে রকম টার্ন দেখা যাবে। আর বাউন্সও থাকবে চেন্নাইয়ে। কানপুরের যে গ্রিন পার্ক স্টেডিয়াম, ওটার উইকেটে বল একটু নিচে থাকে সাধারণত।’
টেস্টের পর ৬,৯ ও ১২ অক্টোবর ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে দুই দল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।