লাইফস্টাইল ডেস্ক : অদ্ভুত শোনালেও ‘বোবা ধরা’ (Sleep Paralysis)— কথাটা অনেকের মনে ভয় ধরিয়ে দেয়। কম-বেশি এর সঙ্গে পরিচিত মানুষের সংখ্যা নিতান্ত কম নয়। কেউ কেউ এটিকে ভৌতিক কিছু বলেও মনে করে থাকেন।
মনে করুন, মধ্যরাতে হঠাৎই ঘুম ভেঙে গেলো। অনুভব করলেন, আপনার বুকের ওপর ভারী কিছু বসে আছে। এতো ভারী কিছু যে ঠিকঠাক নিঃশ্বাসই নিতে পারছেন না আপনি। কেমন লাগবে তখন? নিশ্চয়ই খুব ভয় পাবেন! এটি ভীতিকর একটা পরিস্থিতি বটে।
আবার যখন টের পেলেন, আপনি চাইলেও শরীরের কোনো অংশ নাড়াতে পারছেন না, এমনকি চিৎকারও করতে পারছেন না। নিজেকে এমন অসহায়ভাবে আবিষ্কার করলে ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক।
অন্যদিকে কেউ কেউ নিজেদের জানাশোনা থেকে জিজ্ঞেস করেন যে, বোবা ধরা বিষয়টি একটি জ্বিন; কেউ নামাজ বা অন্য কোনো ইবাদত ছেড়ে দিলে সে জ্বিন মানুষের বুকের উপর চেপে বসে। নবী (সা.)-এর সুন্নাহতে এমন কিছুর উল্লেখ আছে কি? নাকি এটি কুসংস্কার ও রূপকথা?
‘বোবা ধরা’ কখনো শরীরের কোনো অঙ্গগত বৈষয়িক কারণেও হতে পারে; যেমন কোনো খাবার বা ঔষধের প্রভাবে। আবার কখনো জ্বিনের প্রভাবেও হতে পারে।
প্রথমটি থেকে পরিত্রাণের উপায়
বোবায় ধরা বা স্লিপিং প্যারালাইসিস থেকে বাঁচার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সহজ উপায়টি হলো ঘুমের নির্দিষ্ট সময় মেনে চলা। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই সমস্যা সাময়িক। কিন্তু যদি এটি ঘন ঘন হতে থাকে এবং কোনো শারীরিক বা মানসিক সমস্যার জন্ম দেয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া ঠিক হবে না। এছাড়াও শিঙ্গা লাগিয়ে দূষিত রক্ত বের করা ও খাবার কম খাওয়া ইত্যাদির মাধ্যমেও চিকিৎসরা করা যায়।
দ্বিতীয়টি থেকে যেভাবে বাঁচবেন
আর দ্বিতীয়টির চিকিৎসা কোরআনে কারিম তিলাওয়াত ও জিকির-আজকারের মাধ্যমে। দোয়া দরুদ, চার কুল পাঠ ও আয়াতুল কুরসি পাঠসহ সুন্নাহভিত্তিক অন্যান্য আমলের মাধ্যমে।
ইবনে সিনা তার চিকিৎসাগ্রন্থ আল-ক্বানুনে বলেন, এটি এমন এক রোগ, যার কারণে মানুষ ঘুমে প্রবেশকালে অনুভব করে যে, ভারী কাল্পনিক কিছু তার উপরে পড়ছে। তাকে চাপ দিচ্ছে, তার নিঃশ্বাস বন্ধ করে ফেলছে। যার ফলে তার শব্দ আটকে যাচ্ছে, সে নড়াচড়া করতে পারছে না। যেনো সে নিঃশ্বাস আটকে মারা যাবে। যখন এই অবস্থা কেটে যায় তখন আচমকা জেগে ওঠে। এটি তিনটি রোগের সূচনা: খিঁচুনি, স্ট্রোক করা কিংবা ম্যানিয়া; যদি এটি বিভিন্ন পদার্থের জট পাকানোগত কারণে হয় এবং কোনো অবৈষয়িক কারণে না হয়।’
একই ধরনের কথা আধুনিক ডাক্তারেরাও বলেন। ড. হাস্সান শামছি পাশা বোবা ধরাকে দুইভাগে ভাগ করেছেন। একটি অস্থায়ী ও পুনরাবৃত্তিমূলক; এই প্রকারটি বৈষয়িক কারণে ঘটে। আর দ্বিতীয়টি জ্বিনের প্রভাবে ঘটে।
ড. হাস্সান শামছি তার ‘আন-নাওম ওয়াল আরাক্ব ওয়াল আহলাম’ গ্রন্থে বলেন, প্রথম প্রকার : অস্থায়ী বোবা ধরা, দুই কারণে ঘটে থাকে :
ক. ঘুমে প্রবেশকালে শ্বাসনালীতে কিছু বাষ্প জমে সেটা মস্তিস্কের দিকে উঠতে থাকা কিংবা মস্তিস্ক থেকে বাষ্প এক ধাপে নীচে নামা। তখন আক্রান্ত ব্যক্তির নড়াচড়া ও কথা বলায় ভারী অনুভুত হয় কিংবা ভয় অনুভুত হয়। এটি স্নায়ুবিক খিঁচুনির সূচনা। আবার কখনো মানসিক প্রেসারের কারণেও ঘটতে পারে।
খ. কিছু কিছু ওষুধ সেবনের কারণেও বোবা ধরা ঘটতে পারে। সেগুলো হচ্ছে:
(i) Arazrabine (ii) Beta blockers (iii) Lifod B (iv) Antidepressants (v) valium এর মতো অস্থিরতা দূরকারী ঔষধ খাওয়া হঠাৎ বন্ধ করার পর।
দ্বিতীয় প্রকার: পুনরাবৃত্তিমূলক বোবা ধরা (জ্বিনে ধরা বোবা): এ ধরনের বোবা ধরা প্রমাণ করে যে, মানুষের ওপর দুষ্ট আত্মা আছর করেছে এবং মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে।
শেষ কথা হলো- বোবা ধরা এটি কুসংস্কার বা রূপকথা নয়। বরং এটি বাস্তব সত্য। এটি স্বাস্থ্যগত বৈষয়িক কারণে ঘটতে পারে। আবার জ্বিনের প্রভাবেও হতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।