জুমবাংলা ডেস্ক : পাবনার সাঁথিয়ায় কানিজ ফাতেমা (২০) নামে এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর মরদেহ ডোবায় ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার স্বামীর বিরুদ্ধে। নিখোঁজের দুইদিন পর শনিবার (১৫ মে) উপজেলার পাড় করমজা এলাকার ইছামতি নদীর ডোবা থেকে ওই গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, ঈদের আগের রাতে ১৩ মে স্ত্রীকে হত্যা করে নদীতে ক্যানেলে কচুরিপানার মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিলেন রাকিবুল। শনিবার (১৫ মে) সকাল দশটার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ফাতেমা খাতুন বেড়া পৌর সদরের শম্ভুপুর মহল্লার আব্দুল কাদেরের মেয়ে। আটক রাকিবুল ইসলাম সাঁথিয়া পৌর সদরের ফেছুয়ান মহল্লার চাঁদু শেখের ছেলে।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম পরিবারের বরাত দিয়ে বলেন, ৭/৮ মাস আগে রাকিবুলের সাথে বিয়ে হয় ফাতেমা খাতুনের। বিয়ের পর থেকে তাদের মনোমালিন্য ও পারিবারিক কলহ চলছিল। গত ২৮ এপ্রিল স্ত্রী ফাতেমাকে তার বাবার বাড়িতে রেখে যায় রাকিবুল। ঈদের আগে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যেই স্ত্রীকে হত্যার ছক কষতে থাকেন রাকিবুল। ঈদের আগের দিন ১৩ এপ্রিল সন্ধ্যার পর বেড়ানোর কথা বলে মোবাইল ফোনে স্ত্রী ফাতেমাকে বাড়ির বাইরে বের হতে বলেন রাকিবুল। তবে তার বাইরে বের হওয়ার কথা তার পরিবারের কাউকে বলতেও নিষেধ করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও জানান, পরে স্বামীর ডাকে সাড়া দিয়ে ফাতেমা বাইরে বের হলে তাকে মোটরসাইকেলে নিয়ে সাঁথিয়া উপজেলার করমজা ব্রিজের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে নিরিবিলি জায়গা পেয়ে মোটরসাইকেল থামিয়ে প্রসাব করার কথা বলে স্ত্রীকে দাঁড় করিয়ে রেখে একটু দূরে সরে যায়। কিছুক্ষণ পর পেছন থেকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে স্ত্রী ফাতেমাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন রাকিবুল। পরে রাস্তার পাশে ইছামতি নদীর ক্যানেলে কচুরিপানার মধ্যে ফাতেমার মরদেহ লুকিয়ে রেখে বাড়ি চলেন তিনি। যাওয়ার আগে স্ত্রী ফাতেমার মোবাইল ফোন থেকে ‘আমাকে মাফ করো, অন্য একটি ছেলের সাথে আমার সম্পর্ক আছে, তাই চলে গেলাম’ এই কথা লিখে নিজের ফোনে ও ফাতেমার ভাইয়ের ফোনে মেসেজ পাঠান রাকিবুল।
মেয়ের খোঁজ না পেয়ে বাবা কাদের বেড়া থানায় একটি ডায়েরি করেন। এরপর তদন্তে নামে পুলিশ। প্রথমে স্বামী রাকিবুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান। তিনি পুলিশকে তার স্ত্রীর মেসেজের কথাও জানান। এরপরই সন্দেহ হয় পুলিশের।
শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) রাতে রাকিবুলকে আটক করে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করার এক পর্যায়ে স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন তিনি। পরে তার দেওয়া স্বীকারোক্তি ও তথ্য অনুযায়ী শনিবার (১৫ মে) সকালে নদীর ক্যানেল থেকে ফাতেমার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
কানিজ ফাতেমার ভাই ফরিদ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, বিয়ের সময় সাড়ে ৫ লাখ টাকা যৌতুক নেয় রফিকুলের পরিবার। বিয়ের পর বিভিন্ন সময় টাকার জন্য তার বোনকে নির্যাতন করা হয়েছে। এছাড়া তার অন্য মেয়ের সাথে পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। এই কারণে বোনকে হত্যা করা হয়েছে।
হত্যার কারণে সম্পর্কে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, আটক রাকিবুলকে জিজ্ঞাসাবাদে যেটুকু মনে হয়েছে, বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না। এ নিয়ে মনোমালিন্য ও সাংসারিক অস্থিরতা ছিল। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে চেয়েছিলেন রাকিবুল।
মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো এবং এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান সাঁথিয়া থানার ওসি আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।